নিজস্ব প্রতিবেদক, ঝাড়গ্রাম: চারিদিকে যখন চায়না আলো বা প্রদীপের আলোয় সেজে ওঠে তখন জঙ্গলমহলের মানুষ শাল পাতায় বাতি জ্বেলে মেতে ওঠেন গো বন্দনায়। গবাদি পশুর মঙ্গল কামনা ও অলসতা দূর করার এই উৎসব বাঁদনা পরব নামে পরিচিত। কালীপুজো বা দীপাবলি এই এলাকার মানুষের মনে স্থান পায়নি, এঁরা প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদের উপাসক।
দুর্গাপুজোর পর থেকেই সাজসাজ রব ওঠে জঙ্গলমহলে। স্থানীয় আদিবাসীদের সর্ববৃহৎ উৎসব সহরই বা বাঁদনা পরবের আয়োজনে ব্যস্ত হয়ে ওঠেন পরিবারের মহিলারা। তখন থেকেই ঘরে মাটি দেওয়ার কাজ শুরু হয়। উৎসবের আগেই সাজিয়ে গুছিয়ে তোলা হয় মাটির তৈরি ছোট ছোট কুটিরগুলো।
কার্তিক মাসের অমাবস্যা রাতে গোয়ালের সবচেয়ে বয়স্ক বলদটির শিংয়ে কড়চা তেল মাখিয়ে তারপর বাকি গরুদের শিংয়ে তেল লাগানো হয়। ওই রাত জাগরণের রাত নামে পরিচিত, স্থানীয় ভাষায় যাকে বলে ‘ঝাঁগোইড়া’। ঢোল ধমসা সহযোগে অহিরা গীত গাইতে গাইতে জাগরণে মেতে ওঠেন আপামর জনতা। পরবের এই রাতে প্রতিটি বাড়িতেই বিভিন্ন ধরণের ‘পিঠে’ হয়। পরদিন ‘গরয়া’, এদিন কৃষি যন্ত্রপাতির আরাধনার দিন।
তারপরের দিন অর্থাৎ ভাইফোঁটার দিন উৎসবের প্রধান আকর্ষণ ‘বাঁদনা’র দিন। এদিন গোরু খুটান হয়। কৃষিকাজের পর অনেক দিন বিশ্রাম নেওয়ার পর এবার গোরুর মূলত বলদের আড় ভাঙতে খুঁটিতে বেঁধে খেলানো হয় তাদের। গান ও বাদ্যযন্ত্র সহযোগে উৎসবে অংশ জঙ্গলমহলের (JANGAL MAHAL) আদিবাসীরা। এদিন জামাইয়ের মঙ্গল কামনায় পালিত হয় ‘জামাই বাঁদনা’। এখানকার সাঁওতাল, কুড়মি সহ বিভিন্ন কৃষিজীবি আদিবাসীরা কালীপুজো, দীপাবলির ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে কৃষি বন্দনার এই ‘বাঁদনা পরব’-এ মেতে থাকেন এই সময়।