এই মুহূর্তে




শিকড়া কুলিন গ্রাম: পুজোর নিয়মে পরিবর্তন হলেই ‘সর্বনাশ!’




নিজস্ব প্রতিনিধি, বসিরহাট: ৩২২ বছর ধরে একই কাঠামোর উপর তৈরি হয়ে আসছে প্রতিমা। নিয়মাচারেও কোনও পরিবর্তন হয় না। বসিরহাটের শিকড়া কুলিন গ্রামের স্বামী ব্রহ্মানন্দ মহারাজের পুজো আজও একইরকমভাবে হয়ে চলেছে। ব্রহ্মানন্দ ছিলেন বেলুর রামকৃষ্ণ মঠের প্রথম সভাপতি। তাঁর হাত ধরেই শিকড়া কুলিন গ্রামে দুর্গাপুজোর সূচনা হয়েছিল বলে জানা যায়। তবে কথিত আছে,  ১৭০০ খ্রিস্টাব্দে প্রথম দেবী চণ্ডীর আরাধনায় ব্রতী হয়েছিলেন সদানন্দের পঞ্চম পুরুষ দেবীদাস ঘোষ।

ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, ১৫৮০ খ্রিস্টাব্দে সদানন্দ ঘোষ হুগলি জেলার আরুনা থেকে শিকড়া কুলিন গ্রামে এসে বসতি স্থাপন করেছিলেন। ১৮৬৩ সালে শিকড়া কুলিন গ্রামে ঘোষ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ব্রহ্মানন্দ মহারাজ। জন্মসূত্রে ব্রহ্মানন্দ মহারাজের নাম রাখালচন্দ্র ঘোষ। রামকৃষ্ণদেবের শিষ্য হওয়ার পর নাম পরিবর্তন করেন। স্বামী বিবেকানন্দ যে সকল মহারাজদের নিয়ে বেলুর মঠ গড়ে তুলেছিলেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম ব্রহ্মানন্দ মহারাজ। তাঁকেই প্রথম মঠের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়েছিল। এখনও বেলুড় মঠে গঙ্গার ধারের দু’টি মন্দিরে পাশাপাশি বিবেকানন্দ এবং ব্রহ্মানন্দের মূর্তি রয়েছে। বছরের বাকি ক’টা দিন মঠে কাটালেও দুর্গাপুজোর সময় ছুটে যেতেন বাড়িতে। এখনও দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসেন শিকড়া কুলিন গ্রামের পুজো দেখতে। বেলুড় মঠের প্রথম সভাপতি ব্রহ্মানন্দের নামে শিকড়া কুলিন গ্রামে একটি আশ্রম আছে। যেটি বর্তমানে রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন নামেই পরিচিত।

ঘোষ বাড়ির দেবী বড় জাগ্রত। পরিবারের সদস্যদের থেকেই জানা যায়, শুরুতে দেবীর ঘট বসত মাটির একটি আটচালা ঘরে। সেখানেই দেবীকে প্রতিষ্ঠা করে পুজোর আয়োজন করা হত। তবে পরবর্তীকালে জমিদার কালীপ্রসাদ ঘোষ পাঁচ খিলানযুক্ত পুজোর দালান তৈরি করেন। সেই থেকে ওই দালানেই নিষ্ঠার সঙ্গে পুজোর আয়োজন করা হয়। পরিবারের এক সদস্য পবিত্র ঘোষ বলেন, ‘পুজোর আয়োজনে কোনওরকম পরিবর্তন বা ত্রুটি থাকলে আর রক্ষা থাকবে না। অনেক বছর আগে পূর্বপুরুষদের কথার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ঘোষ পরিবারেরই এক সদস্য প্রতিমা এবং পুজোর নিয়মে ইচ্ছে করেই পরিবর্তন করেন। সে বার নবমীর দিন নাকি তাঁর দুই ছেলের মৃত্যু হয়েছিল। সেই থেকে আর কেউ নিয়মে পরিবর্তনের কথা স্বপ্নেও ভাবেন না।’

পুরনো সেই দিন অবশ্য নেই, তবে আজও পুরনো নিয়মেই পুজো হয় ঘোষ বাড়িতে। বর্তমানে পরিবারে রয়েছে পাঁচ শরিক। এখনও প্রতি বছর পরিবারের এক এক জন পালা করে পুজোর দায়িত্ব নেন। ঘোষ বাড়ির দুর্গা পুজোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য, নবমীতে দেবী দুর্গা, নারায়ণ শিলা এবং করুণাময়ীর এক সঙ্গে আরতি। কেবল পুজোর নিয়মই নয়, ঘোষ পরিবারে বংশ পরম্পরায় প্রতিমা গড়েন ব্রাহ্মণেরা। আজও সেই একই কাঠামোর উপরেই এক চালের ডাকের সাজের প্রতিমা তৈরি করা হয়। পরিবারের পুরোহিত জানান, পশু বলিতে এক বার বাধা পড়ে। সেই থেকে পশু বলি বন্ধ হয়ে যায়। পরিবারের নিয়ম অনুযায়ী,  দেবীর বোধনের দিনে বাড়ির দালানে ‘নিদ্রা কলস’ বসানো হয়। দশমী পর্যন্ত একই জায়গায় রাখা থাকে। পরিবারের বিশ্বাস, পুজোর দিনগুলিতে দালান পাহারা দেয় ওই নিদ্রা কলস। রীতিমতো তিথি-নক্ষত্র মিলিয়ে দশমীর দিনেই প্রতিমার বিসর্জন হয়। এখানেও অন্যথা হয়নি কখনও।




Published by:

Ei Muhurte

Share Link:

More Releted News:

৩০০ বছর ধরে সিংহবাহিনী দেবী রূপে পুজিতা হয়ে আসছেন এই রাজবাড়িতে

দশভুজা রূপে নন, দেবী এখানে পুজিতা হন ‘দুই’ হাতেই

বেলগাছকে দুর্গা রূপে পুজো, আজও বলির নিয়ম চলে আসছে শীল বাড়িতে

মায়ের স্বপ্নাদেশে শুরু পুজো! দেবীর আট হাত ঢেকে রাখা হয় এই বনেদি বাড়ির পুজোয়

ঘটি-বাঙালের মিশ্রণ, এই বনেদি পুজোয় বাড়ির পান্তা খেয়ে বিসর্জনের রীতি আজও রয়েছে

বারাসতের দক্ষিণপাড়ায় ৪৫৪ বছরের শিবের কোঠার দুর্গাপুজো সংকল্পিত হয় যোধাবাঈয়ের নামে

Advertisement




এক ঝলকে
Advertisement




জেলা ভিত্তিক সংবাদ

দার্জিলিং

কালিম্পং

জলপাইগুড়ি

আলিপুরদুয়ার

কোচবিহার

উত্তর দিনাজপুর

দক্ষিণ দিনাজপুর

মালদা

মুর্শিদাবাদ

নদিয়া

পূর্ব বর্ধমান

বীরভূম

পশ্চিম বর্ধমান

বাঁকুড়া

পুরুলিয়া

ঝাড়গ্রাম

পশ্চিম মেদিনীপুর

হুগলি

উত্তর চব্বিশ পরগনা

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা

হাওড়া

পূর্ব মেদিনীপুর