নিজস্ব প্রতিনিধি: শুধুমাত্র রাত পোহানোর অপেক্ষা। তারপরেই ইতিহাসের সাক্ষী হতে চলেছে আলিপুরদুয়ার(Alipurduyar) তথা ডুয়ার্স। কংগ্রেস বা বাম সরকার পাট্টা দিয়ে চা শ্রমিকদের(Tea Garden Workers) হাতে জমির সে অধিকার তুলে দিতে পারেনি, দেশের দুই ডবল ইঞ্জিনের রাজ্য অসম ও ত্রিপুরা যা পারেনি, মায় কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন নরেন্দ্র মোদির সরকারও যা পারেনি,অএবার সেটাই করে দেখাতে চলেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। বাংলার বুকে এই প্রথম রাজ্যের কোনও ক্ষমতাসীন সরকার চা শ্রমিকদের হাতে তাঁদের জমির পাট্টা(Land Patta) তুলে দিতে চলেছে। ডুয়ার্সের চা বলয় আগামিকাল রবিবার সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী থাকবে। আগামিকাল অর্থাৎ রবিবার আলিপুরদুয়ার শহরের প্যারেড গ্রাউন্ডে এক প্রশাসনিক বৈঠকে যোগ দেবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানেই তিনি চা শ্রমিকদের হাতে জমির পাট্টা তুলে দেবেন। তারজন্য জেলা প্রশাসনে সমস্ত প্রস্তুতি সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। প্রায় ৬ হাজার চা শ্রমিকদের হাতে আগামিকাল পাট্টা তুলে দেওয়া হবে।
আলিপুরদুয়ার জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার জেলার ৩টি ব্লকের কয়েকটি চা বাগানের ৬ হাজার চা শ্রমিক জমির পাট্টা পাবেন। প্রশাসনিক বৈঠকের মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী নিজে শ্রমিকদের হাতে জমির পাট্টা তুলে দেবেন। মাদারিহাটের ঢেকলাপাড়া ও বন্ধ লঙ্কাপাড়া চা বাগানের শ্রমিকরা ইতিমধ্যেই জমির পাট্টা পেয়েছেন। এবার মথুরা, বান্দাপানি, হান্টাপাড়া সহ আলিপুরদুয়ার-১, ২ ও মাদারিহাট ব্লকের কয়েকটি চা বাগানের ৬ হাজার চা শ্রমিক জমির পাট্টা পাবেন। তারজন্য এক মাস আগে থেকেই জেলার ভূমি দফতরকে দিয়ে চা বাগানের উদ্বৃত্ত জমির সমীক্ষা করা হয়েছে। পাট্টা প্রদানের ঐতিহাসিক সেই সন্ধিক্ষণের সাক্ষী থাকতে ৩টি ব্লকের চা শ্রমিকদের মধ্যে এখন থেকেই উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে জমির পাট্টা নিতে যেন মুখিয়ে আছেন চা শ্রমিকরা। জেলা প্রশাসন সূত্রে এটাও জানা গিয়েছে, চা শ্রমিকদের জমির পাট্টা বিলি ছাড়াও মুখ্যমন্ত্রী রবিবার প্রশাসনিক বৈঠক থেকে চা বাগানে নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ হওয়া ৩টি প্রাথমিক হেলথ সেন্টার ও ২টি ক্রেশেরও উদ্বোধন করবেন।
আগামী ১১ ডিসেম্বর অর্থাৎ সোমবার জলপাইগুড়ি জেলার বানারহাটেও রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক সভা। ডুয়ার্সের চা বলয়ের অন্যতম কেন্দ্র বানারহাট(Banarhat)। গত পঞ্চায়েত ভোটের আগে, জলপাইগুড়ির ক্রান্তিতে এক দলীয় জনসভায় এসে মুখ্যমন্ত্রী চা শ্রমিকদের পাট্টা বিলির ঘোষণা করেছিলেন। তার পরে, শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক জেলায় এসে শ’দুয়েক পাট্টা পরীক্ষামূলক ভাবে বিলি করেন। প্রশাসন সূত্রের দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর সভা থেকে পাট্টা বিলি শুরু করে এই পর্যায়ে অন্তত ৪ হাজার শ্রমিককে পাট্টা দেওয়া হতে পারে। বানারহাটের এই সভাস্থল রাজনৈতিক ভাবেও গুরুত্বপূর্ণ। গত বিধানসভা ভোটের আগে, নতুন বানারহাট ব্লকের ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্তড়ী। সদ্য হয়ে যাওয়া ধূপগুড়ি বিধানসভা উপনির্বাচনে বিজেপির হাত থেকে আসন কেড়ে নিয়েছে তৃণমূল। ধূপগুড়ি বিধানসভার অন্তর্গত বানারহাটের চা বলয়ে বিজেপির থেকে ভাল ফল করেছে তৃণমূল। বিধানসভা উপনির্বাচনের পরে, ধূপগুড়িকে নতুন মহকুমাও ঘোষণা করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভা। তার পরে জলপাইগুড়ি জেলায় প্রশাসনিক সভা করার জন্য বানারহাটকে বেছে নেওয়া তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা।
তবে বানারহাটের সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী কোন কোন সরকারি প্রকল্পের সুবিধা বিলি করবেন অথবা নতুন কী ঘোষণা হবে তা নিয়ে এখনই মুখ খুলতে চাইছে না জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, অনেক কিছুই সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে শেষ মুহূর্তে মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে সে সবের রদবদলও হতে পারে। সে কারণে এখনই কিছু বলা সম্ভব নয়। মুখ্যমন্ত্রীর সভা থেকে জেলার একাধিক রাস্তার শিলান্যাস এবং উদ্বোধন হওয়ার কথা। তার মধ্যে অনেক রাস্তা শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের। কয়েক কোটি টাকার প্রকল্পের শিলান্যাস উদ্বোধন হবে বলেও জানা গিয়েছে।