নিজস্ব প্রতিনিধি: মর্মান্তিক ঘটনা বলেও বড় কম বলা হয়। বরঞ্চ এই ঘটনা তুলে ধরল মানুষ কতটা নৃশংস হতে পারে নিজ স্বার্থে আঘাত লাগলে। মায়ের কোল থেকে ৬ মাসের দুধের শিশুকে কেড়ে নিয়ে তাঁর সামনেই ওই শিশুকে মাটিতে আছড়ে মারার ঘটনা ঘটল হুগলি জেলার সদর মহকুমার পাণ্ডুয়ায়। ঘটনার জেরে ওই শিশু মারা যাওয়ার পরে অভিযুক্তদের নামে থানায় অভিযোগ দায়ের পুলিশের দাবি এই ঘটনায় কোনও অভিযোগও দায়ের হয়নি। সব থেকে বড় বিষয় যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই পরিবারের বিবাদে এই ৬ মাসের শিশুর মৃত্যুর ঘটনা ঘটল তা নিতান্তই তুচ্ছ। ছাগলে ধান খেয়েছে, এই অভিযোগকে ঘিরেই বিবাদ যাতে জীবন গেল এক দুধের শিশুর।
জানা গিয়েছে, পাণ্ডুয়া ব্লকের শিখিরা চাঁপতা গ্রাম পঞ্চায়েতের হরিদাসপুর এলাকার বাসিন্দা বাপি সোরেন ও আরতি সোরেনের প্রতিবেশী হিসাবে বসবাস করেন নাসিম আলি ও মফিজা খাতুন। নাসিমের আবার বেশ কিছু ছাগল রয়েছে। সেগুলো দিনের বেশির ভাগ সময়েই ছাড়া থাকে। তার জেরে ছাগলগুলি অনেকের বাড়িতেই যখন তখন ঢুকে যায়। তা নিয়ে নাসিমের সঙ্গে নিত্যদিনই বিবাদ বাঁধে এলাকাবাসীর। বাপি ও আরতি সোরেনের বাড়িতেও সেই ছাগল ঢুকে পড়ে। তা নিয়ে তাঁদের বিবাদও হয় মাঝেমধ্যেই। অভিযোগ মঙ্গলবার নাসিমের ছাগল বাপি আর আরতির বাড়িতে ঢুকে ধান খেয়ে নেয়। বাপির অভিযোগ, ছাগল ধান খাচ্ছে দাঁড়িয়ে দেখলেও তা আটকাননি নাসিমের স্ত্রী মাফিজা। ছাগল আটকাতে বলা হলে শুরু হয় দুপক্ষের বচসা। অভিযোগ সেই সময় মাফিজার হাতে ছাগল তাড়ানোর যে লাঠি ছিল তা দিয়েই বাপিকে মারধর শুরু করেন তিনি। আরতি তা আটকাতে যান। তাঁর কোলে ছিল ওই ছ’মাসে দুধের শিশু। অভিযোগ, সে সময় মাফিজা তাঁর কোল থেকে শিশুকে কেড়ে নিয়ে রাস্তায় আছাড় মারেন। তাতেই মারাত্মক চোট লাগে শিশুটির।
দ্রুত শিশুটিকে প্রথমে পান্ডুয়া গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাকে ছেড়েও দেওয়া হয়। কিন্তু রাতেই ফের শিশুটির শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে, শুরু হয় বমি। পরিবারের লোকজন তাকে পান্ডুয়া গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গেলে, চিকিৎসকরা তাঁদেরকে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে যেতে বলেন। চিকিৎসকরা সেই সময়ে জানিয়েছিলেন, ওই শিশুটির মাথায় আঘাত লেগেছে। বুধবার সেই শিশু হাসপাতালে চিকিৎসাদীন অবস্থায় মারা যায়। ঘটনার জেরে বাপি ও আরতি পাণ্ডুয়া থানায় নাসিম ও মাফিজার নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের করলেও এখনও গ্রেফতার হননি তাঁরা। আর তার জেরে এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়েছে। পুলিশের অবশ্য দাবি, তাঁরা কোনও অভিযোগই পাননি। অভিযোগ পেলে গুরুত্ব দিয়ে তা দেখা হবে। আর পুলিশের এই ভূমিকাতেই ক্ষোভ দেখা দিয়েছে এলাকায়।