নিজস্ব প্রতিনিধি: প্রায় ১০ বছরের রাজত্বপাট। কিন্তু কী পেল ভারত? কীই বা পেল বাংলা(Bengal)? একুশের ভোটে ঘাড় ধাক্কা খেয়ে এখন হাতিয়ার হয়েছে বাংলার মানুষের পেটে লাথি মারা। একের পর এক কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা আটকে রাখা। কিন্তু তাতেও কী ২৪’র ভোটে জয়ের মুখ দেখা যাবে? বাংলার ৬০ শতাংশ বুথেই তো নেই বিজেপির কোনও সংগঠন। একুশের ভোটের পরে আর কোনও নির্বাচনে আসেনি জয়। দল ছাড়ছেন সাংসদ থেকে বিধায়ক। বসে গিয়েছেন দলের আদি নেতা থেকে কর্মীরা। একের পর এক সভায় নেই ভিড়। তবুও চলছে বেলাগাম আত্মপ্রচার। সেই প্রচারে আবার সামিল না হলে নেমে আসছে ‘ফতোয়া’। দেশের প্রধানমন্ত্রীর আত্মপ্রচারের প্রবণতাকে হাতিয়ার করেই ফের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) সরকারকে প্যাঁচে ফেলার চক্রান্ত করছে কেন্দ্রের সরকার। তাই নেমে এসেছে নয়া নির্দেশ। শহরের বুকে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার কাজ হলে যে বাড়ি নির্মাণ হবে সেখানে লাগাতেই হবে Pradhan Mantri Awas Yojana-Urban’র Logo। না মানলে আসবে না টাকা। কার্যত এই নির্দেশকে ‘ফতোয়া’ হিসাবেই দেখছে নবান্ন।
শহুরে আবাস যোজনায় গরিব মানুষের বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার প্রকল্পে রাজ্য সরকারেরই বেশি টাকা খরচ হয়। অথচ, কেন্দ্রের ‘ফতোয়া’, এই প্রকল্পে তৈরি হওয়া প্রত্যেকটি বাড়িতে Pradhan Mantri Awas Yojana-Urban’র Logo লাগাতে হবে। শর্ত না মানলে বন্ধ হবে কেন্দ্রের বরাদ্দ। গ্রামীণ এলাকায় আবাস যোজনা প্রকল্পে ১১ লক্ষ বাড়ি তৈরির অনুমোদন দিলেও এখনও টাকা ছাড়েনি নরেন্দ্র মোদির(Narendra Modi) সরকার। তার মধ্যেই রাজ্যের পুরসভা এলাকার আবাস প্রকল্প নিয়ে নয়া শর্ত জারি করেছে মোদি সরকার। অনেকেই মনে করছেন, ২৪’র ভোটের আগে সর্বত্র মোদির প্রচার নিশ্চিত করতেই এমন শর্ত আরোপ করা হয়েছে। তবে নবান্ন সূত্রে খবর, রাজ্য সরকার এক্ষেত্রে পিছু হটছে না। শহর এলাকায় গরিবের বাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে তারা যে কেন্দ্রের তুলনায় বেশি টাকা খরচ করছে, তা পাল্টা তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
নবান্নের আধিকারিকদের দাবি, Pradhan Mantri Awas Yojana-Urban’র এক একটি বাড়ি তৈরির জন্য কেন্দ্র দেয় দেড় লক্ষ টাকা। রাজ্য দেয় ১ লক্ষ ৯৩ হাজার টাকা। উপভোক্তাকে দিতে হয় ২৫ হাজার টাকা। এছাড়া রাস্তা, নিকাশির মতো পরিকাঠামো গড়ে দিতে খরচ প্রায় ৩৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এই খরচের ৫০ শতাংশ দেয় রাজ্য। বাকি ৫০ শতাংশ দেয় সংশ্লিষ্ট পুরসভা। সব মিলিয়ে রাজ্যকে এক-একটি বাড়ির জন্য যা খরচ করতে হয়, তাতে শুধু প্রধানমন্ত্রীর নাম লেখা লোগো লাগানোর নিদান কার্যত যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোর চূড়ান্ত পরিপন্থী। তাই রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এক-একটি বাড়ির জন্য কাকে কত টাকা খরচ করতে হচ্ছে, তা দেওয়া থাকবে লোগোর সঙ্গে।
এই প্রসঙ্গে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, ‘ওরা লোগো লাগানোর শর্ত দিয়েছিল। আমরা যেভাবে লোগো লাগাতে চাইছি, তা কেন্দ্রকে জানানো হয়েছে। রাজ্যের প্রস্তাব মেনে নিয়েছে তারা। তাই এই খাতের টাকা ওরা দিয়ে দেবে বলেই আমরা ধরে নিচ্ছি।’ প্রসঙ্গত, রাজ্যের পুরসভা এলাকায় ইতিমধ্যে এই প্রকল্পের অধীনে আড়াই লক্ষের বেশি বাড়ি তৈরি হয়েছে। কাজ চলছে আরও আড়াই লক্ষ বাড়ির। সূত্রের খবর, সম্প্রতি রাজ্যকে কেন্দ্র একটি ‘কমপ্লায়েন্স রিপোর্ট’ জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয়। কেন্দ্রের দেওয়া সমস্ত শর্ত মানা হচ্ছে কি না, জানাতে বলা হয় রাজ্যকে। এই রিপোর্ট জমা পড়াতেই আগামী এক মাসের মধ্যে পরবর্তী কিস্তির টাকা পাওয়ার আশা করা হচ্ছে।