নিজস্ব প্রতিনিধি: আম্ফানের দাপটে রাজ্যে যত মানুষ মারা গিয়েছিলেন তার একটা বড় অংশ ছিল তড়িদাহত হয়ে। সেই ঘটনার রিপিটেশন আবারও দেখা যাচ্ছে বাংলায় বর্ষা পা রাখতেই। শুধুমাত্র কলকাতা(Kolkata) শহরেই গত এক সপ্তাহে একাধিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে যেখানে রাস্তায় তড়িদাহত হয়ে মারা(Death) গিয়েছে কিশোর থেকে যুবক। আর তার জেরেই এবার কলকাতা শহরে থাকা সব বাতিস্তম্ভ বিদ্যুৎ কুপরিবাহী ম্যাট(Mat) দিয়ে ঢেকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কলকাতা পুরনিগম(KMC) কর্তৃপক্ষ। সেই সিদ্ধান্ত মোতাবেক এখন শহরের বুকে শুরু হয়ে গিয়েছে ত্রিফলা বাতি স্তম্ভ সহ পুরনিগমের অধীনে থাকা সব বাতিস্তম্ভে এই বিদ্যুৎ কুপরিবাহী ম্যাট লাগানোর কাজ। আপাতত শহরের ১০ নম্বর বরোর দু’টি ওয়ার্ডে এই কাজ শুরু হয়েছে। এই পরিকল্পনা সফল হলে আগামীদিনে সারা শহরেই এই কাজ করা হবে।
কলকাতা শহরে গত ১-২ সপ্তাহের মধ্যে ৩টি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে তড়িদাহত হয়ে। সেই সব ঘটনার তদন্তে নেমে পুরপ্রশাসনের সঙ্গে জড়িত আধিকারিকেরা দেখেছেন কোথাও ফিডার বক্সের ঢাকনা খোলা ছিল, কোথাও আবার হুকিংয়ের কারণে বিপত্তি ঘটেছে। সঙ্গে দোসর হয়েছে বৃষ্টি ও জল জমা। এই ধরনের দুর্ঘটনা রুখতেই এবার কলকাতা পুরনিগমের আলোক বিভাগের(Light Department) তরফ থেকে শহরের সব ত্রিফলা বাতিস্তম্ভ সহ পুরনিগমের আওতাধীন সব বাতিস্তম্ভগুলির গায়ে নীল রংয়ের বিদ্যুৎ কুপরিবাহী ম্যাট লাগিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ‘পাইলট প্রজেক্ট’ হিসেবে শহরের ১০ নম্বর বরোর দু’টি ওয়ার্ডে এই কাজ শুরু হয়েছে। এই পরিকল্পনা সফল হলে আগামীদিনে সারা শহরেই এই কাজ করা হবে। এর ফলে একদিকে যেমন বিদ্যুৎ চুরি বন্ধ হবে, তেমনি তড়িদাহত হয়ে মৃত্যুর ঘটনাও কমে যাবে বলে আশাবাদী পুর-প্রশাসন। এখন মূলত কলোনি বা ঘিঞ্জি জনবসতিপূর্ণ অঞ্চলে এই কাজ করা হচ্ছে। কারণ, ঘিঞ্জি এলাকাতেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।
কলকাতার বিভিন্ন অঞ্চলে বাতিস্তম্ভ বা ফিডার বক্সের ঢাকনা চুরি থেকে শুরু করে যত্রতত্র হুকিংয়ের অভিযোগ বিস্তর। বাতিস্তম্ভগুলির নীচ থেকে ওপর পর্যন্ত বিদ্যুতের কুপরিবাহী ম্যাট জড়িয়ে দেওয়া হলে দু’টি সমস্যারই দীর্ঘস্থায়ী সমাধান হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ইতিমধ্যে ৫০-৬০টি বাতিস্তম্ভে এই কাজ হয়েছে। আলোক বিভাগের আধিকারিকদের বক্তব্য, ১১০০ ভোল্ট পর্যন্ত বিদ্যৎ পরিবহণ করার ক্ষমতা এই ম্যাটের নেই। ফলে কেউ তা স্পর্শ করলেও তড়িদাহত হয়ে পড়ার কোনও ভয় নেই। প্রাথমিকভাবে ৮১ নম্বর ওয়ার্ডের ঝালদার মাঠ বস্তি এবং ৯৮ নম্বর ওয়ার্ডের নারকেলবাগান মোড়ের একাধিক পোস্টে ম্যাট লাগানো হয়েছে। ১০ নম্বর বরোর অঞ্চলগুলি ঘনবসতিপূর্ণ এবং গলি বেশ সঙ্কীর্ণ। ফলে রাস্তায় বেরলে কোথাও না কোথাও পোস্টে গা লেগে যেতে পারে। বিশেষ করে বয়স্ক লোকেরা বাতিস্তম্ভ অবলম্বন করে হাঁটাচলাও করেন। তাই সেই বাতিস্তম্ভগুলি নিয়মিত পরীক্ষা করা হচ্ছে। কিন্তু পথে-ঘাটে ভবঘুরেরা বিভিন্ন সময় বাতির ঢাকনা চুরি করে নিয়ে পালাচ্ছে। সেখানে অজান্তেই মৃত্যুফাঁদ তৈরি হচ্ছে। তাই ম্যাট লাগিয়ে সমস্যার সমাধান করা হচ্ছে।