নিজস্ব প্রতিনিধি,বালুরঘাট: কথায় বলে ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’। আর এই আপ্তবাক্যকে মান্যতা দিয়ে আমাদের বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনেক নিদর্শন ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। তেমনি এক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য নির্দেশন পাওয়া যায় দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার তপন ব্লকের মনেহলি গ্রামে। এখানে একই সঙ্গে কালীপুজো প্রসাদ আর পীরবাবার সিন্নি চড়ানো হয়। স্থানীয়দের দাবি, একশো বছরেরও বেশি সময় ধরে এভাবেই পুজো হয় মনেহলি গ্রামে। এখানে পাশাপাশি দুটি কালীমন্দির আছে। তার পাশেই রয়েছে মুসলিম সম্প্রদায়ের এক পীরবাবার মাজার। দুটি মন্দিরের একটি শ্যামা মা ও অন্যটি নির্দয়া কালী মায়ের মন্দির।
স্থানীয় বাসিন্দা চঞ্চল দাস জানালেন, প্রতিবছর জাঁকজমকের সঙ্গেই কালীপুজো হয় এই গ্রামে। তবে এই পুজোয় গ্রামের মুসলিম ভাইদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। তাঁরা পীরবাবার মাজারে জড়ো হয় কালীপুজোর রাতে। নির্দয়া কালী মায়ের চক্ষুদানের সময় পাঁঠাবলি হয়। সেই সময় মুসলিমরা পীরবাবার মাজারে সিন্নি চড়ান এবং কোরান পাঠ কারেন। সেই কোরান পাঠ শেষ হতেই শুরু হয় কালীপুজো। দুই কালী মন্দিরেই চলে মূল পুজো। ভোর রাতে শেষ হয় পুজো। এরপর মায়ের মূর্তি বের করে আনা হয় মন্দির থেকে। রাখা হয় সামনের খোলা মাঠে।
পরদিন চলে মেলা। যাতে অংশ নেন দুই সম্প্রদায়ের মানুষজন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, প্রতি বছর প্রায় ৭০-৮০টি ছাগবলি হয় এই মন্দিরে। তবে গত বছর করোনার জেরে এই প্রথায় ছেদ পড়েছিল। মেলাও বন্ধ রাখা হয়েছিল। এই বছর পুজো ও মেলা হলেও তা হবে ছোট পরিসরে। তবে সেই ব্রিটিশ আমল থেকে হয়ে আসা এই পুজো ঘিরে হিন্দু-মুসলিমের যে মেলবন্ধন দেখতে পাওয়া যায় তা সারা দেশের কাছে একটি শিক্ষনীয় বিষয় বটে।