নিজস্ব প্রতিনিধি: রাজনীতি চিরকালই অঙ্কের আর সম্ভাবনার খেলা। সেই সূত্রেই কেউ আসেন কাছে, কেউ বা যান দূরে। শোভনের গল্পটা অবশ্য বড়ই ভিন্ন। ঝামেলা তাঁর নিজ পরিবারের সঙ্গেই। সেই কারনেই দলের সঙ্গেও তৈরি হয়েছিল দূরত্ব। দলত্যাগও করেছেন বৈশাখীর হাত ধরে। কিন্তু যেখানে গিয়েছিলেন সেই বিজেপিতে কদর পাননি এই দম্পতি। তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় বার বার ভাইরাল হয়েছে শোভন-বৈশাখীর প্রেমগাথা। সেই শোভন-বৈশাখী আবারও ফিরছেন তৃণমূলের(TMC) বৃত্তে। বুধবার নবান্নে গিয়ে তাঁরা শুধু যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) সঙ্গে দেখা করেছেন তাই নয়, তাঁর সঙ্গে প্রায় ১ ঘন্টা বৈঠকও করেছেন। সূত্রে জানা গিয়েছে সেই বৈঠকের ব্যবস্থা করে দেন কলকাতার মেয়র ও রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তবে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য যা মিলেছে তৃণমূল সূত্রে তা হল, শোভন চট্টোপাধ্যায়কে(Sovon Chatterjee) আর বেহালার(Behala) রাজনীতিতে কোনও ভাবেই ফেরানো হবে না। পরিবর্তে তাঁকে মানিকতলা(Maniktala) বিধানসভা কেন্দ্র থেকে প্রার্থী করা হতে পারে। তবে এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই।
শোভনের রাজনীতি বরাবরই তৃণমূল কেন্দ্রীক। কার্যত তৃণমূল নেত্রীর চারপাশে চিরকাল যে ত্রয়ীকে ছায়ার মতো দেখা গিয়েছে তাঁদের এখন শোভন। বাকি দুইজনের একজন ফিরহাদ ববি হাকিম ও অপরজন রাজ্যের পূর্ত ও ক্রীড়া দফতরের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। শোভন-ববি-অরূপ এই তিন নেতা বরাবরই মমতার সুনজরে থেকেছেন। দলে তাঁদের গুরুত্বও কিছু কম নয়। খালি মাঝখানে শোভন গিয়েছিলেন দলছুট হয়ে। শোভনের রাজনীতির ভিত্তিভূমি কিন্তু বেহালা। তা সে কলকাতা পুরনিগমের ১৩১ নম্বর ওয়ার্ড হোক কী বেহালা পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্র। এখানেই একটা সময় দাপিয়ে বেড়িয়েছেন শোভন। সেই সঙ্গে হয়েছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী ও কলকাতার মহানাগরিকও। কিন্তু বৈশাখীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়ানোর জন্য নিজের পরিবারের সঙ্গে বিরোধ বাঁধে শোভনের। বেহালার বাড়ি ছেড়েও চলে যান তিনি। ডিভোর্স কেস ফাইল করেন স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। তাঁর নতুন ঠিকানা এখন গোলপার্ক। সেখানই বৈশাখীর সঙ্গে তাঁর সংসারযাপন। তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে গিয়েও সেখানে থিতু হতে পারেননিও মমতার ‘কানন’। সেই ‘কানন’কেই এবার তৃণমূলে সম্ভবত ফিরিয়ে নিতে চলেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো।
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, দ্রুতই ‘কানন’ ফিরতে চলেছেন জোড়াফুলে। তবে এবারে আর তাঁকে বেহালার রাজনীতিতে ফিরতে দেওয়া হবে না। বেহালার রাজনীতি থেকে দূরেই রাখা হবে তাঁকে। কারণ অবশ্যই রত্না চট্টোপাধ্যায়। কেননা শোভনের অবর্তমানে রত্নাই এখন ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এবং বেহালা পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক। শোভনকে রাজনৈতিক পুনর্বাসন দিতে রত্নাকে ক্ষতিগ্রস্থ করতে চান না মমতা। তাই রত্নাকে বেহালায় রেখে শোভনের জন্য নয়া রাজনৈতিক জমি খোঁজা হচ্ছে। আর তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, শোভনকে মানিকতলা বিধানসভা কেন্দ্রে প্রার্থী করতে পারে তৃণমূল। রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী সাধন পান্ডের মৃত্যুর পরে এই বিধানসভা কেন্দ্র শুধু যে বিধায়ক শূন্য তাই নয়, রাজনৈতিক ভাবেও অভিভাবক শূন্য। সেই শূন্যস্থান পূরণেই মাঠে নামানো হতে পারে শোভনকে। তবে এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন মমতাই। গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কেও।