নিজস্ব প্রতিনিধি: রাজ্যের সরকারি এবং সরকার পোষিত স্কুলে SSC’র মাধ্যমে শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতির(School Teachers Recruitment Scam) ঘটনায় এদিন চাঞ্চল্যকর রায় দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের(Calcutta High Court) স্পেশ্যাল ডিভিশন বেঞ্চ। দেশের শীর্ষ আদালতের নির্দেশে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি মহম্মদ সাব্বির রশিদিকে নিয়ে সেই স্পেশ্যাল ডিভিশন বেঞ্চ গঠিত হয়েছিল। সেই বেঞ্চই এদিন রায় দিয়ে ২৫,৭৫৩জনের চাকরি কেড়ে নিয়েছে। এদিন বেঞ্চ মোট ৪টি প্যানেল বাতিল করেছে। এই ৪টি প্যানেল হল ২০১৬ সালের নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশ শ্রেনীর শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ২টি প্যানেল এবং Group-C ও Group-D’র শিক্ষাকর্মীদের ২টি প্যানেল। কিন্তু রায়ে এটাও বলা হয়েছে, ক্যান্সারে আক্রান্ত সোমা দাসের(Soma Das) চাকরি বহাল থাকছে মানবিক কারণে। আর সেই বিষয়টিকে নিয়েই এখন প্রশ্ন তুলছেন কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবীদের(Lawyers) একাংশ। তাঁদের দাবি, যেখানে পুরো ৪টি প্যানেল দুর্নীতির অভিযোগে বাতিল হয়েছে, সেখানে সোমার চাকরি থাকে কীভাবে? শুধুমাত্র মানবিক কারণে কী এই চাকরি বহাল রাখা যায়? যাদের চাকরি গিয়েছে তাঁদের বাড়িরও অনেক সদস্য ক্যান্সারে আক্রান্ত। তাহলে মানবিক কারণে তাঁদের চাকরি কেন বহাল রাখা হল না!
যে সোমা দাসকে নিয়ে এই প্রশ্ন উঠেছে, তিনি বীরভূম জেলার রামপুরহাট মহকুমার নলহাটির বাসিন্দা। ২০১৯ সাল থেকে চাকরির দাবিতে আন্দোলনে পথে নামেন তিনি। আর পাঁচজনের মতোই হকের দাবিতে লড়ছিলেন। এরইমধ্যে এক সংবাদমাধ্যমে তিনি জানান, তাঁর লড়াই শুধু চাকরির জন্যই নয়, তাঁকে লড়াই করতে হচ্ছে তাঁর শরীরে বাসা বাঁধা ক্যান্সারের সঙ্গেও। সোমার সেই কথা কানে যায় কলকাতা হাইকোর্টের তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের। তিনিই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে পদক্ষেপ করেন। সোমাকে শিক্ষকতার চাকরির বদলে অন্য সরকারি চাকরির প্রস্তাব দেন। তবে সোমা তাতে রাজি হননি। এরপরই হাইকোর্টের তরফে নবান্নে অনুরোধ জানানো হয়। মানবিক দিক খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিতে বলে কোর্ট। শিক্ষা দফতর এসএসসিকে জানায়। এরপরই ২০২৩ সালের ১২ মে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভায় সোমা দাসের চাকরির বিষয়টিতে সিলমোহর পড়ে। নিয়োগ পান সোমা। এদিন সেই সোমার চাকরি বহাল রাখার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি মহম্মদ সাব্বির রশিদি বেঞ্চ। আর সেই নির্দেশই এখন প্রশ্নের মুখ।
প্রশ্ন কোথায়? আইনজীবীদের একাংশের দাবি, সোমার চাকরি ১ দিনে হয়নি। কলকাতা হাইকোর্টের অনুরোধে রাজ্যের শিক্ষা দফতর SSC-কে জানিয়েছিল বিষয়টি মানবিকতার খাতিরে দেখতে। তার জেরেই রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে সোমা দাসের চাকরির বিষয়টিতে সিলমোহর পড়ে। এখন রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকের এই সিদ্ধান্ত যদি সঠিক হয় তাহলে পদ বাড়িয়ে নিয়োগ দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত রাজ্য মন্ত্রিসভা নিয়েছিল তাকে আদালত কীভাবে অবৈধ আখ্যা দিচ্ছে। যদি সেটা অবৈধ হয় তাহলে সোমার নিয়োগও অবৈধ। শুধুমাত্র মানবিক কারণে তো কাউকে চাকরি দেওয়া যায় না। আর একা সোমা ক্যান্সারে আক্রান্ত নয়। এদিন যে ২৫,৭৫৩জনের চাকরি কেড়ে নেওয়া হল কলমের এক খোঁচায় তাঁদের বাড়িরও অনেক সদস্য ক্যান্সারে আক্রান্ত। সোমা মানবিক কারণে ছাড় পেলে এরা ছাড় পাবেন না কেন? একা সোমার প্রতিই আদালতের এই পক্ষপাতিত্ব কেন? এই সব প্রশ্ন যে শুধু মুখে মুখে ঘুরছে তাই নয়, এদিনের রায়কে সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে যারা তাঁরাও শীর্ষ আদালতে সোমার এই পক্ষপাতিত্বের বিষয়টি তুলে ধরবেন। উল্লেখ্য, এদিনের রায়কে রাজ্য সরকারের পাশাপাশি School Service Commission, মধ্যশিক্ষা পর্ষদ এবং চাকরিহারা একযোগে সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ জানাতে চলেছে।