নিজস্ব প্রতিনিধি: প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ আবাস যোজনায়(PMGAY) এ রাজ্যের মোট ৩৩ লক্ষ উপভোক্তার নাম উঠে আছে। এর মধ্যে ১১ লক্ষ পরিবারের জন্য বাড়ি নির্মাণের টাকা পাঠানোর প্রশাসনিক অনুমোদন প্রায় দেড় বছর আগেই দিয়ে দিয়েছে কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন নরেন্দ্র মোদির(Narendra Modi) সরকার। কিন্তু দেড় বছর সময় হতে চললেও সেই খাতে বাংলাতে ১ পয়সাও পাঠায়নি কেন্দ্র। কেন্দ্রের দাবি বাংলায়(Bengal) আবাস নিয়ে দুর্নীতি হয়েছে। মজার কথা বাংলায় টাকা পাঠানো বন্ধ রাখলেও কেন্দ্র কিন্তু আবাস যোজনা নিয়ে প্রচার চালাতে বন্ধ রাখছে না। বরং লোকসভা নির্বাচনের(General Election 2024) মুখে দেশজুড়ে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা নিয়ে তাঁরা প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। সেই প্রচার যে মিথ্যা ও ভুলে ভরা তা এবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল বাংলারই এক ঘটনা। রাজ্যের পশ্চিম মেদিনীপুর(Paschim Midnapur) জেলার উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক(Deputy Chief Health Officer) সিদ্ধার্থ দত্ত(Siddharth Dutta) চিঠি পেয়েছেন যে তিনি নাকি প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় বাড়ি পেয়েছেন।
ঠিক কী হয়েছে? জানা গিয়েছে সিদ্ধার্থবাবুর বাড়ি উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার ব্যারাকপুর মহকুমার পানিহাটি পুরসভাতে। কর্মসূত্রে তিনি মেদিনীপুর শহরের শেখপুরায় সরকারি আবাসনে থাকেন। সেখানেই তিনি খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সই করা চিঠি পেয়েছেন যে, তিনি নাকি প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় বাড়ি পেয়েছেন! তাঁর কাছে আসা সেই চিঠিতে লেখা আছে, ‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার মাধ্যমে বাড়ি নির্মাণের জন্য আমি আপনার পুরো পরিবারকে অভিনন্দন জানাই। এই বাড়িটি আপনার প্রবল ইচ্ছাশক্তি এবং কঠোর পরিশ্রমের ফসল।’ অথচ তিনি না এই ধরনের বাড়ি পাওয়ার জন্য কোনও আবেদন জানিয়েছেন কোথাও না কোনও বাড়ি পেয়েছেন। সরকারি নিয়মানুসারে তিনি এই প্রকল্পের সুবিধা কোনওদিনই নিতে পারবেন না। কেননা তিনি মোটা মাইনের সরকারি আধিকারিক। আর এখানেই উঠছে প্রশ্ন, যেখানে তিনি প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার অধীনে বাড়ি পাওয়ার আবেদনই জানাতে পারবেন না, জানানওনি, সেখানে তিনি বাড়ি পেয়ে গিয়েছেন, এই মর্মে চিঠি এল কীভাবে? তৃণমূলের অভিযোগ, লোকসভা নির্বাচনের মুখে কেন্দ্র সরকারের নানা প্রকল্পের ভুয়ো সুবিধা প্রাপ্তির ঘটনা তুলে ধরে প্রচার চালাচ্ছে বিজেপি ও কেন্দ্র সরকার। সেই সূত্রেই সিদ্ধার্থবাবুর নামেও ভুয়ো বাড়ি পাওয়ার গল্প তুলে ধরে প্রচার চালানো হচ্ছে।
সিদ্ধার্থবাবু কী বলছেন? তাঁর বক্তব্য, ‘কেন এমন চিঠি আমার কাছে এল, বুঝতে পারছি না। ভুল করে এসেছে কিনা, সেটাও বুঝছি না। প্রধানমন্ত্রী আবাসের বাড়ি পাওয়ার প্রশ্নই নেই। আমি এমন কোনও আবেদন জানাইওনি। আমি বিষয়টা আমার সিনিয়র জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গীকে জানিয়েছি। সৌম্যশঙ্করও জানিয়েছেন, ‘ওর কাছে প্রধানমন্ত্রীর সই করা চিঠি এসেছে। চিঠিটা উনি আমাকে দেখিয়েছেন।’ স্বাস্থ্যকর্তার কাছে ওই চিঠি পৌঁছনোর কথা জেনে নড়ে বসেছে মেদিনীপুর পুরসভা কর্তৃপক্ষও। পুর-কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, উপভোক্তা তালিকায় সিদ্ধার্থ দত্ত নামের কেউ নেই। তা হলে সিদ্ধার্থের কাছে চিঠি এল কেন? মেদিনীপুরের পুরসভার পুরপ্রধান তথা তৃণমূল কাউন্সিলর সৌমেন খানের কটাক্ষ, ‘এ নিয়ে বিজেপিই ভাল বলতে পারবে! সামনে ভোট। প্রচারের জন্য ওরা যে উপভোক্তা নয়, তাঁকেও চিঠি পাঠাচ্ছে।’