নিজস্ব প্রতিনিধি: এখানেও প্রসঙ্গ আগ্রাসনের। না কি বিশ্বাস? না জনশ্রুতি? পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কর্ণগড়ে রয়েছে দেবী মহামায়া (DEVI MAHAMAYA) মন্দির। অন্যদিকে, বাঁকুড়া জেলার রাইপুরেও রয়েছে দেবী মহামায়ার মন্দির। দুটি মন্দিরের সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে চুয়াড় বিদ্রোহের ইতিহাস।
ব্রিটিশদের অতিরিক্ত করের বিরুদ্ধে চুয়াড় বিদ্রোহে সামিল হয়েছিলেন একাধিক সম্প্রদায়। শুধু ‘চুয়াড়’ নয়। ব্রিটিশরা অবশ্য আন্দোলনকে হেয় করতে নাম দিয়েছিল ‘চুয়াড়’। এখানে তারা চুয়াড় মানে বর্বর, অসভ্য, একগুঁয়ে বোঝাত। এই বিদ্রোহকে একটি সম্প্রদায়ের বলে চিহ্নিত করা ঠিক নয়। ব্রিটিশ বিরোধী গণবিদ্রোহ বলা যেতে পারে।
কর্ণগড় (KARNAGARH) বললেই মনে আসে রানি শিরোমণির কথা। আবার রাইপুর বললেই মনে আসে রাজা দুর্জন সিংয়ের কথা। আগে এই অঞ্চলে ‘গড়’ ছিল বলে নাম ছিল গড় রাইপুর। এখন গড় নেই। আর জায়গার নাম থেকে উধাও গড়। এখন বাঁকুড়ার এই অঞ্চলের নাম শুধুই ‘রাইপুর’ (RAIPUR)।
কর্ণগড়ে পূজিতা হন দেবী মহামায়া। তবে কুড়মি সম্প্রদায়ের একাংশের দাবি, এই অঞ্চলে ছিল তাঁদের সম্প্রদায়ের লোকদেবী ‘মহামাঈ’ থান। তাই আর্য প্রভাবে হয়ে গিয়েছে দেবী ‘মহামায়া’। উল্লেখ্য, এই মন্দির চত্বরেই শিবায়ন রচনা করেছিলেন কবি রামেশ্বর ভট্টাচার্য। আবার রাইপুরের গড়ের ধ্বংসাবশেষের অদূরেই আছে মহামায়া মন্দির। এখানে দেবী ‘কোকোমুখী’। জনশ্রুতি, এখানে স্থাপিত হয়েছিল একটি শিলাখণ্ড। সেই শিলাখণ্ডকে পুজো করা হত দেবী চণ্ডী রূপে। পরে তা বিবর্তিত হয়েছে দেবী মহামায়ায়।
কর্ণগড়ের মন্দিরটি রাজ্য সংরক্ষিত স্মৃতি সৌধের তালিকায় নাম করে নিয়েছে। অন্যদিকে, মহামায়া মন্দির সংস্কার হচ্ছে রাজ্য সরকার ও স্থানীয়দের অনুদানে। আগ্রাসন হোক বা না হোক দেবী জ্ঞানে এখানে আগেও পুজো হত। আজও হয় আরাধনা। ভক্তিই আসল। আর সেই সঙ্গে রয়েছে ইতিহাসের ছোঁয়া। পুজোর সময় ঘুরে আসতেই পারেন এই দুই জায়গায়।
– নিসর্গ নির্যাস মাহাতো