নিজস্ব প্রতিনিধি: আদালতে কার্যত বিপ্লব ঘটিয়ে রাজ্যের মন্ত্রীকন্যার চাকরি কেড়ে নিয়েছিলেন বাংলারই এক সাধারন ঘরের সাহসী এক কন্যা। সেই ঘটনায় আদালত মন্ত্রীকন্যাকে সেই চাকরি থেকে শুধু যে বরখাস্ত করেছিল তাই নয়, তাঁকে ৪১ মাসের বেতন ফেরত দিতেও নির্দেশ দেয়। পাশাপাশি আদালত সেই চাকরি সেই সাহসী কন্যাকেই দিতে নির্দেশ দেয়। সেই রায়ের জেরেই ওই সাহসী কন্যা বৃহস্পতিবার যোগ দিলেন সরকারি চাকরিতে যার মাসিক বেতন ৪২ হাজার ৬০০টাকা। সেই সাহসী কন্যার নাম ববিতা সরকার(Babita Sarkar)। তিনি আদালতে মামলা করে যার চাকরি কেড়েছিলেন তিনি হলেন রাজ্যের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশচন্দ্র অধিকারীর(Paresh Chandra Adhikari) কন্যা অঙ্কিতা অধিকারী(Ankita Adhikari)।
বৃহস্পতিবার পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ থেকে চাকরির নিয়োগপত্র হাতে নিয়ে সেই চাকরিতে যোগদান করলেন ববিতা। গত সোমবার তিনি তাঁর স্বামীর সঙ্গে সল্টলেটে স্কুল সার্ভিস কমিশনের(SSC) দফতরে এসে সেই নিয়োগপত্র সংগ্রহ করেছিলেন। অঙ্কিতা যে স্কুলে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষিকা ছিলেন সেই কোচবিহার জেলার মাথাভাঙা এলাকার ইন্দিরা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়েই এদিন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষিকা হিসাবে কাজে যোগ দিয়েছেন ববিতা। কলকাতা হাইকোর্টের(Calcutta High Court) বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় গত ২৪ জুন নির্দেশ দিয়েছিলেন রাজ্যের শিক্ষাপ্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীর মেয়ে অঙ্কিতা অধিকারীর ছেড়ে দেওয়া চাকরি দিতে হবে মামলাকারী ববিতা সরকারকে। ২৭ জুনের মধ্যে ববিতাকে ওই চাকরির জন্য নিয়োগপত্র দিতে হবে এবং ৩০জুন সেই চাকরিতে ববিতাকে জয়েন করার তারিখ দিতে হবে, রাজ্যের মধ্য শিক্ষা পর্ষদকে এমনই নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি।
সেই মতোই গত সোমবার ববিতা হাতে পান চাকরতে যোগদানের নিয়োগপত্র আর এদিন তিনি সেই নিয়োগপত্রের জেরেই চাকরিতে যোগদান করেছেন। মেখলিগঞ্জের ইন্দিরা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষিকা পদে নিয়োগ পেয়েছিলেন পরেশকন্যা অঙ্কিতা অধিকারী। সেই চাকরিই কলকাতা হাইকোর্টের রায়ে চলে গিয়েছে। শুধু তাই নয়, আদালত এই নির্দেশও দিয়েছিল যে, বিগত ৪১ মাস ধরে অঙ্কিতা স্কুলের শিক্ষিকা পদে যে বেতন পেয়েছেন তা ফেরত দিতে হবে। আর সেটাও দুই কিস্তিতে। প্রথম কিস্তি দিতে হবে ৭ জুন। দ্বিতীয় কিস্তির তারিখ ৭ জুলাই। ইতিমধ্যেই সেই রায় মেনে অঙ্কিতাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে এবং পরেশকন্যাও প্রথম কিস্তির টাকা আদালতে জমা দিয়েছেন।
বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় রাজ্যের মধ্যশিক্ষা পর্ষদকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, অঙ্কিতা এই চাকরিতে যোগদান করার সময়ে যা যা সুবিধা পেয়েছিল তার সব সুযোগসুবিধা দিতে হবে ববিতাকেও। এমনকি অঙ্কিতা তাঁর বেতনের প্রথম কিস্তির যে টাকা আদালতে জমা দিয়েছে সেই টাকার সবটাই ববিতাকে দিতে হবে। অঙ্কিতা তাঁর বেতনের দ্বিতীয় কিস্তির টাকা জমা দিলে তাও দিতে হবে ববিতাকে। ববিতার চাকরির মেয়াদ শুরু হবে অঙ্কিতা যেদিন চাকরিতে যোগদান করেছিল সেই দিন থেকেই। সেই হিসাব ধরেই তাঁর সব বেতন, ডিএ, প্রভিডেন্ট ফাণ্ড, গ্রাচ্যুউইটি প্রদান করতে হবে। এদিন এই সব শর্ত মেনেই ববিতা কাজে যোগ দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।