নিজস্ব প্রতিনিধি: রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সৌরভ দাসকে মঙ্গলবার রাজভবনে ঢেকে পাঠিয়েছিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। সৌরভবাবু নির্দিষ্ট সময়ে রাজভবনে গেলে সেখানে রাজ্যপালের সঙ্গে তাঁর প্রায় ১ ঘন্টা ধরে বৈঠক হয়। সূত্রের খবর সেই বৈঠকেই পুরনির্বাচন নিয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের ওপর চাপ বাড়িয়েছেন রাজ্যপাল। তিনি কার্যত এখন পুরনির্বাচন নিয়ে একটু ভিন্ন খেলা শুরু করেছেন। কার্যত বিজেপির সুরে সুর মিলিয়ে রাজ্যপাল জানিয়েছেন, তিনি চাইছেন রাজ্যের সব পুরসভার নির্বাচন একদিনেই হোক। যদিও রাজ্য সরকার এদিনই কলকাতা হাইকোর্টে একটি মামলায় হলফনামা দিয়ে জানিয়েছে আগামী ১৯ ডিসেম্বর তাঁরা কলকাতা ও হাওড়া পুরনিগমের নির্বাচন চান এবং তারপরে দফায় দফায় রাজ্যের বাকি সব পুরসভায় ভোট করাতে চান তাঁরা।
এদিন রাজ্যপাল সৌরভবাবুর সঙ্গে বৈঠকে জানান, রাজ্য নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক সংস্থা। তাঁদের ক্ষমতা জাতীয় নির্বাচন কমিশনের মতোই। তিনি চান রাজ্য নির্বাচন কমিশন স্বাধীন ভাবে নিরপেক্ষভবাবে এই পুরনির্বাচনের ব্যবস্থা করুক। আর আলাদা আলাদা দিনে নয়, রাজ্যের যে সব পুরসভায় নির্বাচন বকেয়া রয়েছে সেই সব পুরসভায় একদিনেই ভোট করানো হোক। এই বৈঠকের পরেই কিন্তু রাজ্য নির্বাচন কমিশন জানিয়ে দেয় এদিন তাঁরা কলকাতা ও হাওড়া পুরনিগমের নির্বাচনী দিনক্ষণ ঘোষণা করছেন না। আগামীকাল কলকাতা হাইকোর্টে পুরনির্বাচন নিয়ে বিজেপির দায়ের করা একটি মামলার শুনানি রয়েছে। সেই মামলাতেই রাজ্য সরকার হলফনামা দিয়ে জানিয়েছে, তাঁরা ১৯ ডিসেম্বর কলকাতা ও হাওড়া পুরনিগমের নির্বাচন করাতে চাইছেন। তার পরে আরও কিছু দফায় রাজ্যের বাকি সব পুরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে কাল এই মামলার আবারও শুনানি আছে। সেই শুনানি শেষে হাইকোর্ট কী রায় দেয় তা দেখেই পুরনির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। তবে রাজ্য সরকার ও রাজ্য নির্বাচন কমিশন যেখানে পুরনির্বাচন নিয়ে ঐক্যমত্যে এসেছে তখন রাজ্যপাল কেন তাতে বাগড়া দিচ্ছেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে নানা মহলে।
অনেকেরই দাবি, রাজ্য নির্বাচন কমিশন স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। তা রাজ্য বা কেন্দ্র কোনও সরকারেরই অধীনে নয়। রাজ্যপাল কেন্দ্র নিযুক্ত রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান। তাই তিনি কোনও ভাবেই রাজ্য নির্বাচন কমিশনের ওপরে কোনও রকমের চাপ বাড়াতে পারেন না। কিন্তু বাংলার রাজ্যপাল এক্ষেত্রে সেই কাজই করেছেন। তিনি এখন বিজেপির সুরে সুর মিলিয়ে চাইছেন একদিনে ভোট করাতে। পুরভোট একদিনে হবে না কয়েক দফায় হবে সেটা সংবিধানেই ঠিক করে দেওয়া আছে। সেখানে স্পষ্ট ভাবে বলা আছে রাজ্যের পুরনির্বাচন নিয়ে রাজ্য সরকার ও রাজ্য নির্বাচন কমিশনই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। সেখানে রাজ্যপালের কোনও ভূমিকার কথা বলা নেই। সেক্ষেত্রে কেন রাজ্যপাল এখন পুরনির্বাচন একদিনে করাতে হবে এই কথা বলে চাল বাড়াচ্ছেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের ওপর। কেনই বা রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করছেন তিনি। তাহলে কী তিনি বিজেপির অঙ্গুলিহেলনে অন্য কোনও খেলায় নেমে পড়লেন! এই প্রশ্ন কিন্তু উঠে গিয়েছে।