নিজস্ব প্রতিনিধি: আবারও দেখা গেল রবিনস্ট্রিট কাণ্ডের ছায়া। দক্ষিণ দিনাজপুরের কুমারগঞ্জের ঘটনা। ২ দিন ধরে মৃত দিদিমার দেহ আঁকড়ে রইলেন নাতনী। ঘটনায় এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে চাঞ্চল্য।
কুমারগঞ্জ থানা অঞ্চলে মানসিক ভারসাম্যহীন নাতনীকে নিয়ে থাকতেন বৃদ্ধা। বৃদ্ধার নাম স্মৃতি রানী ঝাঁ (সন্ধ্যা)। জানা গিয়েছে, আর্থিক অনটনে ছিলেন তাঁরা। স্মৃতি ঝাঁর স্বামী রুহিণী ঝাঁর মৃত্যু হয়েছে দীর্ঘদিন আগেই। এক মেয়ে ও তাঁর স্বামীরও মৃত্যু হয়েছে দীর্ঘদিন। এক ছেলে থাকলেও তাঁর কোনও খোঁজ নেই। এদিকে স্মৃতিদেবীর নাতনি মানসিকভাবে অসুস্থ। তাঁকে নিয়েই কোনও রকমে দিন গুজরান করতেন বৃদ্ধা। পাড়া-প্রতিবেশী এবং কিছু সহৃদয় ব্যক্তি স্মৃতিদেবীকে সাহায্য করতেন। কিন্তু বয়সের কারণে বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন তিনি। সঙ্গে থাকতেন নাতনি রানী। জানা গিয়েছে, অভাব-অনটন থাকায় নাতনির চিকিৎসা করাতে পারেননি বৃদ্ধা। নাতনি ছোট থেকেই মানসিক ভারসাম্যহীন। সম্প্রতি শারীরিকভাবে অচল হয়ে পড়েছিলেন বৃদ্ধা। এমন অবস্থায় স্থানীয় ক্লাব এবং দু- একটি সমাজসেবী সংস্থা থেকে কিছু সাহায্য দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাতেও তাঁদের সেই দুর্দশা কাটেনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ওই এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছিল দুর্গন্ধ। পচা গন্ধ আসছিল বৃদ্ধার বাড়ি থেকে। স্থানীয়দের নজরে আসতেই বৃদ্ধার বাড়ির দিকে এগিয়ে যান। দেখা যায়, পড়ে আছে বৃদ্ধার দেহ। আর তার পাশেই বসে আছেন তাঁর নাতনি।
স্থানীয়দের অনুমান, চলতি সপ্তাহের মঙ্গলবার বিকেলের পরে মৃত্যু হয়েছে ওই বৃদ্ধার। নাতনি মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন হওয়ায় কেউ জানতে পারেননি বৃদ্ধার মৃত্যুর খবর। মৃত দিদার সঙ্গেই অভুক্ত অবস্থায় ২ টো দিন একই ঘরে কাটিয়েছেন নাতনি।
বৃদ্ধার মৃতদেহ আগলে নাতনি, এই দৃশ্য দেখতে পেয়েই স্থানীয়রা খবর দেয় পুলিশে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে কুমারগঞ্জ থানার পুলিশ। সবকিছু খতিয়ে দেখার পর পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে গত মঙ্গলবার বিকেলেই মৃত্যু (DEATH) হয়েছে বৃদ্ধার। মারা যাওয়ার পর ২ দিন পেরিয়ে যাওয়ায় শরীরে পচন ধরেছিল। এরফলেই দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছিল এলাকায়। বৃদ্ধার অভুক্ত নাতনিকে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেন প্রতিবেশী, স্থানীয় ক্লাবের সদস্যরা। দেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ (POLICE)। অসহায় নাবালিকার মানসিক চিকিৎসা এবং থাকার জন্য হোমের ব্যবস্থার জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েছেন স্থানীয়রা।