নিজস্ব প্রতিনিধি: সোম সকালে গোটা রাজ্যের চোখ কলকাতা হাইকোর্টের(Calcutta High Court) দিকে। কেননা এদিনই রাজ্যের সরকারি ও সরকার পোষিত স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং শিক্ষাকর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতি(School Teachers Recruitment Scam) সংক্রান্ত মামলার রায়(Case Verdict) দিতে চলেছে বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি সব্বর রশিদির স্পেশাল ডিভিশন বেঞ্চ। এই রায়ের ওপর নির্ভর করছে প্রায় ২৫ হাজার চাকরিপ্রার্থীর ভবিষ্যৎ। গত ২০ মার্চ কলকাতা হাইকোর্টের এই বিশেষ বেঞ্চ মোট ৩৪৮টি মামলার এক সঙ্গে টানা শুনানি শেষে রায় দান স্থগিত রাখে। এদিন সেই রায় দান করা হবে। তার আগেই এদিন সকালে এই ঘটনা নিয়েই ট্যুইট করলেন তৃণমূলের(TMC) নেতা কুণাল ঘোষ(Kunal Ghosh)। তিনি লেখেন, ‘শিক্ষক চাকরি মামলা। যেখানে ভুল, অন্যায়, ব্যবস্থা হোক। দোষীরা শাস্তি পাক। কিন্তু, যোগ্য প্রার্থীদের চাকরি যেন বাধা না পায়। @MamataOfficial-র সরকার আন্তরিক সদিচ্ছা নিয়ে তাঁদের চাকরির চেষ্টা করেছে। কিছু অন্যায়কে প্রাধান্য দিতে গিয়ে যেন যোগ্যদের অনিশ্চয়তায় ফেলে না দেওয়া হয়। এদের স্বার্থে যা চেষ্টা দরকার, সরকার করেছে। এদের অবিলম্বে চাকরি দরকার। আশা করি আদালতের রায়ে এই চাকরির জট খুলতে সরকারের চেষ্টা মান্যতা পাবে।’
ঘটনা হচ্ছে, দেশের শীর্ষ আদালতের(Supreme Court) নির্দেশে কলকাতা হাইকোর্টে এই বিশেষ বেঞ্চ গঠিত হয়েছে মামলার শুনানি ও তার রায় প্রদানের জন্য। গত বছরের নভেম্বর মাসে কলকাতা হাইকোর্টের এই বিশেষ বেঞ্চকে ৬ মাসের মধ্যে মামলার নিষ্পত্তি করতে হবে বলেও জানিয়েছিল শীর্ষ আদালত। গত কয়েক মাস ধরে একটানা শুনানির পর রায় দান স্থগিত রাখে এই বিশেষ বেঞ্চ। ৬ মাসের আগেই এদিন ইবশ্য সেই মামলার রায় ঘোষণা হতে চলেছে। এদিকে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হলে অযোগ্য চাকরি প্রাপকদের কী পরিণতি হবে? এক্ষেত্রে গত ১৩ই মার্চ, শুনানি চলাকালীন পর্যবেক্ষণে দু’টি বিকল্পের কথা উল্লেখ করেন বিচারপতি দেবাংশু বসাক। দুর্নীতি প্রমাণিত হলে বাতিল করা হতে পারে গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়া, কিংবা বাতিল করা হতে পারে গোটা নিয়োগের অংশবিশেষ। ওই দিন মামলার শুনানিতে বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ বলে, ‘একটা পচা আপেল গোটা ঝুড়ির আপেলকেই নষ্ট করে দেয়। পিছনের দরজা দিয়ে চাকরি পেলে কী করা উচিত? পদ ভরাতে হবে বলে অযোগ্যদের নিয়োগ কেন করা হবে? অযোগ্যরা কী শেখাবেন? যদি সবটা অবৈধ হয়, তাহলে যা পরিণতি হওয়ার, তাই হবে।’
একইসঙ্গে সেদিন বিচারপতিরা আরও বলেন,কমিশনকে বিশ্বাস করতে না পারলে তো গোটা নিয়োগই বাতিল করা উচিত। এদিকে নতুন একটিও বিতর্ক এখন মাথাচাড়া দিয়েছে। দেশে এখন নির্বাচন চলছে। এই মামলার সঙ্গে জড়িত ছিলেন একসময় কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি এখন ভোট ময়দানে। বিজেপির হয়ে ভোটে লড়াই করছেন তিনি। আবার এই মামলায় প্রথম থেকেই রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস অস্বস্তিতে রয়েছে। এই অবস্থায় প্রশ্ন উঠছে, দেশে নির্বাচন চলাকালীন সময়ে এই গুরুত্বপূরড়ণ মামলার রায় কী বাংলার বুকে সরাসরি রাজনীতির এবং নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে? অনেকেই কিন্তু মনে করছেন, মামলার রায় রাজ্য সরকার বা রাজ্যের শাসক দলের কাছে অস্বস্তিসূচক হয়ে উঠলে তা নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে। কারণ নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে তৃণমূল তথা রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে বারেবারেই সরব হতে দেখা গিয়েছে বিরোধীদের। মামলার রায়ে ভোটের বাজারে বিরোধীদের পালে হাওয়া দিতেই পারে।