নিজস্ব প্রতিনিধি: থেমে গিয়েছেন কে কে(KK)। চলে গিয়েছেন না ফেরার দেশে। থেকে গিয়েছে তাঁর গেয়ে যাওয়া অজস্র গান। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কলকাতার নজরুল মঞ্চে(Nazrul Mancha) লাইফ প্যারফরমেন্স ছিল এই জনপ্রিয় গায়কের। সেখানেই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। কিন্তু তবুও অনুষ্ঠান সম্পূর্ণ করেছিলেন তিনি। অনুরাগীদের নিরাশ না করেই গান গেয়ে মন কেড়েছিলেন সকলের। সেই অনুষ্ঠান নিয়েই উঠেছে বেশ কিছু গুরুতর অভিযোগ। সেই সব অভিযোগ খতিয়ে দেখে এবার তদন্তে নামছে কেএমডিএ(KMDA) বা কলকাতা মেট্রোপলিটান ডেভেলপমেন্ট অথরিটি। কেননা নজরুল মঞ্চের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে কেএমডিএ। তাই ঠিক কী হয়েছিল গতকালের অনুষ্ঠানে সেটাই এখন খতিয়ে দেখতে চাইছেন তাঁরা।
অভিযোগ উঠেছে, গতকাল কে কে’র অনুষ্ঠান শুরুর আগেই চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা শুরু হয়ে গিয়েছিল। কে কে-র মূল অনুষ্ঠান শুরুর পরেই মাত্রাতিরিক্ত ভিড়ের কারণে দমবন্ধকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। অনুষ্ঠানে অত্যাধিক ভিড়ের কারণে দরজা খুলে দিতে হয়েছিল একসময়ে। অভিযোগ উঠেছে, কে কে-র অনুষ্ঠানের মাঝেই প্রেক্ষাগৃহের সব এসি নাকি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। যদি কেমনটা হয়ে থাকে, তবে কেন হয়েছিল? কার নির্দেশে তা করা হয়েছিল? নাকি অত্যাধিক দর্শকের কারণে এসি চললেও তা কাজ করছিল না। এখন এই সমস্ত কিছুই খতিয়ে দেখতে চাইছে কেএমডিএ। যাঁদের তরফে নজরুল মঞ্চ ভাড়া নেওয়া হয়েছিল, সেই উদ্য়োক্তাদের তরফে কোনও অনুরোধ এসেছিল কিনা তাও, খতিয়ে দেখা হতে পারে। গতকালের অনুষ্ঠান যারা দেখেছেন তাঁদের অনেকেরই অভিযোগ, আসন সংখ্যার তুলনায় বেশি মানুষ ঢুকে গিয়েছিলেন প্রেক্ষাগৃহে। তার জেরে একসময় প্রেক্ষাগৃহের দরজা ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়। তাই কিছুটা বাধ্য হয়েই প্রেক্ষাগৃহের ৭টি দরজার মধ্যে ৫টি দরজা খুলে দেওয়া হয়। তাতেও ভিড় ঠেকানো যায়নি।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া বেশ কিছু ভিডিওয় দেখা গিয়েছে, কে কে’র অনুষ্ঠান চলাকালীন সময়ে তীব্র উত্তেজনা তৈরি হয় নজরুল মঞ্চের ভিতরে। নজরুল মঞ্চের এক কর্মীর বক্তব্যও সামনে এসেছে। প্রায় ১২ বছর ধরে নজরুল মঞ্চে কর্মরত ওই কর্মীর দাবি, মঙ্গলবারের মত দৃশ্য তিনি এর আগে নজরুল মঞ্চে কোনওদিন দেখেননি। প্রবল ভিড়ের মধ্যে ছিল বেশ কিছু বিশৃঙ্খল মদ্যপ যুবকেরাও। তাঁরা আপ্রাণ চেষ্টা করছিলেন প্রেক্ষাগৃহের ভিতরে ঢোকার। কিন্তু ঢুকতে না পেরে প্রেক্ষাগৃহ লক্ষ্য করে বাঁশ ছুঁড়ছিলেন। ছোঁড়া হয় মদের বোতলও। ওই কর্মীর দাবি যে খুব একটা ভুল নয় তার প্রমাণ মিলেছে এদিন সকালে। নজরুল মঞ্চের ভিতরে যেমন অসংখ্য বাঁশের টুকরো পাওয়া গিয়েছে তেমনি প্রেক্ষাগৃহের পিছনে মিলেছে ভাঙা মদের বোতল।
মাত্রাতিরিক্ত ভিড়ের কারণে প্রেক্ষাগৃহের ভিতরে শুধু যে দমবন্ধকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল তাই নয়, ভিড় হঠাতে প্রেক্ষাগৃহের নিরাপত্তারক্ষীরা অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্র থেকে স্প্রে করতে শুরু করে দিয়েছিলেন যা ভেতরের পরিস্থিতি তৈরি করে দেয়। তার জেরে কে কে অসুস্থ হয়ে পড়েন। যদিও এদিন কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম(Firhad Hakim) জানিয়েছেন, ‘এসি খারাপ হয়নি। সব এসিই চলছিল। কিন্তু সেই এসি ২৭০০ মানুষের জন্য, ৭ হাজার মানুষের জন্য নয়। আমি তো শুনলাম পাঁচিল টপকেও ছেলেমেয়েরা ঢুকেছে। আসলে কে কে ঘিরে উচ্ছ্বাস এই ভিড়টাকে টেনে এনেছিল যেটা নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি, করা সম্ভবও নয়। তবে তদন্ত হচ্ছে। সব কিছু খতিয়ে দেখা হবে।’