নিজস্ব প্রতিনিধি, মহিষাদল: জৌলুস কমলেও রীতি-রেওয়াজে ভাটা পড়েনি এতটুকু। প্রতিবছরের মতো প্রতিপদেই পুজো শুরু হয়ে গেল মহিষাদল রাজবাজিতে। এদিন ঘট স্থাপন করা হয়। আজ থেকে প্রতিদিনই ঘটপুজো হবে। সপ্তমী থেকে শুরু হবে মূর্তি পুজো। তবে রাজ্যে ঘটে চলা একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে রাজবাড়ির ঠাকুরদালানের ছাদ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমানে এই পরিবারের সদস্য মেদিনীপুরের বিধায়ক জুন মালিয়া। তিনি এবং স্থানীয় বিধায়ক তিলককুমার চক্রবর্তী মিলে ওই ছাদ সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছেন।
মহিষাদলের রানি জানকীর আমলে মহিষাদল রাজবাড়ির দুর্গাপুজো শুরু হয়। পরিবারের সদস্যরা জানান, এবার ২৪৭ বছরে পা দিল এই পুজো। অন্যান্য বনেদিবাড়ির মতো এই বাড়িরও বিশেষ কিছু নিয়ম রয়েছে। যেমন প্রতিমার একপাশে বসানো হয় ঘট, অন্যপাশে ধান রাখা হয়। কথিত আছে, এই দুর্গাপুজো করার পরই শুষ্ক গ্রামে ধান ফলেছিল। তাই ভাল ফসল ফলবে, এই বিশ্বাসে আজও দেবীর পাশে ধান রাখা হয়। পুজোয় লাগে ১০৮টি নীল পদ্ম। পুজোর দিন অনুযায়ী ভোগের পরিমাণ নির্ধারিত হত আগে। ষষ্ঠীতে ছয় মন, সপ্তমীতে সাত মন, অষ্টমীতে আট মন, নবমীতে নয় মন চালের প্রসাদ তৈরি করে বিতরণ করা হত। তবে ধীরে ধীরে রাজবাড়ির দুর্গাপুজোর জৌলুস কমেছে। সেই সমস্ত রাজকীয় ব্যাপারও আর নেই।
মহিষাদল রাজবাড়ির দুর্গাপুজোয় যাত্রাপালা, কামান দেগে সন্ধিপুজো, বিসর্জনের শোভাযাত্রা একসময়ের মূল আকর্ষণ ছিল। রাজত্ব ঘোচার সঙ্গে সঙ্গেই যাত্রাপালা বন্ধ হয়েছে। অষ্টমীর সন্ধ্যায় কামান দেগে রাজবাড়ি-সহ আশপাশের এলাকার পুজোমণ্ডপে সন্ধিপুজো শুরু হত। সরকার কামান দাগায় নিষেধাজ্ঞা জারি করায় এখন তা আর হয় না। এছাড়া দশমীতে বড় নৌকায় করে শোভাযাত্রা বের করা হত এবং রাজবাড়ির সামনে দিয়ে বয়ে যাওয়া হিজলি টাইডাল ক্যানেল হয়ে গেঁওখালিতে রূপনারায়ণের জলে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হত। এখন সে সবই অতীত। বর্তমানে রাজবাড়ি লাগোয়া রাজদিঘিতেই প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। তবু মহিষাদল রাজবাড়ির ঐতিহ্যবাহী দুর্গাপুজো দেখতে আজও ভিড় জমান স্থানীয় বাসিন্দারা। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসেন প্রতিমা দর্শন করতে। তবে গতবছর থেকে তেমন ভিড় হচ্ছে না বলেই জানালেন বাড়ির সদস্যরা।