এই মুহূর্তে

WEB Ad Valentine 3

WEB Ad_Valentine

পুজোর ভ্রমণ: ছৌ মুখোশের গ্রাম ‘চড়িদা’

নিজস্ব প্রতিনিধি: বাঙালির ঘুরতে যাওয়া মানেই দিঘা-পুরী -দার্জিলিং। কিন্তু এই বাংলাতেও
অনেক লুকোনো জায়গা আছে যা কিনা ঐতিহ্যমন্ডিত এবং বাঙালি সংস্কৃতির পীঠভূমি। এমন জায়গায় একবার গেলে মনে হবে বারবার ঘুরেফিরে আসি সেখানে। এমনই এক জায়গার কথা জানাবো আপনাদের। পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিমাঞ্চলের জেলা পুরুলিয়া। যাকে আমরা লাল পাহাড়ির দেশ বলি। শাল, সেগুন, পলাশ ও মহুয়ার স্বর্গরাজ্য। আর আছে কৃষ্ণচুড়া-রাধাচুড়া গাছ। ফুলে ফুলে ভরা থাকে শরৎ থেকে বসন্ত। পুরুলিয়ার আরেক আকর্ষণ হল ছৌ নাচ, যা আজ বিশ্ব বন্দিত। এই পুরুলিয়াতেই এমন একটি জায়গা আছে যা কিনা বাঙালির সংস্কৃতির ধারক ও বাহক হিসেবে আজও নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে। প্রত্য়ন্ত একটি গ্রাম, যার নাম চড়িদা। পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডি থেকে ৫ কিমি আর কলকাতা থেকে প্রায় ৩০০ কিমি দূরত্বে অযোধ্যা পাহাড়ের পাদদেশে এক সুন্দর ছোট্ট গ্রাম হল চড়িদা। প্রকৃত অর্থে মুখোশ-পাড়া বলতে যেটা বোঝায় চরিদা গ্রাম হল সেটাই।

অযোধ্যা পাহাড়ের প্রাচীন নাম ছিল অঝোইদা। ‘অঝোই’ শব্দের অর্থ অঝোর, দা শব্দের অর্থ ‘দহ’ বা ‘হ্রদ’। পুরুলিয়ায় প্রচুর প্রাকৃতিক ঝরনা, মাটির নীচে জলের অফুরন্ত উৎস দেখেই অঝোইদা নাম দেওয়া হয়েছিল। পরে কালক্রমে তা অযোধ্য়া নামে রূপান্তরিত হয়। এই চড়িদা গ্রামটির শেষে যে ‘দা’ শব্দটি আছে সেটাও প্রাচীনকালের ‘দহ’ শব্দ থেকেই এসেছে। এই এলাকায় আগে সকলেই কৃষির উপর নির্ভরশীল ছিলেন। কিন্তু বর্তমানে ছৌ-নাচের হাত ধরে এখানে মৃৎশিল্পের বিকাশ ঘটেছে। তবে ছৌ-নাচ বা মুখোশের খ্যাতি গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়লেও এই চড়িদাগ্রামকে ক’জনে চেনেন? আজ এই গ্রামের গল্পই বলবো আপনাদের।

পুরুলিয়া মানেই লাল পলাশ, কৃষ্ণচুরা, রাধাচুরার ব্যকড্রপে ঢেউ খেলানো রাস্তা। পুরুলিয়া মানেই ক্যানভাসে আঁকা নীল আকাশের নীচে শাল-পলাশের বন। তবে পুরুলিয়া জেলার সবচেয়ে বিখ্যাত হল ছৌ নাচ। জগৎজোড়া যার নাম-যশ। এক বিশেষ ধরণের মুখোশ পড়ে সেই সঙ্গে মানানসই পোশাকে এক বিশেষ নৃত্যকলাকেই ছৌ নাচ বলে। যা কিনা এই পুরুলিয়া তথা পশ্চিমবঙ্গের প্রাচীন সংস্কৃতিক ঐতিহ্য। অযোধ্যা পাহাড়ের বাঁকে বাঁকে পুরুলিয়ার জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রগুলির পথ নির্দেশক বোর্ড রয়েছে। কিন্তু দূর্ভগ্যজনকভাবে এই চড়িদা গ্রামটি চিনিয়ে দেওয়ার তেমন কোনও বোর্ড নেই। এমনকী পুরুলিয়া পর্যটনের অন্যতম আকর্ষণ মুখোশশিল্প হলেও সরকারিভাবে কোনও প্রচারও নেই। ছৌ নাচের মূল আকর্ষণই তো এই মুখোশ। এই মুখোশের সিংহভাগই জোগান দেয় চড়িদা গ্রাম। এক কথায় বলতে গেলে ছোট্ট গ্রামটি ছৌ নাচের ধাত্রীগৃহ।

প্রতিবছর হাজার হাজার পর্যটক অযোধ্যা পাহাড়ে ঘুরতে আসেন, কিন্তু এই ছৌ মুখোশের গ্রামটি আজও প্রচারের আড়ালে। প্রায় ২৫০ মুখোশ শিল্পী পরিবারের বাস এখানে। ছৌ মুখোশ চড়িদা গ্রামের কুটির শিল্প। জানা যায় অনেক আগে শুধুমাত্র গরীব ও পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর লোকেরাই এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কিন্তু বর্তমানে অনেকেই এই মুখোশ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের উদ্য়োগে ছৌ-নাচ এখন গোটা পশ্চিমবঙ্গেই ছড়িয়েছে। যে কোনও সরকারি ও বেসরকারি অনুষ্ঠানে ছৌ শিল্পীদের ডাক পড়ে। তাই ছৌ মুখোশের চাহিদাও বেড়েছে। তাই চড়িদা গ্রামের বাসিন্দারা এখন ছৌ মুখোশ তৈরি করে লাভের মুখ দেখছেন। এমনকি তাঁদের তৈরি শিল্পকলা বিদেশেও সমাদৃত।

এই গ্রামে এলে দেখতে পাবেন একেকটি মুখোশ তৈরি করতে শিল্পীদের পরিশ্রম। গ্রামের মুখোশ শিল্পীদের ঘরগুলিতে ঢুঁ মারলেই জানা যাবে সেই পদ্ধতি। জানবেন, এই মুখোশ তৈরি হয় পাঁচটি পর্যায়ে, আর প্রায় পাঁচ থেকে সাত দিন সময় লাগে একেকটি মুখোশ তৈরি হতে। প্রথম পর্যায়ে স্থানীয় নদীর মাটি দিয়ে মুখোশের আকার দেওয়া হয়। এরপর কাগজের পড়ত লাগানো হয় ওই মাটির মুখের ওপর। অনেক সময় প্রায় ১৫ থেকে ২০টি কাগজের পড়ত দেওয়া হয় ও রোদে শুকনো হয়। এই সময় যদি বৃষ্টি নামে তবে পুরো পরিশ্রমই পন্ড। মুখোশ
শুকিয়ে গেলে তার ওপরে বেলে মাটির একটি পাতলা স্তর দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে একটা পাতলা কাপড় বেলে মাটির গোলাতে ভালো করে ভিজিয়ে মুখোশের ওপর চাপানো হয়। এর ওপরেই ধীরে ধীরে চোখ নাক ঠোঁট প্রভৃতির আকার ফুটিয়ে তোলা হয় মুখোশগুলিতে।

এরপর আরেক প্রস্থ ভালো করে শুকিয়ে নিয়ে কাপড়ের আস্তরণটা খুব ধীরে ও সাবধানে খুলে ফেলতে হয়। এবার খড়িমাটি দিয়ে মুখোশ এর ওপর আস্তরণ দেওয়া হয়। খড়িমাটিতে ক্যালসিয়ামের মাত্রা অনেক বেশি থাকায় মুখোশ আরও শক্ত হয়ে ওঠে। এরপর শুরু হয় রঙের পালা। বিভিন্ন উজ্জ্বল রঙে মুখোশ রাঙিয়ে তোলাও একটা শিল্প। এর সঙ্গে রংবেরং এর পুঁতি, জড়ি, রিবন প্লাস্টিকের ফুল ও পাতা দিয়ে মুখোশকে সাজিয়ে তোলা হয়। বাড়ির বড়দের সঙ্গে কঁচিকাঁচারাও হাত লাগায় মুখোশ তৈরিতে।

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্য়োগে চড়িদা এখন ধীরে ধীরে জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র হয়ে উঠছে। এখানে প্রতিটি শিল্পীর বাড়িতেই রয়েছে তাঁদের কর্মশালা, সেখানে মুখোশ বিক্রিও হয়। নানা ধরণের উজ্জ্বল রঙের মুখোশে সেজে ওঠা গ্রামটার দিকে তাকালে চোখ ফেরানো যায়না। প্রতিটি কর্মশালার পাশেই বেঞ্চ রয়েছে। সেখানে বসে যে কেউ শিল্পীদের কাজ দেখতে পারেন, কিনতে পারেন মুখোশ। এছাড়া চড়িদার ছৌ মুখোশের কমিউনিটি মিউজিয়ামে যেতে পারেন। গেলে জানা যাবে মুখোশ নির্মাণের ঐতিহ্য ও মুখোশ বানানোর প্রক্রিয়া সম্বন্ধে। এর পাশাপাশি নানা ধরণের মুখোশও দেখতে পাবেন। ফলে অযোধ্য়া পাহাড় ঘুরতে এলে একবার অবশ্যই ঢুঁ মারুন চড়িদা গ্রামে। কিনে আনুন আপনার পছন্দসই ছৌ মুখোশ বা রেপ্লিকা।

কিভাবে যাবেন?

পুরুলিয়ার বাঘমুণ্ডি এখন এমনিতেই জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। সারা বছরই এখানে পর্যটকরা আসেন। ফলে বড় বড় হোটেল রিসর্ট গড়ে উঠেছে বাঘমুণ্ডিতে। এখান থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরেই চড়িদা গ্রাম। হাওড়া থেকে পুরুলিয়া যাওয়ার ট্রেন আছে। এছাড়া কলকাতার ধর্মতলা থেকে পুরুলিয়া ও বাঘমুন্ডি যাওয়ার বাসও পাওয়া যায়। তাই পুরুলিয়া অযোধ্য়া সার্কিটে যারা ঘুরতে যাবেন তাঁরা বাঘমুণ্ডি থেকে একবেলা ঘুরে আসুন চড়িদা গ্রামে।

Published by:

Ei Muhurte

Share Link:

More Releted News:

পুজোয় কাছেপিঠে ঘুরতে যেতে চান, তালিকায় রাখুন এই তিনটি জায়গা

পুজোতে ঘুরতে যেতে চান, পরিকল্পনা কী করে ফেলেছেন, রইল কিছু ভ্রমণ তালিকা

কোথাও ‘ভিলেন’ রাবণকে পোড়ানো হয়, আবার কোথাও হয় ‘হিরো’ দশাননের পুজো

পুজোর ছুটিতে বাড়িতে থাকতে চান না! তাহলে ঘুরে আসুন বনলক্ষী, ঝিলিমিলি, কাঁকসার গড় জঙ্গল থেকে

দেবী দুর্গার আরাধনা করেন মুসলিম পুরোহিত

পুজোর ছুটিতে দূরে যেতে চান না, তাহলে ঘুরে আসুন বাংলার এই ৫ টি ডেস্টিনেশন থেকে

Advertisement
এক ঝলকে
Advertisement

জেলা ভিত্তিক সংবাদ

দার্জিলিং

কালিম্পং

জলপাইগুড়ি

আলিপুরদুয়ার

কোচবিহার

উত্তর দিনাজপুর

দক্ষিণ দিনাজপুর

মালদা

মুর্শিদাবাদ

নদিয়া

পূর্ব বর্ধমান

বীরভূম

পশ্চিম বর্ধমান

বাঁকুড়া

পুরুলিয়া

ঝাড়গ্রাম

পশ্চিম মেদিনীপুর

হুগলি

উত্তর চব্বিশ পরগনা

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা

হাওড়া

পূর্ব মেদিনীপুর