নিজস্ব প্রতিনিধি: রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী(Suvendu Adhikari) আদালতে দৌড়ে গিয়েছিলেন অযোধ্যার রামমন্দিরের উদ্বোধনের দিনে অর্থাৎ ২২ জানুয়ারি কলকাতায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) ‘সংহতি মিছিল’ ও রাজ্যের ব্লকে ব্লকে তৃণমূল কংগ্রেসের(TMC) ‘সম্প্রীতি মিছিল’ ঠেকাতে। একই সঙ্গে তাঁর আর্জি ছিল সেদিন রাজ্যের স্পর্শকাতর এলাকায় যেন কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়। কিন্তু এদিন কলকাতা হাইকোর্টের(Calcutta High Court) প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চ সেই জোড়া আর্জিই খারিজ করে দিয়েছে। শুভেন্দুর এই জোড়া আর্জি খারিজ হওয়ার পরে পরেই এদিন তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ(Kunal Ghosh) একহাত নিয়েছেন শুভেন্দুকে। বলেছেন, ‘এই নির্দেশ আসলে শুভেন্দুর গালে আদালতের থাপ্পড়। বাংলায় শান্তি-সম্প্রীতির মিছিল হবে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রয়োজন নেই। রাজ্য পুলিশই যথেষ্ট। শুভেন্দুরা বিভেদ চেয়েছিল। আদালত ওদের গালে কষিয়ে থাপ্পড় মেরেছে।’
উল্লেখ্য, রামমন্দির উদ্বোধনের দিনই কলকাতায় মমতার ‘সংহতি মিছিল’ ও রাজ্যের ব্লকে ব্লকে তৃণমূল কংগ্রেসের ‘সম্প্রীতি মিছিল’র ছাড়পত্র এদিন কলকাতা হাইকোর্ট দিলেও কিছু শর্তও আরোপ করেছে। আদালত জানিয়ে দিয়েছে, মিছিল থেকে কারও ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করবে এমন কোনও মন্তব্য করা যাবে না। পাশাপাশি আদালত ওই দিন কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের আর্জি না মানলেও রাজ্য পুলিশের ডিজি, আইজি এবং স্বরাষ্ট্র সচিবকে শান্তি-শৃঙ্খলা সুনিশ্চিত রাখার নির্দেশ দিয়েছে। ব্লক স্তরের সম্প্রীতি মিছিলেন জন্য প্রয়োজনীয় অনুমতি নেওয়া হয়েছে কি না, তা জেলাশাসক এবং পুলিশকে দেখার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। এই ধরনের মিছিলের ক্ষেত্রে ট্রাফিকের সমস্যা হতে পারে, আটকে পড়তে পারে অ্যাম্বুল্যান্স। এই বিষয়গুলি নিয়ে সংশ্লিষ্ট দল ও রাজ্য সরকারকে তৎপর হতে হবে বলেও জানিয়েছে আদালত। সেই সঙ্গে জানিয়েছে, মিছিল থেকে কোনও অঘটন ঘটলে ওই দলের ওপর বর্তাবে দায়। আদালতের রায় লঙ্ঘন করলে দায়ী হতে পারেন ব্যক্তিও।
এদিকে রাজ্যের ব্লকে ব্লকে তৃণমূলের সম্প্রীতি মিছিলের ক্ষেত্রে ধর্মগুরুদের শামিল করতে দলের সব স্তরের নেতাকর্মীদের জন্য লিখিত নির্দেশ জারি করেছেন দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী। সেই নির্দেশে বলা হয়েছে, ‘মিছিলে সব ধর্মের মানুষের যোগদান বাঞ্ছনীয় এবং মিছিলের সামনের সারিতে ধর্মগুরুদের রাখতে হবে। যেখানে মিছিল শেষ হবে সেখানেই একটি মঞ্চ থেকে সমন্বয়ের ওপর ধর্মগুরুদের বক্তৃতার আয়োজন করতে হবে।’ লিখিত বার্তাটি পাঠানো হয়েছে দলের জেলা সংগঠনের সভাপতি এবং চেয়ারম্যানদের কাছে। তাঁদেরকে সেই বার্তা ব্লকে ব্লকে পৌঁছে দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তৃণমূলের মিছিল এবং সভায় ধর্মগুরুদের সামনের সারিতে রেখে বিজেপির মন্দিরের আড়ালের রাজনীতিকে প্রকাশ্যে আনাই তৃণমূলের লক্ষ্য, এমনটাই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
বিজেপির বিরুদ্ধে বিভাজনের রাজনীতির অভিযোগ তুলে সম্প্রীতির বার্তা দিতেই রাজ্য জুড়ে এই সংহতি মিছিলের আয়োজন তৃণমূলের। তৃণমূলের বক্তব্য, ওইদিন গেরুয়া শিবির বিভাজনের উদ্দেশে রাস্তায় নামতে চেষ্টা করবে। তৃণমূল পাল্টা মিছিল করবে সংহতির বার্তা নিয়ে। এ ক্ষেত্রে যে দলের সুস্পষ্ট একটি লাইন রয়েছে তাও চিঠির একটি অংশে বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি। তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত নির্দেশে লিখেছেন, ‘সংহতি মিছিলের ব্যানার, ফেস্টুন, ব্ল্যাকড্রব ইত্যাদির জন্য ডিজাইন আপনাদের কাছে আলাদা ভাবে পাঠানো হচ্ছে।’