নিজস্ব প্রতিনিধি: উনিশের ভোটে বাংলা থেকে ১৮জন সাংসদ(MP) পেলেও একুশের বিধানসভা নির্বাচনে সেই তুলনায় সাফল্যের মুখ দেখেনি বঙ্গ বিজেপি(Bengal BJP) নেতৃত্ব। মাত্র ৭৭ আসন পেয়েই তাঁদের যাত্রায় ইতি পড়ে গিয়েছিল। এই দুই নির্বাচনে বাংলার বুকে পদ্মশিবিরে যেটুকু সাফল্য এসেছে সেই সাফল্যও যে পরবর্তীকালে আর ধরে রাখা যাচ্ছে না সেটা বেশ ভালই বুঝছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। আরএসএস(RSS) বা সঙ্ঘের তরফে ইতিমধ্যেই তাঁদের নিজস্ব সমীক্ষায় জানিয়ে দেওয়া হয়েছে ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় ৫ বছর আগের জেতা আসনও ধরে রাখতে পারবেন না পদ্মশিবির। সেই রিপোর্ট যে খুব একটা ভুল নয় সেটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে আসানসোল(Asansol)। এরপরেই এবার বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে বাংলার দলীয় সাংসদদের কড়া বার্তা দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, শুধুই প্রকল্পের উদ্বোধন বা দলীয় কর্মিসভা নয়। বরং আরও বেশি করে এলাকার মানুষের(People) কাছে যেতে হবে সাংসদদের। তাঁদের পাশে দাঁড়াতে হবে, তাঁদের অভাব-অভিযোগ শুনতে হবে।
বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে বাংলায় দলের হাল কার্যত এখন দিনের আলোর মতোই সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। দেরীতে হলেও তাঁরা বুঝতে পেরেছেন শুভেন্দু-সুকান্তের টিম যে রিপোর্ট এতদিন দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে পাঠিয়ে এসেছ তা কার্যত ভুলে ভরা, অতিরঞ্জিত, অবাস্তব তথ্যে পরিপূর্ণ। দল বাংলার মানুষের থেকে সম্পূরড়ণ ভাবে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। দলের গ্রহণযোগ্যতা, বিশ্বাসযোগ্যতা, জনপ্রিয়তা কার্যত তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। শুকান্ত-শুভেন্দুর টিম সেই শূন্যস্থান পূরণে ব্যর্থ। তাঁরা খালি ডায়লগবাজি চালিয়ে যাচ্ছেন। সংগঠন না তাঁরা গড়তে পারছেন না দলের কর্মীদের ধরে রাখতে পারছেন। সব থেকে বড় কথা দলের আদি অংশ পুরোপুরি বসে গিয়েছে। এদের আর মাঠে নামাতে পারছে না শুভেন্দু-সুকান্ত। দলের নব্য নেতাদের দাপট ও দলের আদি শিবিরের প্রতি অপমানজনক পদক্ষেপের দরুণ এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এই অবস্থায় আমজনতাকে পাশে না পেলে যে ২০২৪ সালে বাংলা থেকে ১জন সাংসদও যে বিজেপি জিতিয়ে নিয়ে দিল্লি যেতে পারবে না সেটা দিনের আলোর মতোই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।
এই অবস্থায় বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বাংলা থেকে জেতা দলের ১৭জন সাংসদকে কড়া বার্তা পাঠিয়েছেন। তা৬দের সাফ জানানো হয়েছে ডায়লগবাজি না করে তাঁরা যেন মানুষের পাশে গিয়ে বেশি করে দাঁড়ান। দলের কর্মী ও সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে রাস্তায় নেমে, মাঠে ময়দানে নেমে যেন আরও বেশি করে আন্দোলন করেন। আরও বেশি মানুষের কাছে গিয়ে তাঁরা যেন মানুষের অভাব-অভিযোগ শুনে তাঁদের সমস্যার সুরাহা করার দিকে নজর দেন। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বাংলার ১৭জন সাংসদকে স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন, প্রত্যেক সাংসদকে তাঁর লোকসভা কেন্দ্রের আওতায় থাকা বিধানসভা কেন্দ্রগুলিতে ঘুরতে হবে। সপ্তাহে অন্তত একদিন বিধানসভা কেন্দ্রগুলির জন্য সময় দিতেই হবে সাংসদদের। হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে জনসংযোগ কর্মসূচিতে জোর দিতে হবে। হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপগুলিতে যুক্ত করতে হবে দলের নিচুতলার নেতা-কর্মীদেরও। যেকোনও প্রয়োজনে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। চিকিৎসার প্রয়োজনে অর্থ সাহায্যই হোক কিংবা কোনও পরিষেবা প্রাপ্তির জন্য সুপারিশ চিঠি, অথবা এরকম অন্যান্য সহযোগিতা, তা কালবিলম্ব না করে করতেই হবে। এলাকার মানুষ যদি কোনও কেন্দ্রীয় প্রকল্পের পরিষেবা নিতে চান, তাহলেও অবিলম্বে তাঁকে সেই ব্যাপারে সহযোগিতা করতে হবে। স্থানীয় মানুষ যেন বুঝতে পারেন, সাংসদ তাদের পাশে আছেন। আর এইসব সঠিক ভাবে না করলে যে ২০২৪ এর টিকিট যে মিলবে না সেটাও বাংলার ১৭জন বিজেপি সাংসদকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, দাবি বঙ্গ বিজেপি সূত্রের।