নিজস্ব প্রতিনিধি: এমনটাও হয়! এমনটাও হতে পারে! অবাক হয়ে দেখছে শুনছে বাংলার জনতা। দলের তো বটেই, খোদ প্রধানমন্ত্রীরও মুখ পুড়িয়ে দিচ্ছেন দলেরই প্রার্থী। যিনি আবার এ রাজ্যের প্রাক্তন দলীয় সভাপতি। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের মুখে নরেন্দ্র মোদি দেশবাসীকে আশ্বাস দিয়েছিলেন, বিদেশের ব্যাঙ্কে গচ্ছিত ‘কালো ধন’ ফিরিয়ে এনে দেশবাসীকে বিলিয়ে দেবেন তিনি। প্রত্যেকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঢুকবে ১৫ লক্ষ টাকা! সেটাই ছিল ২০১৪ সালে লোকসভা ভোটের আগে নরেন্দ্র মোদির(Narendra Modi) সবচেয়ে বড় ‘গ্যারান্টি’। এবার সেই গ্যারেন্টিকে ২৪’র ভোটে(Loksabha Election 2024) বড়সড় প্রশ্নের মুখে ফেলে দিলেন বাংলার দিলীপ ঘোষ(Dilip Ghosh)। ভুললে চলবে না দিলীপ শুধু বঙ্গ বিজেপির সভাপতিই ছিলেন না, তিনি এবারেও দলের প্রার্থী। মেদিনীপুরের পরিবর্তে বর্ধমান-দুর্গাপুর আসন থেকে লড়াই করছেন তিনি। আর তিনিই কিনা বলে দিলেন, ‘১৫ লক্ষ টাকার অপেক্ষা করে অনেকে তো ওপরে চলে গেল।’ এ তো সরাসরি খোদ মোদিকে কটাক্ষ। আর তাতেই মুখ পুড়ছে বিজেপির(BJP)। আর সেই কটাক্ষ হানা হয়েছে এমন দিনে, যেদিন খোদ মোদি উপস্থিত ছিলেন বাংলার মাটিতে।
বিজেপি বিরোধীরা প্রধানমন্ত্রীকে এবং তাঁর দলকে আক্রমণ করবে সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু তা বলে ঘরের লোক, দলের লোক, পদ্মপ্রার্থী, সেও কিনা প্রধানমন্ত্রীকে নিশানা বানাবে? সেও কিনা প্রধানমন্ত্রীর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দেবে? এমনটাও হতে পারে! কিন্তু এমনটাই তো হয়েছে। আর সেটা ঘটিয়েছেন দিলীপ ঘোষ। গতকাল কোচবিহারে ছিল প্রধানমন্ত্রীর সভা। আবার গতকাল পূর্ব বর্ধমানের ভাতারের কুড়মুনেও ছিল দিলীপের সভা। আর সেই সভার পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে দিলীপ সাফ জানিয়ে দেন, ‘১৫ লক্ষ টাকার অপেক্ষা করে অনেকে তো ওপরে চলে গেল! আমরা ১৫ কোটি টাকার কথা বলছি।’ যদিও কোন ১৫ কোটির কথা তিনি বলছেন সেই উত্তর অবশ্য দেননি মেদিনীপুরের বিদায়ী বিজেপি সাংসদ। তবে দিলীপের কটাক্ষ বাণে এখন শুধু মোদিরই মুখ পুড়ছে তাই নয়, বিজেপিরও মুখ পুড়ছে। মাঝখান থেকে দিলীপের মন্তব্যকে হাতিয়ার করে ফেলেছে তৃণমূল(TMC)। রাজ্যের মন্ত্রী তথা বর্ষীয়ান তৃণমূল নেতা স্বপন দেবনাথ সাফ জানিয়েছেন, ‘উনি ঠিকই বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী যে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেন, সেটা দেরিতে হলেও তিনি বুঝেছেন। আমজনতাও বুঝে গিয়েছেন।’
দিলীপবাবু সোজাসাপ্টা কথা বলতেই পছন্দ করেন, একথা কারও অজানা নয়। এর আগে প্রচারে বেরিয়ে দলের নব্য নেতাদের কটাক্ষ হেনেছেন। কিন্তু এভাবে প্রধানমন্ত্রীর ‘গ্যারান্টি’ নিয়ে কোনওদিন তাঁকে কটাক্ষ করতে দেখা যায়নি। ওয়াকিবহাল মহলের দাবি, দলের প্রথম প্রার্থী তালিকায় তাঁর নাম ছিল না। দ্বিতীয় তালিকায় নাম উঠলেও, মেদিনীপুর থেকে সরিয়ে তাঁকে প্রার্থী করা হয়েছে বর্ধমান-দুর্গাপুরে। তাতে যে তিনি খুশি হননি, সেটা নানাভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন। প্রচারে নেমে তাই বারবার বেলাগাম মন্তব্য করেছেন। মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে কুরুচিকর মন্তব্য করায় তাঁকে শোকজও করেছে দল এবং নির্বাচন কমিশন। কিন্তু তারপরও থামানো যায়নি দিলীপকে। আর এবার তো খোদ দেশের প্রধানমন্ত্রীকেই কটাক্ষ হেনে দিলেন। তাঁর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিলেন। প্রার্থী ঘোষণা হওয়ার পর থেকে দিলীপবাবু মেদিনীপুরে প্রচারে যাননি। সেখানে তাঁর অনুগামীরাও বিজেপি রপার্থীর হয়ে প্রচারে নামছেন না। তার মাঝেই দিলীপের বাক্যবাণ।