-273ºc,
Tuesday, 30th May, 2023 12:13 pm
নিজস্ব প্রতিনিধি: এ যেন ভূতের মুখে রাম নাম। বিজেপির নেতাকর্মীরাই এখন এক বিজেপি(BJP) নেতার বিরুদ্ধে চাইছেন সিবিআই(CBI) তদন্ত! বাংলার রাজনীতিতে কথায় কথায় বিজেপির নেতা থেকে বিধায়ক, সাংসদ, মন্ত্রীকে রাজ্যের শাসক দলের বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের দাবি তুলতে দেখা যায়। সেই বিজেপির নেতারাই কিনা এখন বিজেপিরই এক নেতার বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্ত চাইছেন। স্বাভাবিক ভাবেই এই ঘটনায় রীতিমত শোরগোল পড়ে গিয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। সেই সঙ্গে অবশ্যই অস্বস্তিতে পড়েছে বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্বও। ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে নদিয়া(Nadia) জেলার রানাঘাট মহকুমার গাংনাপুরে(Gangnapur) এক বিজেপি নেতার চিটফান্ড কাণ্ড। অভিযোগ, অমিতোষ বসু(Amitosh Basu) নামে ওই বিজেপি নেতা গাংনাপুরে চিটফান্ড কোম্পানি খুলে প্রায় ৫ কোটি টাকা হাতিয়ে বেপাত্তা হয়ে গিয়েছেন। এখন তাঁকে খোঁজার দাবি তুলে ও গোটা ঘটনার সিবিআই তদন্ত চেয়ে রীতিমত সরব হয়েছেন এলেকার বিজেপির নেতাকর্মীরাই।
জানা গিয়েছে, অমিতোষ বসু বিজেপির নদীয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার তফসিলি মোর্চার সভাপতি ছিলেন। তাঁর বাড়ি গাংনাপুর এলাকার ঘোলা গ্রামে। সেখানেই পরিবারের সঙ্গে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে অমিতোষ নিজেই ‘যুব স্বনির্ভর সমিতি’ নামে একটি সমিতি চালু করে। অভিযোগ, অল্প সময়ের মধ্যে দ্বিগুণ টাকা দেওয়ার টোপ দিয়ে স্থানীয় প্রায় তিনশো বাসিন্দার কাছ থেকে পাঁচ কোটি টাকা তুলেছিল সে। কিন্তু হঠাৎ করেই গতবছর ১৫নভেম্বর বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে বেপাত্তা হয়ে যায় ওই বিজেপি নেতা। আমানতকারীদের অভিযোগ, অমিতোষ নিজেকে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ও বড়মাপের বিজেপি নেতা বলে দাবি করত। যেকারণে সহজেই তাঁরা ওই কোম্পানিতে টাকা জমা রেখেছিলেন। কিন্তু এখন অমিতোষ বেপাত্তা হওয়ায় সুদ দূরের কথা আসল ফেরতেরও আশা ছাড়তে বসেছেন আমনতকারীরা। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর দশেক আগে অমিতোষ পরিবার নিয়ে ঘোলা গ্রামে বসবাস শুরু করেছিল। এরপর হঠাৎ করেই সে বিজেপি নেতা হয়ে ওঠে। দলের তফসিলি মোর্চার সভাপতির দায়িত্ব পেতেই ফুলেফেঁপে উঠেছিল সে। কিছুদিনের মধ্যেই তিনতলা বাড়িও তৈরি করে করে ফেলে সে। এখন সে বাড়িতেই তালা ঝুলছে।
আরও মজার কথা, যে বিজেপি কথায় কথায় রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে, তৃণমূলের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে ছোটে মামলা করতে সেই বিজেপি তরফে একজন নেতাও এখনও পর্যন্ত এই ঘটনায় কোনও মামলা দায়ের করেনি। এমনকি যে সব মানুষ এই ঘটনায় প্রতারিত হয়েছে তাঁদের পাশেও দাঁড়ায়নি। কার্যত অভিযোগ উঠেছে, একা অমিতোষ নয়, এই ঘটনায় বঙ্গ বিজেপির একাধিক নেতা জড়িত। নাম জড়িয়েছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদেরও। আর এখন গোটা বিষয়টি ধামাচাপা দিতে অমিতোষকে দল থেকে বহিষ্কার করে নিজেরা ধোয়া তুলসিপাতা সাজতে চাইছেন এলাকার বিজেপির নেতারা। যেমন বিজেপির নদীয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘অমিতোষকে আমরা আগেই দল থেকে তাড়িয়ে দিয়েছি। কারা সিবিআই তদন্তের দাবি জানাচ্ছে তা জানা নেই।’ ঠিক এই জায়গায় দাঁড়িয়ে বিজেপির তফসিলি মোর্চার জেলা সহ-সভাপতি সুভাষ বিশ্বাস জানিয়েছেন, ‘দলের সহকর্মী হিসেবে আমি ওর কাছে ৮ লক্ষ টাকা রেখেছিলাম। আমার মতো অনেকের থেকেই টাকা নিয়েছে। সব মিলিয়ে ৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। গাংনাপুর থানা, রাজ্য পুলিসের পদস্থ আধিকারিক ও বিভিন্ন দফতরে আমরা অভিযোগ জানিয়েছি। কিন্তু তারপরও ওকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাই ওকে খুঁজে বের করে টাকা ফেরানোর দাবিতে আমরা সিবিআই তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।’ ঘটনার জেরে তৃণমূলের রানাঘাট সাংগঠনিক জেলা সভাপতি রত্না ঘোষ কর জানিয়েছেন, ‘এতদিন অকারণে বিজেপি সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়ে রাজ্যের মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে। এখন ওদের দলের ‘প্রতারক নেতা’কে খুঁজে পেতেই ওরা সিবিআই চাইছে। এর থেকে লজ্জার কিছু হতে পারে না।’