নিজস্ব প্রতিনিধি: পুরুলিয়ার(Purulia) পরে বাঁকুড়া(Bankura)। জঙ্গলমহল(Jungalamahal) সফরে বেড়িয়ে এদিন অর্থাৎ বুধবারও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee) বিজেপির বিরুদ্ধে তাঁর আক্রমণ বজায় রাখলেন। উনিশের লোকসভা ভোটে এই বাঁকুড়া জেলারই ২টি লোকসভা কেন্দ্র দখল করেছিল বিজেপি। এবার ২৪’র ভোটে সেই দুই আসন বিজেপির থেকে ছিনিয়ে নিতে মাঠে ঝাঁপাচ্ছে মল্লভূমের জোড়াফুল শিবির। সেই মল্লভূমের মাটিতে দাঁড়িয়েও এদিন মমতা ছত্রে ছত্রে নিশানা বানিয়েছেন বিজেপিকে। এদিন খাতড়ার সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী বিজেপিকে আক্রমণ করে বলেন, ‘ওরা গরীব লোক, বাউরি, তফসিলি, দলিত, ক্রিশ্চিয়ান, হিন্দুদের বঞ্চিত করেছে। গরীব মানুষের মাথার ছাদটাও ওরা কেড়ে নিয়েছে। নির্বাচনের আগে কিছু মানুষ আসে। মানুষকে ভুল বোঝায়। এঁদের চক্রান্তে পা দেবেন না। বাঁকুড়ার দুটি লোকসভা আসনে গতবার বিজেপি(BJP) জিতেছিল, তারপর আর খোঁজ নেয়নি। এবারও আসবে ভুল বোঝাতে, কিন্তু ওদের মিথ্যে কথা বিশ্বাস করবেন না।’
এর পাশাপাশি মমতা এদিন তুলনা টেনেছেন লক্ষ্মীর ভান্ডার নিয়েও। বলেছেন, ‘বিজেপির কয়েকটা রাজ্যে আমাদের মতো লক্ষ্মীর ভান্ডার করেছে, কিন্তু তা দেওয়া হচ্ছে পরিবারের যে কোনো একজনকে। আর আমরা পরিবারের সকল মহিলাকে দিচ্ছি। ওরা শুধু এক মহিলার হাতে টাকা দেয়, তাও ভোটের পর থাকবে না। আমরা পরিবারের সব মহিলাকে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার দিই। বাঁকুড়া জেলা মনে রাখবেন আগে এসব এলাকায় রক্তপাত হত। আমরা সরকার আসার পর থেকে এখানে শান্তি এসেছে। মানুষ স্কুলে যাচ্চ্ছে, ভালো আছে। শান্তিতে আছে। আমরা ডানকুনি থেকে রঘুনাথপুর পর্যন্ত ফ্রেট করিডোর তৈরি হবে। রাস্তার দুই ধারে ধরে শিল্প হবে। ৫৯ লক্ষ মানুষকে ১০০ দিনের কাজ করিয়ে টাকা দেয়নি কেন্দ্র। সেই টাকা আমরা দিচ্ছি। ৭ লক্ষ ৪১ বাড়িতে জলস্বপ্ন প্রকল্পে ইতিমধ্যেই জল পৌঁছেছে। ৩ কোটি পড়ুয়া স্কলারশিপ পেয়েছে। আশা-আইসিডিএস কর্মীদের মৃত্যু হলে পরিজনদের ২ লক্ষ টাকা করে টাকা দেবে রাজ্য। আদিবাসীদের সারি ও সারনাদের স্বীকৃতি না দিলে আগামী দিনে বৃহত্তর আন্দোলন করব। আমার ভাণ্ডারে অনেক কিছু আছে, খুলব নাকি ভান্ডার, সিঙ্গুর সিঙ্গুরই, নন্দীগ্রাম নন্দীগ্রামই। অজান্তে যদি কোনও কাজ হয়ে থাকে সেটাকেও সমর্থন করি না।’
এর পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, ‘এ বার আবার ভোটের আগে আসবে গ্যাসবেলুন ফোলাবে। ওই গ্যাসবেলুনে ফুটো করে দিতে হবে। পাগড়ি দেখলেই খলিস্তানি আর মুসলমান দেখলেই পাকিস্তানি? আর তোমরা কী? বিজেপি শাসিত রাজ্যে আদিবাসীদের ওপর অত্যাচার হয়। আমরা আদিবাসীদের ওপর অত্যাচার হতে দেব না। আমরা আদিবাসীদের জন্য বিশেষ আইন করেছি। আমরা আদিবাসীদের জমি দখল করতে দেব না। সারি আর সারনা ধর্মকে স্বীকৃতি না দিলে আমরা বড় আন্দোলন করব। কেন্দ্রকে চিঠি লিখেছি। কুড়মি সম্প্রদায় কোথায় থাকে তার একটা সমীক্ষা করছি। আদিবাসী শংসাপত্র নিয়েও সমস্যা দূর হবে দুয়ারে সরকারে অভিযোগ করলে। চাই তো অনেক কিছুই কিন্তু কেন্দ্র দেয় না। কেন্দ্রীয় বঞ্চনার বিরুদ্ধে বাংলায় উঠুক গর্জন। ওরা বলছে ইউনিভার্সাল সিভিল কোড করতে হবে। মাংস খাওয়া যাবে না। মাছ খাওয়া যাবে না। কী পোশাক পরবে মেয়েরা, সব ওরা ঠিক করে দেবে। সিঙ্গুর হল সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম হল নন্দীগ্রাম, এক এক জায়গার এক একটা জায়গার আলাদা আলাদা চেহারা মনে রাখবেন, একটার সঙ্গে আর একটার তুলনা করে দাঙ্গা বাঁধিয়ে দিয়ে ভুল করবেন না। কোথাও রক্ত ঝরুক আমি চাই না। যারা যারা বড় কথা বলে বেড়াচ্ছে, খুলব ভান্ডার? ভান্ডারে কিন্তু অনেক কিছু জমা আছে। ভান্ডার যখন খুলব তখন বুঝতে পারবেন কোনটা ভুল কোনটা ঠিক। আমি জ্ঞানত কোনও ভুলকে প্রশ্রয় দিই না। যখন জানতে পারি সবরকম সাহায্য করি।’