নিজস্ব প্রতিনিধি: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কলকাতার ট্যাংরার কিশোরীর আলাপ হয়েছিল উত্তরপ্রদেশের এক যুবকের সঙ্গে। সেই আলাপের রেশ ধরে জন্ম নেয় ভালো লাগা। ক্রমে গড়ে ওঠে ‘ভালবাসা’ ও ‘বন্ধুত্ব’। আর সেই ‘বন্ধুত্বের’ টানে কলকাতা থেকে চলে গিয়েছিলেন সোজা উত্তরপ্রেদেশের ফৈজাবাদে। আর সেখানে ‘বন্ধু’র ডেরায় গিয়ে ঠাঁই হল গোয়ালঘরে। সঙ্গে চলতে থাকল যৌন অত্যাচার। ওই নাবালিকার অভিযোগ এমনটাই। ইতিমধ্যে ওই নির্যাতিতা কিশোরীকে উদ্ধার করেছে কলকাতা পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল। পাশাপাশি রোশন সিং নামের অভিযুক্ত ওই যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কলকাতার ট্যাংরার বাসিন্দা ওই নাবালিকা দশম শ্রেণিতে পড়ে। ওই ছাত্রীর সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলাপ হয় উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা রোশন সিং এর সঙ্গে। ওই সোশ্যাল সাইটে তাদের মধ্যে চলত চ্যাট। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রেমের ফাঁদ পেতে ওই যুবক তরুণীকে প্রলোভন দেখিয়ে নিয়ে যায় উত্তরপ্রদেশে। অভিযোগ, অভিযুক্ত যুবক রোশন কিশোরীকে বিয়ের টোপ দিলেও ফৈজাবাদে তার বাড়িতে আসার পর তাকে গরু ও বলদের সঙ্গে আটকে রাখা হয় গোয়ালঘরে। সেখানেই তাকে খেতে দেওয়া হত। গোয়ালঘর থেকে কোনওদিন বের হতে দেওয়া হয়নি। কিশোরীর আরও অভিযোগ, অভিযুক্ত যুবক ওই গোয়ালে তার ওপর যৌন অত্যাচার চালাত। এমনকি তার মোবাইল ফোনও কেড়ে নেয় সে। ওই বাড়ির একজনের ফোন থেকে কোনওভাবে মাকে ফোন করে বিষয়টি জানায় সে। অভিযোগ, ওই কিশোরীকে উত্তরপ্রদেশের অন্য একটি গ্রামে এক উচ্চবিত্ত ব্যক্তির কাছে চড়া দামে বিক্রি করারও ছক কষে অভিযুক্ত যুবক। সেখানে ভালো দাম না পেলে যৌনপল্লিতে নিয়ে গিয়ে কিশোরীকে বিক্রি করার পরিকল্পনা করা হয়।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে ওই যুবক নারী পাচার চক্রের সঙ্গে যুক্ত। ওই কিশোরী গত সপ্তাহে স্কুলে যাওয়ার নাম করে বাড়ি থেকে বেরোয়। কিন্তু আর ফিরে আসেনি। এর পর পরিবারের লোকজন তাকে ফোন করেও পাননি। চিন্তিত হয়ে ওই নাবালিকার মা ট্যাংরা থানায় অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেন। আর সেই অভিযোগের তদন্তে নেমে প্রথমে পুলিশ বিভিন্ন সূত্র মারফত তথ্য জোগাড় করতে থাকে। তার মাঝেই একদিন ওই কিশোরীর মায়ের ফোনে একটি অচেনা নম্বর থেকে ফোন আসে। সেই ফোন ধরতেই ওই কিশোরীর মা শুনতে পান মেয়ের কণ্ঠ। অপহৃত কিশোরী ফোনে তার মা’কে জানায়, ‘ফৈজাবাদের গ্রামে একটি গোয়ালঘরে তাকে চারজন মিলে আটকে রেখে অকথ্য অত্যাচার চালাচ্ছে।’ এর পর ফোন কেটে যায়। সেই মোবাইলটিও সুইচ অফ হয়ে যায়। এর পর ওই মোবাইলে কলের সূত্র ধরেই ট্যাংরা থানার আধিকারিকরা হানা দেয় উত্তরপ্রদেশের ফৈজাবাদে। সেখানে গ্রামে গিয়ে রোশনের বাড়িটি শনাক্ত করেন তদওন্তকারীরা। অভিযুক্তের বাড়ির বন্ধ গোয়ালঘরের শেকল খুলে তার ভিতর থেকেই কিশোরীকে উদ্ধার করেন তদন্তকারী আধিকারিকরা। অভিযুক্ত যুবকে গ্রেফতার করে তার বিরুদ্ধে অপহরণ, নাবালিকাকে ধরে আটকে রাখা, ধর্ষণ ও পকসো (POCSO) মামলার ধারা রুজু করেছে পুলিশ।