নিজস্ব প্রতিনিধি: যে ইস্যুকে ঘিরে বাংলার শাসকদলকে সব থেকে বেশি চেপে ধরার পরিকল্পনা ছিল, সেই ইস্যুই এখন ব্যুমেরাং হয়ে প্রতিনিয়ত বিঁধে চলেছে বঙ্গ বিজেপিকে(Bengal BJP)। তাই সেই ইস্যু থেকে রাজনৈতিক ফায়দা তোলা তো দূরের কথা, উল্টে কার্যত পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে, একথা একান্ত আলাপচারিতায় স্বীকার করেই নিচ্ছেন বাংলার পদ্মনেতারা। তাঁদের ধারনার বাইরে ছিল, সন্দেশখালির(Sandeshkhali) সাজানো গোছানো ঘটনা তথা পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র এভাবে ভোটবাজারে ফাঁস হয়ে যাবে। পদ্মশিবিরের নেতারা প্রকাশ্যে যতই বড় মুখে দাবি করুন না কেন যে, সন্দেশখালিকে ঘিরে এখন নতুন করে সামনে আসা স্ট্রিং ভিডিও(String Operation Video) ও মহিলাদের স্বীকারোক্তির(Confessions of Women) জেরে বিজেপির কিছু হবে না, ভোটবাজারে তার কোনও প্রভাব পড়বে না, বাস্তবে তাঁরা নিজেরাই কিন্তু তাতে বিশ্বাস করছেন না। বরঞ্চ তাঁরা চিন্তিত, উদ্বেদিত, এই ঘটনাকে ঘিরে। উদ্বেগ বাড়ছে দলের নেতাদেরই গ্রেফতারির সম্ভাবনা(Possibility of Arrest) ঘিরে।
সন্দেশখালির ঘটনা নিয়ে আদালতের নির্দেশে যতই সিবিআই তদন্ত চলুক না কেন, কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের গদি ২৪’র ভোটে উল্টে গেলে এই তদন্ত কার্যত বিশবাঁও জলে চলে যাবে। উল্টে এখন রাজ্য পুলিশ যেভাবে স্ট্রিং অপারেশন আর মহিলাদের স্বীকারোক্তির ঘটনা নিয়ে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে তাতে আগামী দিনে বেশ কিছু পদ্মনেতার গ্রেফতারির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সভ থেকে বড় কথা এই প্রথম বাংলার বুকে বিজেপির বিরুদ্ধে রাজ্যের বাসিন্দারাই স্বীকার করছেন যে কীভাবে নোংরা কদর্যময় রাজনীতি তথা ষড়যন্ত্র করা হয়েছে সন্দেশখালিকে ঘিরে। যারা শাহজাহান বাহিনীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের বা গণধর্ষণের অভিযোগ করেছিলেন পুলিশের কাছে, তাঁরা এখন নিজেরাই স্বীকার করছেন, কীভাবে মাত্র ২ হাজার টাকার বিনিময়ে তাঁদের দিয়ে এই সব নোংরা অভিযোগ করানো হয়েছে। আর এই সবটাই করিয়েছে বিজেপি, দাবি এমনটাই তাঁদের। একই সঙ্গে স্ট্রিং অপারেশনে যে দুইজন বিজেপ নেতার স্বীকারোক্তি সামনে এসেছে তাতে এটা পরিষ্কার এই ঘটনার পিছনে বিজেপির কোন কোন নেতার হাত রয়েছে। সব থেকে বড় কথা বাংলার বুকেই শুধু এই ঘটনা নয়, দেশের বুকেই সন্দেশখালির ঘটনা এখন বিজেপির মুখ পোড়াচ্ছে, দলের ভাবমূর্তি মাটিতে মিশিয়ে দিচ্ছে, সেকথা মানছেন বাংলার পদ্মনেতারাই।
সমস্যা হানা দিচ্ছে এখন অন্যভাবেও। বিজেপি কথায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে পাতা ফাঁদে পা দিয়ে সন্দেশখালির যে সব মহিলারা পুলিশের কাছে ধর্ষণের অভিযোগ জানিয়েছিলেন, তাঁরা এখন সামাজিক ভাবে কার্যত একঘরে হয়ে পড়েছেন। প্রতিবেশীরা তো বটেই, গ্রামের লোকেরা পর্যন্ত তাঁদের সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে। এমনকি কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাড়ির লোকেরা পর্যন্ত তাঁদের সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে। এখন ওই সব মহিলাদের দাবি, তাঁদের পড়াশোনা সামান্য। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তাঁদের দিয়ে বিজেপি সাদা কাগজের সই করিয়ে নিয়েছেন পদ্মনেতারা। তাঁরা জানতেনও না সেই সাদা কাগজে একটা সই তাঁদের জীবনে কত বড় দুর্যোগ ডেকে আনবে। তাঁরা জানতেন না সেই সাদা কাগজে তাঁদের হয়ে পুলিশের কাছে ঠিক অভিযোগ করা হবে। আর যখন তাঁরা জানতে পারছেন যে, সেই সাদা কাগজে তাঁদের হয়ে শাহজাহান বাহিনীর বিরুদ্ধে গণধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে, তখন গ্রামের লোকেরা, পাড়া প্রতিবেশীরা মায় পরিবারের লোকেরা পর্যন্ত তাঁদের একঘরে করে দিয়েছে। এই বিপর্যয় তাঁরা কীভাবে কাটিয়ে উঠবেন তা তাঁরা নিজেরাও জানেন না। আর এই ঘটনা এখন দাগ ফেলে দিচ্ছে বাংলার মহিলা ভোটারদের মধ্যেও। যার দাম পদ্মশিবিরকে কড়ায়গন্ডায় চোকাতে হবে বলেই মনে করছেন পদ্মনেতারা।
একইসঙ্গে এবার বিজেপির নেতারা ভিন্ন প্রশ্নের মুখেও পড়ছেন যত্রতত্র। উনিশের লোকসভা নির্বাচনের আগে থেকে বাংলার বুকে কার্যত ধারাবাহিক ভাবে বিজেপির কর্মীদের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে গিয়েছে। বেশ কিছু ক্ষেত্রে সেই সব মৃত্যুর ঘটনায় আদালত থেকে সিবিআই তদন্তের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কোনও প্রমাণ না থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র অভিযোগ ও সন্দেহের ভিত্তিতে অনেক তৃণমূল নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে, জেলে পোরা হয়েছে, মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই সব ঘটনার সময় তৃণমূল কিন্তু বার বার অভিযোগ করে এসেছে যে, বিজেপির তরফে মিথ্যা অভিযোগ তোলা হচ্ছে। এমনকি এই অভিযোগও উঠেছে যে, বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই পদ্মকর্মীকে খুন করে পল্ট সাজিয়ে তাকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক খুন হিসাবে ব্যবহার করেছে। আজ সন্দেশখালির ঘটনা কিন্তু এই সব ক্ষেত্রে তৃণমূলের অভিযোগকেই মান্যতা দিয়ে দিয়েছে। যারা মা-বোনকে ভুল বুঝিয়ে ভুয়ো ধর্ষণ বা গণধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করাতে পারে, দেশের মানুষের কাছে নারীর সম্মান বিক্রি করে দিতে পারে, তাঁরা নিজেদের দলের কর্মীকে খুন করে তৃণমূলের নামেও দোষ চাপিয়ে দিতে পারে, এই বোধশক্তি এখন বাংলার মানুষের মধ্যে চলে এসেছে।