নিজস্ব প্রতিনিধি: বড়দিনের আগেই বড় খবর। বীরভূম(Birbhum) জেলার সিউড়ি সদর মহকুমার মহম্মদবাজার ব্লকের ঢেউচা-পাঁচামি কয়লাখনি(Deucha Pnachami Coal Mines Project) এলাকায় এবার জমির বিনিময়ে চাকরি(Job in Exchange for Land) প্রদানের কাজে হাত দিতে চলেছে রাজ্যের ক্ষমতাসীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) সরকার। রাজ্য বিধানসভায় দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী নিজেই জানিয়েছিলেন, ঢেউচা-পাঁচামি কয়লাখনি প্রকল্পের জন্য যারা জমি দিয়েছেন তাঁদের রাজ্য সরকারের তরফে সরকারি চাকরি দেওয়া হবে। সেই কথা তিনি রাখছেন। এখনও পর্যন্ত এই প্রকল্পে জমির বিনিময়ে চাকরি পেয়েছেন প্রায় ৮৫০জন। এবার নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, খুব শীঘ্রই রাজ্য সরকার আরও দুটি ধাপে ৬৫০ জন জমিদাতাকে(Landlords) চাকরি দিতে চলেছে। যার জেরে প্রকল্পের মূল কাজ শুরুর আগেই প্রায় ১৫০০জন সরকারি চাকরি পেয়ে যেতে চলেছেন। মুখ্যমন্ত্রী কথা দিলে যে তিনি সেই কথা রাখেন এটাই তার সব থেকে বড় নমুনা।
ঢেউচা-পাঁচামি কয়লা প্রকল্পের একেবারে দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে রাজ্য সরকার। বাসিন্দাদের ‘জমি নিন, চাকরি দিন’- এই দাবিতে সিলমোহর দেওয়ার পথে রাজ্য প্রশাসন। বহু প্রতীক্ষিত ১২ ও ১৩ ধাপের চাকরি দিতে সবরকম প্রস্তুতি হয়ে গিয়েছে। এই দুই ধাপে আরও প্রায় ৬৫০ জন জমিদাতা চাকরি পেতে চলেছেন। ১২ ধাপের আওতায় থাকা সমস্ত জমিদাতাদের জমির কাগজপত্র যাচাই হয়ে গিয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে পরের ধাপের যাচাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। সব থেকে বড় কথা এই প্রকল্পের শুরুতে যেসব ধাক্কা, বাধা-বিপত্তি ছিল, তা কাটিয়ে উঠতে পেরেছে প্রশাসন। বাসিন্দাদের সঙ্গে আলোচনা করেই এই পর্যায়ে আসা সম্ভব হয়েছে।
বিরোধীরা নানারকম ভাবে চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছিল এই প্রকল্পের কাজ আটকাবার জন্য। তার জন্য ঢেউচা-পাঁচামি এলাকার মানুষদের ভুল বোঝাবার চেষ্টার ত্রুটি রাখেনি তাঁরা। তাঁদের বিভ্রান্ত করে এই শিল্পবিরোধী আন্দোলনেও নামিয়ে দিয়েছিল বাম-বিজেপি ও কংগ্রেসের নেতারা। কিন্তু রাজ্য সরকার ধৈর্য্য ধরে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে আলোচনার স্বপক্ষে ধাপে ধাপে এগিয়ে চলেছে প্রকল্প রূপায়ণের জন্য। আর তাতেই মিলছে সাফল্য। স্থিমিত হয়ে গিয়েছে শিল্পবিরোধী আন্দোলন।
জমিদাতা বাসিন্দাদের জন্য জমির মূল্য, চাকরি ও প্রকল্প শুরুর সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। একসঙ্গে এই সমস্ত কাজ বিগত দুই বছরের বেশি সময় ধরে চলছে। তবে এই প্রকল্পকে দাঁড় করানোর মূল কারিগর হিসেবে বীরভূমের জেলাশাসক বিধান রায়ের নাম সবাই একবাক্যে স্বীকার করছেন। তিনি কখনও বাসিন্দাদের সঙ্গে মাঠের আলে দাঁড়িয়ে আলোচনা করেছেন। কখনও স্থানীয় সরকারি অফিসে গিয়ে, কখনও প্রকল্পের অফিসে বসে বাসিন্দাদের সঙ্গে লাগাতার কথা বলেছেন। তাতেই খনি বিরোধী আন্দোলনে অনড় থাকা বিক্ষোভকারীদের ক্ষোভের বরফ সিংহভাগ গলে গিয়েছে।
এখন ওই এলাকায় গেলে দ্রুত চাকরির দাবিদাওয়া শোনা যাচ্ছে। এর আগে ১১ ধাপ পর্যন্ত প্রায় ১০০০ জন জমিদাতা রাজ্য পুলিশের জুনিয়র কনস্টেবল ও গ্রুপ ডি পদে চাকরি করছেন। এরপর ১২ ও ১৩ ধাপের জমিদাতাদের চাকরি দেওয়ার প্রক্রিয়াও শুরু হতে চলেছে। জেলাশাসক বলেন, ১২ ধাপের জমি যাচাই পর্ব শেষ হয়ে গিয়েছে। এরপর ১৩ ধাপের কাজ শুরু হবে। এই দুই ধাপে যেসব জমিদাতার জুনিয়ার কনস্টেবল ও গ্রুপ ডির চাকরি হবে তাঁদের শারীরিক পরীক্ষা, মেডিকেল পরীক্ষাও হয়ে গিয়েছে। এরপর ধাপে ধাপে জমির সিরিয়াল অনুযায়ী রেজিস্ট্রেশন হবে। তারপর জমিদাতাদের চেক ও চাকরির নিয়োগপত্র তুলে দেওয়া হবে।