নিজস্ব প্রতিনিধি: ভোজন রসিক বাঙালির মাছ, ডাল, ভাত সর্বদাই পছন্দের তালিকাতে সবার প্রথমে ছিল আছে এবং থাকবে। কিন্তু এটাও সত্যি মাছ মাংস অপেক্ষা অনেকেই ডিম খেতে বেশি পছন্দ করেন। সেই সঙ্গে মাছ-মাংসের মূল্যবৃদ্ধির জেরে মধ্যবিত্ত বাঙালি এখন নিত্যদিন ডিমের ওপর বেশি করে নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন। বাড়িতে আর কিছু না হোক অন্তত ডিমের ঝোল ভাত খেয়েও অনেক পরিবার দিন কাটাচ্ছে। বাংলাতে বর্তমানে প্রায় ১৩ কোটিরও বেশি মানুষের বাস। এই বিপুল জনসংখ্যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে ডিমের চাহিদা। রাজ্যের খাদ্য দফতরের রিপোর্ট অনুযায়ী, এখন ডিমের চাহিদা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ হাজার ৪০ কোটির দোরগোড়ায়। রাজ্যে এ বছর ডিম উৎপাদন হয়েছে প্রায় ১ হাজার ২২৩ কোটির কাছাকাছি। ডিমের চাহিদা মেটাতে অন্য রাজ্য থেকে প্রায় ২৩৭ কোটি ডিম আমাদানি(Import) করতে হচ্ছে। কিন্তু এবার রাজ্যের প্রাণীসম্পদ বিকাশ দফতরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ(Swapan Debnath) দাবি করলেন ২০২৪ সালের মধ্যেই বাংলা(Bengal) ডিম উৎপাদনে স্বনির্ভর হয়ে উঠবে। নিজের চাহিদা মিটিয়ে ডিম রপ্তানিও(Export) করতে পারবে।
শুক্রবার ছিল বিশ্ব ডিম দিবস(World Egg Day)। সেই উপলক্ষ্যে ওয়েস্ট বেঙ্গল পোলট্রি ফেডারেশনের তরফ থেকে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের প্রাণীসম্পদ বিকাশ দফতরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। সেখানেই তিনি বলেন, ‘সবদিক ঠিকঠাক থাকলে আগামী বছর ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ভিন রাজ্য থেকে ডিম আমদানি বন্ধ করে ফেলব আমরা। সংগঠিত ক্ষেত্র থেকে রাজ্যে প্রায় ৬৩১ কোটি ডিম উৎপাদন হয়। বাকি ডিম আসে বেসরকারি ফার্ম অথবা ওয়েস্ট বেঙ্গল লাইভ ষ্টক ডেভেলপমেন্ট ফার্ম থেকে। আগামী বছরে এই ছবিটা অনেকটাই পালটে যাবে। সরকারি ফার্মগুলিতে ডিম উৎপাদন ৬.২৮ কোটি থেকে বাড়িয়ে ৪৭ কোটির লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে। এর ফলে দক্ষিণ ভারতের কাছে আমাদের আর ডিমের প্রয়োজন পড়বে না। ডিম উৎপাদনের হার বাড়িয়ে ফেলতে পারলে আমরাও আগামি বছরের মধ্যে ভিন রাজ্যে ডিম রপ্তানি করা শুরু করে দিতে পারব।’
স্বপনবাবু আরও জানান, ‘এ রাজ্যে বছরে মোট ডিমের চাহিদা ১ হাজার ৪৪০ কোটি। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে মোট ১ হাজার ২০৩ কোটি ডিম উৎপাদন হচ্ছে। ফলে প্রতি বছর বাইরের রাজ্য থেকে ২৩৭ কোটি ডিম আমদানি করতে হচ্ছে। আগামী বছর ডিসেম্বর মাসের মধ্যে আমদানির পরিমাণ শূন্যে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে। বর্তমানে এই রাজ্যে যে ডিম উৎপাদিত হয়, তার সিংহভাগই আসে অসংগঠিত ক্ষেত্র থেকে। প্রয়োজনের নিরিখে তা ৪৩.৮২ শতাংশ। বাকিটা আসে বেসরকারি ফার্ম ও ওয়েস্ট বেঙ্গল লাইভ স্টক ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন থেকে। তবে আগামী এক বছরে রাজ্যের ছবিটাই পাল্টে যাবে। অসংগঠিত ক্ষেত্রে ডিমের উৎপাদন বছরে ৭২৭ কোটিতে পৌঁছবে। সরকারি ডিমের উৎপাদনও ৬.২৮ কোটি থেকে বেড়ে হবে ৪৭ কোটি। সংগঠিত ক্ষেত্রেও তা প্রায় ৫০ লক্ষ বাড়বে। এতে আমাদের দক্ষিণ ভারতের উপর নির্ভরতা আর থাকবে না।’