মাইথোলজি। কেউ বলে ধর্ম আবার কেউ বলে সাহিত্য। রাখি (RAKHI) মানে তো বন্ধন। রাখি তো ‘রক্ষা’। তা পরানো যায় যে কোনও সম্পর্কেই, সে ভাই- বোন হোক বা বন্ধু কিংবা স্বামী- স্ত্রী। রাখির দিনে জেনে নিন অজানা কথা…
কৃষ্ণ- দ্রৌপদী: প্রেমিক ও রাজনীতিবিদ কৃষ্ণের (দেবতা) হাতে একবার আঘাত লেগেছিল। রক্ত ঝরে পড়ছিল তাঁর হাত থেকে। তীব্র যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন কৃষ্ণ। সেই সময় নিজের আঁচল ছিঁড়ে তাঁর হাতে বেঁধে দিলেন দ্রৌপদী। ‘বন্ধু’র এই কাজে খুশি হয়েছিলেন বংশীধারী। বলেছিলেন, এর প্রতিদান তিনি দেবেন। তার বহু দিন পরে দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ করতে শুরু করলেন কৌরবরা। পাণ্ডবরা পাশা খেলায় হেরে দূরে দাঁড়িয়ে আছে মাথা নিচু করে। তবে দ্রৌপদীর বস্ত্র আর তাঁর দেহ থেকে খুলে সম্পূর্ণ হাতে এল না কৌরবদের। যতই টানে ফুরোয় না বস্ত্র। তা যুগিয়েছিলেন কৃষ্ণ। যা রক্ষার তাই তো রাখি।
সন্তোষী – শুভ ও লাভ: গণেশকে একদিন রাখি পরাচ্ছিলেন তাঁর বোন। তা দেখতে পেয়ে গণেশের দুই পুত্র শুভ ও লাভ জেদ ধরলেন তাঁদেরও বোন চাই। যে রাখি পরিয়ে দেবেন। এরপর গণেশ তাঁর মানস দৃষ্টি থেকে জন্ম দিলেন দেবী সন্তোষীর। জন্মগ্রহণের পরেই দেবী শুভ ও লাভের হাতে পরিয়ে দিয়েছিলেন রাখি।
লক্ষ্মী – বলি: দৈত্যরাজ বলি ছিলেন ত্রিদেবের একদেব বিষ্ণু’র ভক্ত। তাঁর সাধনায় খুশি হয়ে বিষ্ণু বর দেওয়ার সময় বলিকে বলেছিলেন, তাঁর রাজ্য রক্ষা করবেন স্বয়ং বিষ্ণু। বৈকুণ্ঠ ও স্ত্রী লক্ষ্মীকে ছেড়ে তিনি এলেন ভক্তের রাজ্যে। এদিকে বহুদিন যায় কিন্তু স্বামী ফেরেন না দেখে ছদ্মবেশে লক্ষ্মী এলেন বলির রাজ্যে। দেবী দৈত্যরাজের কাছে বলেছিলেন, তাঁর স্বামী নিরুদ্দেশ তাই আশ্রয় প্রার্থনা করছেন। বলিও তাঁকে আশ্রয় দিলেন। তারপর শ্রাবণ পূর্ণিমার দিন দেবী রাখি বেঁধে দিলেন বলি’র হাতে। দৈত্যরাজ কারণ জিজ্ঞেস করতে দেবী খুলে বলেছিলেন সমস্ত কথা। তারপর ‘দিদি’র সঙ্গে ‘জামাইবাবু’কে বৈকুণ্ঠে পাঠিয়েছিলেন দৈত্যরাজ। তার জন্য অবশ্য সব খোয়াতে হয়েছিল বলিকে। কারণ বৈকুণ্ঠে যাওয়ার পর যে আর তাঁর রাজ্য পাহারা দিতেন না বিষ্ণু।
ইন্দ্র- ইন্দ্রানী: দেবতা ও অসুরদের মধ্যে যুদ্ধ চলছে। যুদ্ধে বেরোবেন স্বয়ং দেবরাজ ইন্দ্র। ঠিক বেরানোর আগে স্বামীর হাতে রাখি পরিয়ে দিলেন স্ত্রী ইন্দ্রানী। এই রাখি ছিল দেবতা বিষ্ণুর বরপ্রাপ্ত। যুদ্ধে জয় হয়েছিল দেবতাদেরই। পুরাণ বলে, এই রক্ষার সুতোই দিনে দিনে হয়ে উঠেছে রাখি।
- নিসর্গ নির্যাস মাহাতো