নিজস্ব প্রতিনিধি: তিনি শুধু মুখ্যমন্ত্রী নন, নিজের দলের সর্বময় কর্ত্রীও। একসঙ্গে রাজ্যের পুলিশমন্ত্রীও। অথচ তাঁর দলের নেতার বিরুদ্ধেই উঠেছিল ৮জন মানুষকে জীবন্ত অবস্থায় আগুনে জ্বালিয়ে দেওয়ার অভিযোগ। একই সঙ্গে উঠেছিল পুলিশের(Police) বিরুদ্ধে গোড়া ঘটনায় নিষ্ক্রিয় থাকারও অভিযোগ। এই সব অভিযোগের মধ্যে রাজ্য রাজনীতিতে তো বটেই, জাতীয় স্তরের রাজনীতিতেও শোরগোল পড়ে গিয়েছে। বিরোধী সবকটি রাজনৈতিক দলই উঠে পড়ে লেগেছে রাজ্য সরকার ও রাজ্যের শাসকদলের বিরুদ্ধে। কিন্তু তার মধ্যেও ঠান্ডা মাথায় গোতা ঘটনাকে চূড়ান্ত প্রতিকূলতা থেকে নিজের অনুকূলে টেনে আনলেন তিনি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। দীর্ঘ ৩ দশকের বিরোধী দলনেত্রীর ভূমিকায় যেভাবে তিনি বার বার আমজনতার মাঝে মিশে গিয়ে তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, ঠিক সেভাবেই এদিন জনতার মাঝে গিয়ে তাঁদের দুঃখের কথা শুনে, কষ্টের কথা শুনে, ক্ষতিপূরণের ঘোষণা করে গোটা গ্রামের মানুষের আস্থা আবারও অর্জন করে নিলেন তিনি।
বকটুইয়ের ঘটনায় রাজ্য সরকার, শাসক তৃণমূল, পুলিশ ও মুখ্যমন্ত্রীকে চেপে ধরে গোটা ঘটনার রাশ নিজের হাতে নিতে চেয়েছিল বাম-বিজেপি ও কংগ্রেস। তাঁরা চেয়েছিল, বকটুই(Boktui) গ্রামের মানুষ যেন মুখ্যমন্ত্রী বা রাজ্য সরকারের ওপর আস্থা না রাখে। তাঁরা যেন বিরোধী দলগুলির ওপর আস্থা রাখে। এমনকি সেই আস্থা প্রদর্শনের হেতু লালপার্টির নেতারা যেমন বুধবার সাত সকাল থেকেই গ্রামে হাজির হন, তেমনি পেট পুরে ল্যাংচা খেয়ে সেখানে হাজির হন বিজেপির বিধায়কেরা। এদিন গিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতিও। কিন্তু সকলেই ব্যর্থ হয়েছেন গ্রামবাসীদের আস্থা অর্জনে। গ্রাম ছেড়ে চলে গিয়েও গ্রামে ফিরে এসেছে ভাদু শেখের পরিবার থেকে মৃত ৮জনের পরিবারও। আর সেই ফিরে আসা শুধু একজনের ওপর আস্থা রেখেই। তিনি বাংলার মা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলার অগ্নিকন্যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বকটুই গ্রামে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী যখন পুলিশকে জানিয়ে দিলেন মূল অভিযুক্ত আনারুল হোসেনকে গ্রেফতার করতেই হবে, তখনই গ্রামবাসী থেকে স্বজনহারারা বুঝেছেন তাঁরা সুবিচার পাবেন। দোষীরা শাস্তি পাবে। সেই কারণেই তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীকে কাছে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। বাকিদের কাছে নয়। কারণ তাঁরাও বুঝেছেন বিরোধীদের আনাগোনা ঘোলা জলে মাছ ধরার জন্যই। এখানেই মমতার গ্রহণযোগ্যতা, বিশ্বাসযোগ্যতা। যা আর কেউ পারেন না, তা মমতা অনায়েসেই পারেন। তা সে যত প্রতিকূল অবস্থাই হোক না কেন, মায়ের আঁচলের শীতল হাওয়ায় তা নিজের অনুকূলে টেনে আনতে আজও তিনি একমেবদ্বিতীয়ম।