নিজস্ব প্রতিনিধি: শহর কলকাতার বুকে ফের প্রতারণার ছক। ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে অভিনব কায়দায় টেলিগ্রাম গ্রুপের অপব্যবহার করে প্রতারণার ছক ধরে ফেললো কলকাতা পুলিশ।আবারও একবার টেলিগ্রাম গ্রুপের অপব্যবহার করে প্রতারণার ছক শহরের বুকে। পুলিশের জালে তিন প্রধান সন্দেহভাজন ব্যাক্তি। প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেন বেলেঘাটার এক বাসিন্দা। যাকে ওই টেলিগ্রাম গ্রুপের মাধ্যমে বলা হয়, ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ করলে বিরাট লাভের সম্ভাবনা রয়েছে। তখন ওই ব্যক্তি প্রতারকদের ফাঁদে পা দেন। প্রায় ২৪ লক্ষ টাকা তাঁর খোয়া যায়। তারপর তিনি বোঝেন তিনি প্রতারিত হয়েছেন। এরপর কলকাতা পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগে, অভিযোগ দায়ের করেন প্রতারিত ব্যক্তি।
টেলিগ্রাম গ্রুপটির সঙ্গে যুক্ত আইপি অ্যাড্রেস বিশ্লেষণ করে কলকাতা পুলিশের সাইবার বিভাগের তদন্তকারীরা অফিসাররা বুঝতে পারেন যে – ‘গ্রুপ তৈরি করার সময় ব্যবহার করা হয়েছে ভিপিএন (ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক), যার দ্বারা নিজের আসল ভৌগোলিক অবস্থান গোপন রাখা যায়। যেমন এই গ্রুপটির অবস্থান দেখাচ্ছিল দুবাই।’
এরপর কলকাতা পুলিশের টিম খোঁজ করতে শুরু করে। কোন কোন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছে টাকা। সেই টাকা তোলা হয়েছে এটিএম অথবা সেলফ চেক-এর মাধ্যমে, বা চালান করা হয়েছে অন্যান্য অ্যাকাউন্টে। দেখা যায়, টাকার একাংশ জমা পড়েছে মধ্যপ্রদেশের ইন্দোর শহরে মা অন্নপূর্ণা ট্রেডার্স নামক একটি সংস্থার অ্যাকাউন্টে। যেখান থেকে সেলফ চেক দিয়ে তোলা হয়েছে টাকা।
আরও কিছু অনুসন্ধানের পর জানা যায়, এই অ্যাকাউন্ট থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা চালান করা হয়েছে কয়েকটি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে। যাদের মধ্যে একটির মালিক মেসার্স জোহরি ট্রেডার্স নামে আরও একটি সংস্থা। দুই সংস্থার মধ্যে লেনদেনের পরিমাণ দিনে ১০ লক্ষ টাকাও ছাড়িয়ে গেছে। যা দেখে স্বাভাবিকভাবেই সন্দেহ জাগে, পুলিশ আধিকারিকদের।
প্রতারণার উৎস মধ্যপ্রদেশই, এই ধারণা দৃঢ় হওয়ায় সেই রাজ্যের উদ্দেশ্য পৌঁছায় তদন্তকারী আধিকারিকেরা, এবং গতকাল সন্ধ্যায় তদন্তকারী আধিকারিকরা হানা দেন উজ্জয়িনী শহরের বেশকিছু জায়গাতে। গ্রেফতার হয় অন্নপূর্ণা ট্রেডার্স-এর মালিক গৌরব নামদেব, এবং জোহরি ট্রেডার্স-এর দুই মালিক পবন জোহরি ও দীপক গাঙ্গওয়াল ওরফে নামদেব।
তাদেরকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের অনুমান, আরও অনেককেই এইভাবে তাদের হাতে প্রতারিত হয়েছেন। তারা একটি চক্র হিসেবে কাজ করত। ধৃতদের কাছ থেকে বাজেয়াপ্ত করা ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন। এই সমস্ত কিছু থেকে অনেক তথ্য প্রমাণ হাতে উঠে এসেছে তদন্তকারী আধিকারিকদের। যা দেখে তারা বুঝতে পারছেন, এর আগেও অনেকের সাথে এইভাবে প্রতারণা করেছিল এই চক্র। ওই তিনজনকে আজ ট্রানজিট রিমান্ড-এ আবেদন জানিয়ে উজ্জয়িনীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে হাজির করা হয়।