নিজস্ব প্রতিনিধি: বাংলায় কালীপুজোর চল খুবই প্রাচীন। বাংলার বহু জায়গা আছে যেখানে কালীপুজোয় ধর্মের বেড়াজাল ছিঁড়ে যায় এক মুহুর্তে। তৈরি হয় সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির অনন্য নজির। এরকমই এক নজির পাওয়া যায় পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাসপুর থানার নাড়াজোল গ্রামে। এখানকার বাসিন্দা ইসমাইল চিত্রকর প্রায় ৪০ বছর ধরেই মূর্তি গড়ার কাজ করেন। তাঁর হাতে তৈরি অসংখ্য কালী মূর্তি দাসপুরে বিভিন্ন মণ্ডপ বা বাড়িতে পুজো পায়। মূলত পটশিল্পের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও বরাবরই হিন্দু দেব-দেবীর প্রতিমা গড়েন ইসমাইল চিত্রকর। বর্তমানে বয়স ৬১, অভাবের সংসারে তাঁর সঙ্গেই দেবী প্রতিমা গড়ার কাজে হাত লাগান স্ত্রী ও পাঁচ মেয়ে।
অভাবের সংসার, তাই মেয়েদের সেভাবে পড়াশোনা করাতে পারেননি বৃদ্ধ ইসমাইল। ফলে বাবার সঙ্গে তাঁরাও শিখে নিয়েছেন মূর্তি গড়া বা রঙ করা। একটা সময় ছিল পটশিল্পী হিসেবেই নামডাক ছিল ইসমাইল চিত্রকরের। একসময় তিনি পটের তৈরি বিভিন্ন জিনিস নিয়ে কলকাতা-সহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে বিক্রি করতেন। কিন্তু পরে পটের কাজের চাহিদা কমে যাওয়ায় সংসার টানতে হিমশিম খাওয়া। এরপরই তিনি মূর্তি গড়ায় মন দেন বলে জানিয়েছেন ইসমাইল চিত্রকর। তবে তিনি মূলত ডায়াসের বা ছাঁচে গড়া বিভিন্ন দেব-দেবীর প্রতিমা বানিয়ে থাকেন। মাটি কিনে ছাঁচে ফেলে আকৃতি তৈরি করা, এরপর তাতে সিমেন্টের গোলার প্রলেপ লাগিয়ে শুকিয়ে নেওয়া। পরে তাতেই রঙ করে প্রাণ প্রতিষ্ঠা। এভাবেই তাঁর তৈরি বিভিন্ন প্রতিমা চলে যায় দাসপুর ছাড়িয়ে ঘাটাল, পাঁশকুড়া, কেশপুর-সহ দূরদূরান্তে।
বৃদ্ধ ইসমাইলের গোটা পরিবারই এখন তাঁকে এই কাজে সাহায্য় করে। মেয়েরাও নিষ্ঠাভরে প্রতিমা বানায়। দুর্গা, গণেশ, লক্ষ্ণী, সরস্বতী, কালী সব ধরণের প্রতিমাই তৈরি করেন তাঁরা। একজন মুসলিম হয়ে হিন্দু দেব-দেবীর মূর্তি বানাতে অসুবিধা হয় না? এই প্রশ্নের উত্তরে ইসমাইল ছোট্ট উত্তর, শিল্পীর আবার জাত হয় নাকি। সামনেই কালীপুজো। তাই ইসমাইলবাবুর বাড়িতে এখন ব্যস্ততা তুঙ্গে। সকলেই নাওয়া-খাওয়া ভুলে কাজ করছেন। অনেকেই নিজেদের পছন্দ জানিয়ে অর্ডার দিয়ে যান। সেইমতো ছাঁচের প্রতিমা বানিয়ে দেন তিনি। খরিদ্দাররাও ভিড় করেন প্রতিমা কিনতে। এভাবেই চলছে প্রতি বছর। আর সেই সঙ্গে দাসপুরের নাড়াজোল গ্রামে তৈরি হয় সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির এক অনন্য নজির। স্থানীয় বাসিন্দারাও জানাচ্ছেন, তাঁদের এলাকায় সব ধর্মের মানুষ মিলেমিশে বসবাস করেন। এখানে কোনও জাতপাতের বিচার কেউ করে না।