নিজস্ব প্রতিনিধি: অযোগ্য শিক্ষকদের বিরুদ্ধে বিচারপতির দ্বারস্থ হয়েছিলেন নিজেকে ‘যোগ্য’ বলে দাবি করা চাকরিপ্রার্থী। কিন্তু শুনানি চলাকালীন সেই প্রার্থীর যোগ্যতার বহর দেখে বিস্মিত হলেন খোদ কলকাতা হাইকোর্টের(Calcutta High Court) বিচারপতি। শুক্রবার ভরা আদালতে ওই চাকরিপ্রার্থীর বানানের দৌড় দেখে শেষে তিনি জানিয়েই দিলেন, ‘এই বিদ্যে নিয়ে আপনি স্কুলে শিক্ষকতা করতে যাবেন? আপনি পড়ানোর জন্য উপযুক্ত নন। আপনার আবেদন খারিজ করতে বাধ্য হলাম।’ যিনি এই আবেদন খারিজ করলেন তিনি কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়(Justice Abhijit Gangopadhay)। এদিন বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ শুনানির জন্য ওঠে ওই চাকরিপ্রার্থীর মামলা। আবেদনকারী একজন মহিলা। কিন্তু নিরাশ হয়েই এদিন তাঁকে ফিরে যেতে হল।
জানা গিয়েছে, মামলাকারী ওই মহিলা ২০১৪ সালের টেট(TET) পরীক্ষা দিয়েছিলেন। কিন্তু পাশ করতে পারেননি। বিচারপতির কাছে তাঁর দাবি ছিল, পরীক্ষায় ৬টি প্রশ্ন ভুল ছিল। সেই নম্বর পেলে, তিনি চাকরি পাওয়ার জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। গত ১৭ জুলাই ওই চাকরিপ্রার্থীর আবেদন শোনার পর বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছিলেন, চাকরিপ্রার্থীকে তাঁর প্রাপ্য নম্বর দিতে হবে। শুধু তা-ই নয়, চাকরিপ্রার্থীর ইন্টারভিউ এবং অ্যাপ্টিটিউট টেস্ট নতুন করে নেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। শুক্রবার সেই মামলাটিরই আবার শুনানি ছিল। শুনানিতে বিচারপতিকে পর্ষদ জানায়, ওই চাকরিপ্রার্থী চাকরি পাওয়ার যোগ্য নয়। সে কথা শোনার পরই বিচারপতি নিজে তাঁর মৌখিক পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এমনকি, ওই চাকরিপ্রার্থীর Interview এবং Aptitude Test Videography-ও দেখতে চান। ভিডিয়োয় দেখা যায় চাকরিপ্রার্থী ব্ল্যাক বোর্ডে লিখছেন, ‘আমরা চাষ করী আনন্দে।’ স্কুলে শিক্ষরতার আবেদনকারীকে ‘করি’ বানানে দীর্ঘ-ঈ লিখতে দেখে অবাক হয়ে যান বিচারপতি।
এরপরেই আবেদনকারীকে বিচারপতি বলেন, ‘আপনি শিক্ষক হবেন? করি বানান ভুল! বলুন তো দুর্গা বানান কী?’ এর উত্তরে ওই মামলাকারী মহিলা বানান করে বলেন ‘দূর্গা’। তখন বিচারপতি বলেন, ‘ভুল বললেন। ওটা ঠিক বানান নয়। বানান হবে দ-এ হ্রস্ব-উ গ-এ রেফ আকার।’ বিচারপতির মুখে সঠিক বানান শুনে চুপ করে থাকেন ওই মামলাকারী মহিলা। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় অবশ্য তাঁকে সাফ জানিয়ে দেন, ‘এই বানান না জানলে কী ভাবে শিক্ষক হবেন! করি বানান ভুল লিখলেন কী করে?’ জবাবে মামলাকারী বলেন, ‘আমি নার্ভাস ছিলাম। তাই ভুল হয়েছে।’ বিচারপতি তখন জানান, ‘নার্ভাস হয়ে কেউ করি বানান ভুল লেখে?’ তা শুনে মামলাকারী যা জানান তা শুনে অনেকেই অবাক হয়ে যান। তিনি বলেন, ‘অনেক দিন আগে পড়েছিলাম তাই ভুলে গিয়েছি।’ বিচারপতি অবশ্য জানিয়ে দেন, ‘তা হলে আমি তো বহু বছর আগে পড়েছি। এই তো সে দিন আপনারা পড়ে এলেন। এরই মধ্যে ভুলে গেলেন। আমি আর ভিডিয়ো দেখতে চাই না। আমার বোঝা হয়ে গিয়েছে। আপনি পড়ানোর জন্য উপযুক্ত নন। আপনার আবেদন খারিজ করতে বাধ্য হলাম। এই বিদ্যে নিয়ে আপনি স্কুলে যাবেন! যাবেন না। হয়তো আপনার থেকে কম যোগ্যতার কেউ চাকরি পেয়েছেন। কিন্তু সেটা টাকার বিনিময়ে। কিন্তু আপনিও স্কুলে পড়ানোর যোগ্য নন।’