নিজস্ব প্রতিনিধি: আগে ছিলেন তৃণমূলে। এখন ফিরতে চাইছেন তৃণমূলেই। মাঝে খালি দাদার হাত ধরে পা বাড়িয়েছিলেন পদ্মের ঘরে। তার জেরে তাঁর হাতে থাকা তৃণমূলের কার্যালয় রাতারাতি বদলে গিয়েছিল পদ্মের নির্বাচনী কার্যালয়ে। সেই তিনি আবারও ফিরে আসতে চাইছেন দিদির সংসারে, আর সেটাও দাদাকে বিসর্জন দিয়ে। আর তাঁর এই প্রত্যাবর্তনমুখী মনোভাবের জন্যই বিজেপির নির্বাচনী কার্যালয় আবারও পরিণত হয়েছে তৃণমূলের কার্যালয়ে। এই ঘটনা বাংলার কোনও প্রত্যন্ত এলাকার নয়, এ ঘটনা খাস অধিকারী তালুকের ঘটনা। মানে পূর্ব মেদিনীপুরের। সেখানকার অন্যতম মহকুমা শহর এগরাতে এই ঘটনা ঘটেছে। এগরার তৃণমূল নেতা জয়ন্ত সাউ একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে শুভেন্দু অধিকারীর হাত ধরে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। এখন তিনি সেই বিজেপি ছেড়েই আবারও তৃণমূলেই ফিরতে চাইছেন। সঙ্গে সঙ্গে তাঁর হাতে থাকা শহরের সব বিজেপির কার্যালয় এখন তৃণমূলের কার্যালয় হয়ে গিয়েছে। তবে একটা সময় এই সব কার্যালয় তৃণমূলেরই ছিল। এখন গেরুয়া শিবিরের হাত থেকে কার্যত তাঁদের পুনঃরুদ্ধার ঘটলো।
জয়ন্ত সাউ বরাবরই অধিকারী পরিবারের ঘনিষ্ঠ নেতা হিসাবেই জেলার রাজনীতিতে পরিচিত ছিলেন। একুশের বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে তিনি শুভেন্দু অধিকারীর হাত ধরে যোগ দিয়েছিলেন বিজেপিতে। শোনা যাচ্ছে, সেই সময় নাকি শুভেন্দু জয়ন্তকে কথা দিয়েছিলেন বিজেপি যাতে তাঁকে এগরা থেকে টিকিট দেয় সেটা তিনি দেখবেন। কিন্তু জয়ন্তবাবুকে বিজেপি এগরা কেন, জেলার কোনও আসনেই প্রার্থী করেন। জয়ন্তবাবু যখন তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন তখন তাঁর হাতে থাকা তৃণমূলের কার্যালয়গুলির দখল নিয়েছিল বিজেপি। সেই সব পার্টি অফিস রাতারাতি বিজেপির নির্বাচনী কার্যালয়ে পরিণত হয়। কার্যালয়গুলির রঙ সবুজ থেকে বদলে দেওয়া হয় গেরুয়ায়। এখন জয়ন্তবাবু আবার তৃণমূলে ফিরতে চাওয়ায় সেই সব কার্যালয়ের রঙই শুধু বদলে যায়নি, তৃণমূল আবারও ওই সব কার্যালয় নিজেদের কাছে ফিরে পেয়েছে। আর এই ঘটনাই চোখে আঙুল দিয়ে বলে দিচ্ছে, নিজেদের খাস তালুকেই এখন আর দাপট নেই অধিকারীদের। পায়ের জমি সেখানে ক্রমশই সরে সরে যাচ্ছে। আগামী দিনে জেলার রাজনীতিতে তাঁদের কোনও অস্তিত্ব থাকে কিনা সেটাই সন্দেহ।
বিজেপি-ত্যাগী নেতা জয়ন্ত সাউ এদিন জানিয়েছেন, ‘দাদার কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে বিজেপি গিয়েছিলাম। আমাকে বলা হয়েছিল এগরাতে প্রার্থী করা হবে। কিন্তু বিজেপি আমাকে কাছেও টানেনি, প্রার্থীও করেনি। এগরা শহরে আমার পার্টি অফিসের রং বদলে দাদার সহায়তা কেন্দ্র করেছিলাম। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কোনও দিনই মন থেকে সরিয়ে দিতে পারেনি। দিদি যে সমস্ত কাজকর্ম করছেন সাধারণ মানুষের জন্য তার কোনও তুলনা হয় না। তাই আমি মন থেকে যাকে গ্রহণ করেছি তার পথে চলার জন্যই আমার পার্টি অফিসের রং বদল করেছি।’ তবে ঘটনা হচ্ছে জয়ন্ত সাউকে দলে ফেরানো নিয়ে তৃণমূলের অন্দরেই বেশ কিছু নেতার আপত্তি রয়েছে। এগরা পুরসভার পুরপ্রশাসক তথা তৃণমূল নেতা স্বপন নায়েক জানিয়েছেন, ‘ওনারা ভেবেছিলেন লোকসভার নিরিখে যেহেতু এখানে বিজেপি এগিয়ে আছে তাই ওনারাই এখানে জয়লাভ করবেন। কিন্তু পরবর্তীকালে দেখা গেল তার ঠিক উল্টো ঘটল। তারপর থেকেই উনি বিভিন্ন জায়গায় তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন। নিজের পার্টি অফিসের রং ফের বদল করেন। আমাদের জেলা সভাপতি বিচক্ষণ মানুষ। উনিই এই বিষয়ে বিবেচনা করবেন। তবে এগরার মানুষ জানে এই সমস্ত মানুষের আসল চেহারা, এদের কোনও দাম নেই।’