কৌশিক দে সরকার: রাজ্যের বিরোধীরা গেল গেল রব তুলে দিয়েছে। সেই সঙ্গে কিছু সংবাদমাধ্যমও চিল চিৎকার জুড়ে দিয়েছে। তাঁদের দাবি, বাংলায়(Bengal) নাকি সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হয়েছে পঞ্চায়েত নির্বাচনের(Panchayat Election) আবহে। কিন্তু তাঁরা ভুলে যাচ্ছেন বাম জমানায় কী হয়েছিল? ২০০৩ সালে রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচনে মারা গিয়েছিলেন ৭৬জন। সেটাই এখনও পর্যন্ত বাংলার পঞ্চায়েত নির্বাচনের ইতিহাসে সব থেকে রক্তাক্ত অধ্যায়। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে এবারে সংবাদমাধ্যমের দাবি অনুযায়ী মারা গিয়েছেন মাত্র ১৮জন। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, এই পরিসংখ্যানের দিকে না তাকিয়ে যারা আজ চিল চিৎকার জুড়ে দিয়েছে যে পঞ্চায়েতের ক্ষমতা দখলের জন্য শাসক দল সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে, তাঁদের পাল্টা প্রশ্ন করতে ইচ্ছা করে, ‘আপনারা কী ২০০৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনটা বেমালুম ভুলে গিয়েছেন নাকি আজ ইচ্ছাকৃত ভাবে নিজেরা রাজনীতি করছেন?’
আরও পড়ুন হাইকোর্টে ধাক্কা শুভেন্দুর, বহাল গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ
পরিসংখ্যান বলছে, বাম জমানায় ২০০৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে যে ৭৬জন মারা গিয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে ৪৫জন মারা গিয়েছিলেন শুধু মুর্শিদাবাদ জেলাতেই। মৃতদের মধ্যে আবার ৩১জন ছিলেন সিপিআই(এম)(CPIM) কর্মী। ১৯জন ছিলেন কংগ্রেস(INC) কর্মী। ৮জন করে কর্মী ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেস(TMC) ও বিজেপির(BJP)। ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনও হয়েছিল বাম জমানার মধ্যেই। সেই নির্বাচনেও মারা গিয়েছিলেন ৩৬জন। তৃণমূলের জমানায় প্রথমবার পঞ্চায়েত নির্বাচন হয় ২০১৩ সালে। সেই বছর রাজ্য সরকারের সঙ্গে যুদ্ধ করে তৎকালীন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডে কেন্দ্রীয় বাহিনী এনে ভোট করিয়েও গ্রাম বাংলাকে রক্তে স্নান করার থেকে আটকাতে পারেননি। ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটে মারা গিয়েছিলেন ৩৯জন। ২০১৮ সালে সেই সংখ্যাতা আরও কমে দাঁড়িয়ে হয় ২৯। এঁদের মধ্যে ১৩জন ছিলেন পূর্ব মেদিনীপুর, নদিয়া দুই ২৪ পরগনা ও মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা। অর্থাৎ পঞ্চায়েত ভোটে রক্তস্নানের জন্য তৃণমূল বা বর্তমানের সরকার দায়ী নয়। কেন্দ্রীয় বাহিনী আসুক বা না আসুক, রক্ত ঝরবেই, জীবন যাবেই।