নিজস্ব প্রতিনিধি, ঢাকা: কথায় বলে, ‘ভাগ্যবানের বোঝা ভগবান বয়’। জন্ম থেকেই বিরল রোগ ‘স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোফি'(এসএমএ)-তে ভুগছে ২২ মাসের রায়হান। তার বয়সী আর পাঁচটা শিশু যখন স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে চলতে পারে, তখন রায়হানকে বসিয়ে দিতে হয়। দুর্লভ রোগের মতো চিকিৎসার ব্যয়ভার বহনের সাধ্য ছিল না কেননা, চিকিৎসার জন্য যে ওষুধের প্রয়োজন তার দাম ২২ কোটি টাকা। ওই বিপুল টাকা খরচ করার মতো ক্ষমতা ছিল না রায়হারের বাবা-মায়ের। কিন্ত নিজের ভাগ্যের জোরেই লটারিতে জীবনদায়ী সেই ওষুধ জিতে নিল রায়হান। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে ২২ মাসের রায়হানকে এসএমএ জিন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপির মাধ্যমে দেওয়া হল সেই জীবনদায়ী ওষুধ।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক নিউরোলজির চিকিৎসক জুবাইদা পারভিন জানিয়েছেন, নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা রায়হানের বয়স যখন সাত থেকে আট মাস তখন হাসপাতালে আসে। প্রাথমিক পরীক্ষার পরে সন্দেহ করা হয় ‘এসএমএ’ হতে পারে। বাংলাদেশে বিরল রোগটি কনফার্ম করার জন্য জেনিটিক মলিকুলার স্টাডির সুযোগ নেই। তাই ভারত থেকে ওই পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। ওই পরীক্ষাতেই দেখা যায়, স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোফিতে আক্রান্ত। ওই বিরল রোগের কারণে সাধারণত শিশুর ঘাড় শক্ত হয় না, বসতে পারে না। তবে কথা বলতে পারে। ঘন ঘন শ্বাসকষ্ট হয়। শ্বাসকষ্টের কারণে মাংসপেশি দুর্বল হয়ে যায় এবং এক পর্যায়ে মৃত্যু হয় আক্রান্তের।
‘এসএমএ রোগের চিকিৎসায় ‘ওনাসেমনোজেন অ্যাবেপারভোভেক’ নামক সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য জিন থেরাপি আবিষ্কার করেছে বহুজাতিক ওষুধ সংস্থা নোভার্টিস। দুই বছরের কম বয়সী শিশুদের চিকিৎসায় ওই জিন থেরাপি ব্যবহার করা হয়। ওষুধের দাম বাংলাদেশি টাকায় ২২ কোটি টাকা। বহুমূল্যের ওই ওষুধ প্রতি মাসে লটারির মাধ্যমে বিশ্বের দুজন শিশুকে বিনামূল্যে দেয় প্রস্তুতকারী সংস্থা। রায়হানের জন্য যাতে ওই ওষুধ বিনামূল্যে পাওয়া যায় তার চলতি বছরের এপ্রিলে লটারিতে নাম লেখানো হয়। গত ১৪ সেপ্টেম্বরের লটারিতে ওই ওষুধ জিতে নেয় রায়হান। গত রবিবার ওই ওষুধটি দেশে নিয়ে আসা হয়েছে। আর দুই মাস পেরিয়ে গেলে ওই ওষুধ রায়হানের কাজে লাগত না। ফলে বলা যায়, ঈশ্বরই রায়হানের পাশে দাঁড়িয়েছেন।