নিজস্ব প্রতিনিধি: তিনি কথা দিলে সেই কথা রাখেন। তাঁর প্রতিশ্রুতি ভোট গিমিক হয়ে মাঝ পথে হারিয়ে যায় না। যা তিনি বলেন সেটাই তিনি চালু করেন যার সুবিধা রাজ্যের প্রতিটি মানুষই পান, তা সে ডান-বাম যাই হোক না কেন। সেই কারণেই ‘দুয়ারে সরকার’-এর শিবিরে দেখা যায় লাল পার্টির নেতার বাড়ির লোকেরাও লাইন দিয়েছে, গেরুয়া শিবিরের নেতার বাড়ির লোকও লাইন দিয়েছে। এটাই মমতার বাংলা। যার বিকল্প ভূ-ভারতে কোথাও নেই। সোমবার ফের জেলা সফরে বার হচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। এদিন তিনি কলকাতা থেকে হেলিকপ্টারে করে বর্ধমান(Burdhwan) শহরে যাবেন। দুপুর ২.৩০মিনিটে বর্ধমান শহরের পাশে থাকা গোদা(Goda) এলাকায় মুখ্যমন্ত্রী ‘কৃষক সম্মান প্রদান’ অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। সেই সভা থেকেই তিনি বাংলার প্রায় ৯০ লক্ষ চাষীকে(Farmers) ‘কৃষকবন্ধু’(Krishakbandhu) প্রকল্পের সুবিধা প্রদান কর্মসূচীর সূচনা করবেন।
এদিন মুখ্যমন্ত্রীর হেলিকপ্টার বেলা ১২টা নাগাদ নবান্নের কাছেই থাকা হাওড়ার ডুমুড়জলা হেলিপ্যাড থেকে বর্ধমানের পথে রওয়ানা দেবে। ১২টা ৪৫ মিনিট নাগাদ সেখানে পৌঁছে যাবেন মুখ্যমন্ত্রী। গোদায় যে অস্থায়ী হেলিপ্যাড তৈরি করা হয়েছে তার পাশেই হবে মুখ্যমন্ত্রীর সভা যেখানে এদিন ১ লক্ষেরও বেশি মানুষ যোগ দিতে পারেন বলে প্রশাসন সূত্রে মনে করা হচ্ছে। এদিন কৃষকদের সম্মান অনুষ্ঠানে পূর্ব বর্ধমান জেলার ২৩টি ব্লক থেকে এই লক্ষাধিক মানুষ আসবেন। এই অনুষ্ঠানে কৃষকদের আসতে যাতে কোনও অসুবিধা না হয় তার জন্য, জেলা প্রশাসনের তরফে জেলার প্রত্যেকটি ব্লক থেকে ২৫টি করে বাসে কৃষকদের নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মোট ৬০০টি বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। একই সঙ্গে যেহেতু এদিনের সভা সম্পূর্ণ ভাবে সরকারি অনুষ্ঠান তাই প্রত্যেককে বলে দেওয়া হয়েছে কোনও রকমের দলীয় পতাকা সঙ্গে না নিয়ে আসতে। সেই সঙ্গে কৃষকদের আনার জন্য যে বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে সেই সব বাসেও যাতে কেউ কোনও রকমের দলীয় পতাকা না লাগায় সেই দিকটিও কড়া ভাবে দেখতে বলা হয়েছে।
বাংলায় ‘কৃষকবন্ধু’ প্রকল্পের উপভোক্তা ক্রমশই বেড়ে চলেছে। নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছরে এই প্রকল্পের দ্বিতীয় কিস্তির টাকা পেয়েছিলেন প্রায় ৭৭ লক্ষ কৃষক। কিন্তু এদিন প্রায় ৯০ লক্ষ কৃষক এই প্রকল্পের চলতি বছরের প্রথম কিস্তির টাকা পেতে চলেছেন। অর্থাৎ প্রায় ১৩ লক্ষ অতিরিক্ত কৃষক এবারে এই সুবিধা পেতে চলেছেন। ‘কৃষকবন্ধু’ প্রকল্পে বছরে দুইবার টাকা পান রাজ্যের কৃষকরা। খারিফ ও রবি চাষের আগে সেই টাকা দেওয়া হয়। ন্যূনতম ৪ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বছরে পান কৃষকরা। ১ একর বা তার বেশি জমি থাকলে ১০ হাজার টাকা পাওয়া যায়। সামান্য জমি থাকলেও, মেলে ৪ হাজার টাকা। নথিভুক্ত ও অনথিভুক্ত বর্গাদাররাও এই প্রকল্পের সুবিধা পান।
পরিবারের সদস্যরা যাতে নিজের নামে জমি নথিভুক্ত করে কৃষকবন্ধুর টাকা পেতে পারেন, তার জন্য মিউটেশন বিনা খরচে করে দেওয়া হচ্ছে। আর এই কারণেই ‘কৃষকবন্ধু’ প্রকল্পে সাহায্য প্রাপকের সংখ্যা রাজ্যে ক্রমশই বেড়েই চলেছে। সব মিলিয়ে এদিন প্রায় ৯০ লক্ষ কৃষকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে প্রায় ২৪০০ কোটি টাকা পাঠানো হবে। সেই কর্মসূচিরই এদিন সূচনা করবেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সঙ্গে এদিন থেকেই ‘কৃষকবন্ধু’ প্রকল্পের আওতায় থাকা মৃত কৃষকদের পরিবারকেও টাকা দেওয়ার কাজ শুরু করা হবে। এদিনের অনুষ্ঠানে বেশ কয়েকজন চাষিকে কৃষি যন্ত্রাংশও প্রদান করবেন মুখ্যমন্ত্রী। এছাড়া ‘কৃষি সেচ যোজনা’, ‘কৃষি পরিকাঠামো’ তহবিল প্রকল্পেও চাষিদের সহযোগিতা করা হবে। মোট ২২জন কৃষক সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে এদিন বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা পাবেন। পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, শুধু ওই জেলাতেই প্রায় ৫ লক্ষ চাষি কৃষকবন্ধু প্রকল্পে আর্থিক সহযোগিতা পাবেন।