নিজস্ব প্রতিনিধি: কয়লা পাচার, গরু পাচার, বকটুই, এসএসসি, নারদ, সারদা এসব কিছু নিয়ে বাংলার মাটিতে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই। আর এই সব ক্ষেত্রেই তাঁরা তদন্ত করছে আদালতের নির্দেশে। পাশাপাশি কেন্দ্র সরকারের একাধিক প্রকল্প নিয়ে বিস্তর অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন বঙ্গ বিজেপির নেতারা। সেই সব অভিযোগ সত্যি কিনা তা খতিয়ে দেখতে সময়ে অসময়ে বাংলায় প্রতিনিধি দল পাঠাচ্ছে মোদি সরকার(Modi Government)। তাঁরা বাংলায় এসে জেলায় জেলায় গিয়ে ওই সব অভিযোগ খতিয়ে দেখছেন। সেই সব অভিযোগের মধ্যে অন্যতম হল প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা(Pradhanmantri Awas Yojna)। গেরুয়া শিবিরের অভিযোগ, ওই প্রকল্প বাংলার মাটিতে বাংলা আবাস যোজনা(Bangla Awas Yojna) নামে রূপায়িত হচ্ছে। কেন এই নামবদল করা হয়েছে সেই প্রশ্ন তুলে ইতিমধ্যেই এই প্রকল্পের টাকা আটকে দিয়েছে মোদি সরকার। তা নিয়ে রাজ্যের সঙ্গে কেন্দ্রের বিবাদও বেঁধেছে। কিন্তু এত কিছুর মধ্যেও এবার রাজ্য সরকারের কাছে অভিযোগ এসেছে পূর্ব বর্ধমান(Purba Burdhwan) জেলায় বাংলা আবাস যোজনার টাকা পাওয়ার পরেও প্রায় সাড়ে চার হাজার বাড়ি তৈরির কাজ এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। কেন এমন ঘটনা ঘটল তা নিয়ে এবার তদন্তে নামছে রাজ্যের আধিকারিকেরা।
বাংলা আবাস যোজনা প্রকল্প নিয়ে কেন্দ্রের আধিকারিকদের মূলত অভিযোগ নামবদল নিয়ে। পাশাপাশি অভিযোগ রয়েছে এই প্রকল্পে কেন্দ্রের নির্দেশ মেনে বাড়ি তৈরি হয়নি, এই নিয়েও। পাশাপাশি তাঁরা এটাও জানিয়েছেন, কেন্দ্র যখন এই প্রকল্পে টাকা দিয়েছিল তখন অনেকেই টাকা পেলেও সেই টাকায় তাঁরা বাড়ি নির্মাণ করেননি। শুধুমাত্র পূর্ব বর্ধমান জেলাতে এমন বাড়ির সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৪ হাজার। টাকা পাওয়ার পরেও কেন কেন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হয়নি বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে সেই প্রশ্ন রাজ্যের কাছে জানতে চেয়েছিলেন কেন্দ্রের আধিকারিকেরা। রাজ্যের কাছে এই প্রশ্নের উত্তর তো দূর, এই মর্মে কোনও তথ্যও ছিল না। কেন এমন ঘটনা ঘটলা তা খতিয়ে দেখতেই এবার রাজ্য সরকার গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করতে চাইছে। এই বিষয়ে পূর্ব বর্ধমান জেলার অতিরিক্ত জেলাশাসক(জেলা পরিষদ) কাজল রায় জানিয়েছেন, বাড়ি তৈরির কাজ কেন সম্পূর্ণ হয়নি, তা জানতে চাওয়া হচ্ছে যারা এই প্রকল্পের মাধ্যমে টাকা পেয়েছেন তাঁদের কাছ থেকে।
জেলা প্রশাসন সূত্রেই জানা গিয়েছে, পূর্ব বর্ধমানে এখনও অনেক বাড়ি কাঁচা রয়েছে। তাদের নাম ‘আবাস প্লাস’ প্রকল্পে নথিভুক্তও করা হয়। কিন্তু কেন্দ্র টাকা বন্ধ করে দেওয়ায় ওই প্রকল্পের কাজ থমকে গিয়েছে। তাছাড়া অনেকে এখনও দ্বিতীয় বা তৃতীয় কিস্তির টাকা পাননি। তাঁরাও বিপাকে পড়ে গিয়েছেন। তবে টাকা পাওয়ার পরেও কোনও উপভোক্তা বাড়ি তৈরি না করলে তাঁদের বিরুদ্ধে এবার পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করতে চলেছে রাজ্য সরকার। যাদের নাম এই ক্ষেত্রে উঠে আসবে তদন্তের মাধ্যমে প্রথমে তাদের সতর্ক করা হবে। সেই সঙ্গে নতুন করে সময় নির্দিষ্ট করে দেওয়া হবে কাজ শেষ করার জন্য। কিন্তু তারপরেও কাজ না হলে থানায় এফআইআর করা হবে ওই উপভোক্তার বিরুদ্ধে। এই বিষয়ে পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি শম্পা ধাড়া জানিয়েছেন, কোনও উপভোক্তা অনিয়ম করলে ছাড়া হবে না। প্রশাসন তদন্ত শুরু করেছে। যাঁদের বাড়ি তৈরি সম্পূর্ণ হয়নি, তাঁদের চিহ্নিত করা হবে। তবে এটুকু বলতে পারি, পূর্ব বর্ধমান জেলার অধিকাংশ বাড়ি সরকারি নিয়ম মেনেই তৈরি হয়েছে। কয়েকটি এলাকায় কাজ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার পাশাপাশি ‘হাউসিং ফর অল’ প্রকল্পেও অনেক উপভোক্তা জেলায় টাকা পাননি। বাড়ি ভেঙে তাঁরা বিপাকে পড়ে গিয়েছেন। সাড়ে চার হাজার বাড়ি তৈরি অসম্পূর্ণ রয়েছে ঠিকই, কিন্তু সব ক্ষেত্রে দুর্নীতি হয়নি। অনেক উপভোক্তা বিভিন্ন কারণে কাজ বন্ধ রেখেছেন। অনেকের আর্থিক অবস্থা খারাপ। তাঁরা টাকা তুলে অন্য খাতে ব্যয় করে থাকতে পারেন। পরে তাঁদের সম্পূর্ণ বাড়ি তৈরির চিন্তাভাবনা রয়েছে। তবে তাঁদেরও বাড়ি তৈরি সম্পূর্ণ করতে হবে। তা না হলে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
