নিজস্ব প্রতিনিধি: মার্চ মাসের প্রথম দিন থেকেই লোকসভা নির্বাচনের(General Election 2024) প্রচার শুরু করে দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি(Narendra Modi)। এদিন তিনি সভা করবেন হুগলি জেলার আরামবাগে। এদিন দিল্লি থেকে বিশেষ বিমানে দুর্গাপুর বিমানবন্দরে নামবেন মোদি। সেখান থেকে হেলিকপ্টারে করে পৌঁছবেন ঝাড়খণ্ডে। সিন্দরিতে জোড়া কর্মসূচি সেরে হেলিকপ্টারেই ধানবাদ ফিরবেন মোদি। সেখান থেকে বায়ুসেনার কপ্টারে দুপুর ৩টে নাগাদ তিনি নামবেন আরামবাগে। সেখানে প্রথমে সরকারি অনুষ্ঠান যোগ দিয়ে বাংলার জন্য প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের শিলান্যাস করবেন প্রধানমন্ত্রী। তারপর দলীয় কর্মসূচি সেরে আরামবাগ থেকে হেলিকপ্টারে রেসকোর্সে নামবেন। সেখান থেকে সড়ক পথে রাজভবন পৌঁছবেন। রাতে সমাজের বেশকিছু গণ্যমান্য ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করার কথা রয়েছে তাঁর। রাত্রে তাঁর রাত্রিবাস কলকাতার রাজভবনেই। পরদিন সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ রাজভবন থেকে গাড়িতে রেসকোর্স পৌঁছবেন প্রধানমন্ত্রী। সেখান থেকে হেলিকপ্টারে করে সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ কৃষ্ণনগর পৌঁছে সভা করবেন তিনি। সেই সভা সেরে কৃষ্ণনগর থেকে হেলিকপ্টারে করে পানাগড় বিমানবন্দরে পৌঁছবেন মোদি। দুপুর ১টা নাগাদ সেখান থেকে বিহারে উদ্দেশে যাত্রা করবেন তিনি। আর তাঁর এই সফরের সময়েই সামনে এসেছে, ‘সমগ্র শিক্ষা অভিযানে’(Samagra Shiksha Abhiyan) বাংলার জন্য বরাদ্দ ১ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা আটকে দিতে চলেছে তাঁর সরকার।
বাংলার(Bengal) প্রতি মোদি সরকারের বঞ্চনা আর রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগ নতুন কিছু নয়। ১০০ দিনের কাজের টাকা, আবাস যোজনার টাকা, জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের টাকা, প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার আটকে রেখেছে কেন্দ্র সরকার। এবার পালা শিক্ষাক্ষেত্রের টাকা আটকানো। ‘সমগ্র শিক্ষা অভিযানে’ বাংলার জন্য বরাদ্দ ১ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা আটকানো হবে বলেই কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে। মজার কথা এই খাতের টাকা শুধু বাংলার জন্যই আটকানো হচ্ছে তাই নয়, লোকসভা নির্বাচনের জন্য এই টাকা আটকানো হচ্ছে বাংলার পাশাপাশি বিরোধী শাসিত দিল্লি, পাঞ্জাব, তামিলনাড়ু, কেরলের মতো রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত রাজ্যের ক্ষেত্রেও। টাকা আটকানোর কারণ হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর নামে প্রকল্প ‘পিএম-শ্রী’ বা PM Schools for Rising India নিয়ে অনাগ্রহ। দেশের বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলি কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত কার্যকর করেনি। তারই সাজা হিসেবে কোপ বসানো হচ্ছে প্রাপ্য অর্থে।
২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে সমগ্র শিক্ষা অভিযানে বাংলার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল ১ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৪৭২ কোটি দেওয়া হয়েছে। বাকি ১ হাজার ২৭৩ কোটি আপাতত আটকে রাখা হচ্ছে। পিএম-শ্রী প্রকল্প রূপায়ণে রাজি হলে তবেই মিলবে সেই টাকা। পিএম-শ্রী প্রকল্পে গোটা দেশে সাড়ে ১৪ হাজার স্কুলকে ‘Model’ হিসেবে গড়ে তুলতে চান মোদি। জাতীয় শিক্ষা নীতি ২০২০-র প্রস্তাব অনুযায়ী কেন্দ্র এই টার্গেট স্থির করেছে। প্রকল্পটি সংক্রান্ত মন্ত্রকের ‘Note’ থেকে জানা যাচ্ছে যে, এখনও পর্যন্ত ২৮টি রাজ্যের ৬ হাজার ৪৪৮টি স্কুলকে বেছে নিয়েছে মোদি সরকার। এর মধ্যে রয়েছে ৮৬৩টি প্রাইমারি এবং ৪ হাজার ৫২টি সেকেন্ডারি স্কুল। সেগুলি উন্নতিসাধনে চলতি অর্থবর্ষে ৪ হাজার কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দও হয়েছে। কিন্তু এই প্রকল্পে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) সরকার আগ্রহী নয়। তাই অন্য খাতের টাকা আটকে চাপ তৈরির চেষ্টা হচ্ছে বলেই অভিযোগ। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, এভাবে একের পর এক প্রকল্পের টাকা আটকে রেখে এবং আমজনতার পেটে সরাসরি লাথি মারার ষড়যন্ত্র নিয়ে কী বাংলার আমজনতার ভোট পাবেন মোদি? প্রশ্ন ঘুরছে বিজেপিরই অন্দরে।