নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: দীর্ঘ অসুস্থতার পরে চির ঘুমে ঢলে পড়লেন তথ্যচিত্র নির্মাতা, লেখিকা এবং সাংবাদিক গীতা মেহতা। শনিবার দিল্লির বাসভবনে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। মৃত্যুকালে ছেলে ও অগণিত অনুরাগীকে রেখে গিয়েছেন তিনি। গীতা মেহতার আরও একটি পরিচয় রয়েছে। তিনি ওড়িশার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজু পট্টনায়কের কন্যা। ওড়িশার বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক ও শিল্পপতি প্রেম পট্টনায়ক তাঁর ছোট ভাই। ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটের আগে মোদি সরকার তাঁকে পদ্মশ্রী পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু শিরদাঁড়া উঁচু রেখে সেই পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছিলেন প্রয়াত গীতা মেহতা। স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন, নির্বাচনের আগে পদ্মশ্রী পুরস্কার নিয়ে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে দেবেন না।
১৯৪৩ সালে দিল্লিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন গীতা মেহতা। দেশে লেখাপড়া শেষ করে উচ্চ শিক্ষার জন্য পাড়ি দিয়েছিলেন লন্ডনে। কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষা শেষে দেশে ফিরে আসেন। সাংবাদিকতা পেশায় যোগ দেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের সময়ে একটি বিদেশি বৈদ্যুতিন চ্যানেলের হয়ে রণাঙ্গনে ঘুরে ঘুরে সংবাদ সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর দুঃসাহসী সাংবাদিকতা বিভিন্ন মহলে প্রশংসিত হয়েছিল। সাংবাদিকতার পাশাপাশি সাহিত্য চর্চাতেও জড়িয়ে পড়েন গীতা মেহতা। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল, ‘কর্ম কোলা’, ‘স্নেক অ্যান্ড ল্যাডারস (সাপ লুডো)’, ‘দ্য ইটারনাল গণেশা’, ‘গ্লিম্পসেস অফ ইন্ডিয়া’, ‘এ রিভার সূত্রা’ ও ‘রাজ’। বেশ কয়েকটি তথ্যচিত্রও নির্মাণ করেছিলেন গীতা। ২০১৯ সালে স্বামী সনি মেহতার মৃত্যুর পরে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন। তার পর থেকে বার্ধক্যজনিত কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েন।
দিল্লিতে থাকলেও মাঝে মধ্যে ভুবনেশ্বরে ছোট ভাই তথা ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়কের কাছে ছুটে যেতেন গীতা মেহতা। ছোট ভাইয়ের সঙ্গে তাঁর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠতা ছিল। শেষ বার যখন ভুবনেশ্বরে গিয়েছিলেন তখনই সাংবাদিকদের কাছে ভাইয়ের প্রশংসা করে বলেছিলেন, ‘ওড়িশাবাসী ভাগ্যবান যে তাঁরা নবীন পট্টনায়কের মতো একজন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন প্রশাসক ও রাজনীতিবিদকে নিজেদের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে পেয়েছে।’