নিজস্ব প্রতিনিধি: বিজেপি(BJP) নেতাদের মুখে কথায় কথায় বাংলাকে আক্রমণের ঝাঁঝ ফুটে ওঠে। বাংলার সমাজ, সভ্যতা, সংস্কৃতি, কৃষ্টি নিয়ে আক্রমণ চালাবার পাশাপাশি তাঁরা থেকে থেকেই বাংলার(Bengal)নামে ভুলভাল তথ্য তুলে ধরে বাজারগরম করার চেষ্টা করেন। অথচ কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন মোদি সরকারের(Modi Government) নানান মন্ত্রক নানান সময়ে যে রিপোর্ট পেশ করে তাতেই ধরা পড়ে বিজেপির নেতারা মুখে যা বলেন বাস্তব তার সম্পূর্ণ বিপরীত। এই যেমন ধরুন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক সম্প্রতি একটি রিপোর্ট পেশ করেছে। সেই রিপোর্টে বলা হয়েছে, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে বাংলার ৬৮ হাজার ৭৬৪টি স্বনির্ভর গোষ্ঠী(Self-help Groups) প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা ঋণ(Loan) পেয়েছে। অথচ এর ধারে কাছে নেই মোদিবাবার গুজরাত(Gujrat) কী যোগীবাবার উত্তরপ্রদেশ(Uttar Pradesh)। উত্তরপ্রদেশে এবং গুজরাতে এই সময়ে মাত্র ১ হাজার ৬১৯ ও ১ হাজার ৫৭৯টি স্বনির্ভর গোষ্ঠী ঋণ পেয়েছে। শুধু তাই নয়, ঋণ মেটানোর ক্ষেত্রেও ওই দুই রাজ্যের থেকে ভালো পরিস্থিতিতে রয়েছে বাংলা। এমনকী বাংলায় ঋণ খেলাপের ঘটনা জাতীয় গড়ের থেকে কম।
দিন যত গড়াচ্ছে ততই প্রকট হচ্ছে বাংলার প্রতি কেন্দ্রের বঞ্চনার ছবি, তাচ্ছিল্যের ছবি। তবুও তারই মধ্যে বাংলা বার বার করে একাধিক বিষয়ে দেশের মধ্যে সেরা রাজ্য হিসাবে উঠে আসছে। কেন্দ্রের গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের ‘জাতীয় গ্রামীণ জীবন জীবিকা মিশন’-এর তথ্য বলছে, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে এখনও পর্যন্ত বাংলায় ৬৮ হাজার ৭৬৪টি স্বনির্ভর গোষ্ঠী প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা ঋণ পেয়েছে। সামগ্রিক অর্থবর্ষ শেষ হলে হয়তোদেখা যাবে তা ১৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে। গত অর্থবর্ষে স্বনির্ভর গোষ্ঠীদের ১৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার টার্গেট নেওয়া হয়েছিল। যদিও সেই লক্ষ্যমাত্রা ছোঁয়া যায়নি। বছর শেষে তা ১৩ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়ায়। মূলত কোভিডের কারণেই সেই ধাক্কা এসেছিল। এবার যেহেতু পরিস্থিতি ভাল আছে তাই মনে করা হচ্ছে এবারে ঋণ প্রদানের পরিমাণ ১৫ হাজার কোটি টাকার আশেপাশে থাকবে। আর এই তথ্যই বলে দিচ্ছে বাংলার এই স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির হাত ধরে বাংলার গ্রামীণ এলাকার অর্থনীতি কতটা সুঠাম হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
যে বিজেপি’র নেতারা কথায় কথায় বলেন, বাংলা সব দিক থেকে পিছিয়ে দেখা যাচ্ছে সেই বিজেপি’র বহুল চর্চিত ডবল ইঞ্জিনের সরকার রয়েছে যে সব রাজ্যের সেই সব রাজ্যগুলির থেকে নানান বিষয়ে ঢের এগিয়ে রয়েছে বাংলা। স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে ও সেই ঋণ সুদসহ ফেরত দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলা দেশের সেরা রাজ্যে পরিণত হয়েছে। মোদির গুজরাত ও যোগীর উত্তরপ্রদেশ দেখা যাচ্ছে বাংলার থেকে যোজন যোজন কদম পিছিয়ে। আসলে এই পিছিয়ে থাকা বা এগিয়ে থাকার নেপথ্যে কাজ করে ওই সব রাজ্যে ক্ষমতাসীন আঞ্চলিক সরকারের(State Government) সদিচ্ছার বিষয়টি। কেননা, ঋণ পেতে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে ব্যাঙ্কের লিঙ্ক করতে হয়। এই কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হয় রাজ্য সরকারগুলিকে। বাংলায় সেটাই বেশ মন দিয়ে করেন নবান্নের(Nabanna) আধিকারিকেরা। কোভিডকালে গ্রামীণ অর্থনীতি যাতে ভেঙে না পড়ে তার জন্য সেই কাজ আবার বিশেষ গুরুত্ব ও দ্রুততার সঙ্গে করেছেন নবান্নের আধিকারিকেরা। যার ফলে দেখা যাচ্ছে চলতি অর্থবর্ষে প্রথম ৬ মাসের মধ্যেই বাংলার স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি ১০ হাজার কোটি টাকা ঋণ পেয়ে গিয়েছেন। এক একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠী বছরে ১ থেকে দেড় লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ পেতে পারে। দেখা যাচ্ছে দেশের মধ্যে বাংলায় স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির ঋণ খেলাপির ঘটনাও খুব কম। সেখানেও বাংলার এগিয়ে সব রাজ্যের থেকে। অর্থাৎ বাংলাতেই সব থেকে কম ঋণ খেলাপির ঘটনা ঘটেছে।