নিজস্ব প্রতিনিধি: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee) ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে চালু করেছিলেন ‘মা ক্যান্টিন’(Ma Canteen)। প্রথমে এই ক্যান্টিন কলকাতা(Kolkata) শহরে চালু করা হলেও ধাপে ধাপে তা চালু হয় রাজ্যের ১২৭টি পুরসভা এলাকাতেই। শুরু থেকেই এই ‘মা ক্যান্টিনে মাত্র পাঁচ টাকায় রান্না করা ‘ডিম-ভাত’(Dim Bhat Thali) থালি বিক্রি করা শুরু হয়েছিল। সেই সময়ে বিরোধীরা এই উদ্যোগকে ‘ভোটের আগে ভাঁওতাবাজি’ বলেও কটাক্ষ হেনেছিল। কিন্তু একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পরেও মমতার মা-ক্যান্টিনে এখনও মিলছে মাত্র ৫ টাকায় ডিম-ভাত থালি। আর শুনলে অবাক হয়ে যাবেন এই ১৫ মাসে রাজ্যজুড়ে দেড় কোটি মানুষ মাত্র ৫ টাকার বিনিময়ে এই ডিম-ভাত খেয়েছেন। কার্যত এই পরিষেবা এখন এক নয়া নজীর গড়ে দিয়েছে রাজ্যের বুকে তো বটেই গোটা দেশের মধ্যেও।
রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের হাতে থাকা স্টেট আরবান ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি বা সুডাকেই দেওয়া হয়েছে ‘মা ক্যান্টিন’ পরিচালনার দায়িত্ব। প্রতিদিন দুপুর ১টা থেকে ৩টে পর্যন্ত ‘মা-ক্যান্টিন’ থেকে মাত্র ৫ টাকার বিনিময়ে এই থালি বিক্রি করা হয়। আর সেই থাকি কিনে নিজেদের পেট ভরাতে প্রতিদিনই রাজ্যজুড়ে ‘মা-ক্যান্টিন’-এর সামনে লম্বা লাইন পড়ে। থালিতে থাকে ভাত, তরকারি ও একটি করে ডিম। মূলত নিঃসঙ্গ বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, ভবঘুরে এবং নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য এই পরিষেবা আনা হলেও দেখা যাচ্ছে শহরাঞ্চলে কাজের জন্য আসা গ্রামের মানুষেরাও এই থালি কিনে খাচ্ছেন। সুডা’র(SUDA) হিসাব বলছে কলকাতা সহ রাজ্যের ১২৭টি পুরসভা এলাকায় ছড়িয়ে থাকা ২৫৫টি ‘মা ক্যান্টিন’ থেকে প্রতিদিন প্রায় ৫১ হাজার মানুষ এই ‘ডিম-ভাত’ থালি কিনে খান। ২০২১’এর ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু করে চলতি মাস পর্যন্ত মোট ১ কোটি ৫৮ লক্ষ ৭৪ হাজার ৬৫০ ডিম-ভাত থালি বিতরণ করা হয়েছে বলে সুডা’র তরফে জানানো হয়েছে। যদিও বিরোধীদের পাশাপাশি আমজনতার একাংশের প্রশ্ন চড়া অগ্নিমূল্যের বাজারেও রাজ্য সরকার কীভাবে মাত্র ৫ টাকার বিনিময়ে এই থালি পরিষেবা দিচ্ছে!
এই বিষয়ে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, পাঁচ টাকার ডিম-ভাত থালির জন্য যত চালের প্রয়োজন, তার গোটাটাই সরবরাহ করে রাজ্য সরকার। পাশাপাশি প্রতি থালির জন্য ১০ টাকা করে ভর্তুকিও দেয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। কলকাতার কিছু জায়গা বাদ দিয়ে সমস্ত জায়গাতেই একেবারে টেবিল-চেয়ারে পাত পেতে খাওয়ানো হয়। রান্নাও হয় স্বাস্থ্যকর পরিবেশে। শুধুমাত্র কলকাতার বুকেই ১২৩টি ‘মা ক্যান্টিন’ চলে। এখনও পর্যন্ত শুধু কলকাতার বুকেই ৮৬ লক্ষ ৪৬ হাজার ৯৮৫টি থালি বিক্রি করা হয়েছে। কলকাতার পর সর্বাধিক বিক্রি কেন্দ্র রয়েছে আসানসোলে, মুর্শিদাবাদ পুরসভা, জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জ পুরসভা ও ডোমকল পুরসভা এলাকায়। বাকি সমস্ত পুরসভা এলাকাতেই একটি করে কেন্দ্র রয়েছে। তবে কলকাতার পরেই সর্বাধিক ডিম-ভাত থালি বিতরণ করা হয়েছে বনগাঁ পুরসভা এলাকায়। সেখানে বিগত ১৫ মাসে বিক্রি হয়েছে ২ লক্ষ ২৮ হাজার ৩০টি থালি। শিলিগুড়ি এবং জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জ পুরসভা এলাকায় বিক্রি হয়েছে যথাক্রমে ১ লক্ষ ৮২ হাজার ২৬০ এবং ১ লক্ষ ৮০ হাজার ২০৪টি থালি। কোভিডের তৃতীয় ঢেউয়ের সময় আক্রান্ত মানুষ ও তাঁদের পরিবারের জন্য এই ‘মা ক্যান্টিন’ থেকেই বাড়ির দুয়ারে ডিম-ভাত পৌঁছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল বিভিন্ন পুরসভার তরফে। এখনও বিভিন্ন কলোনি ও পিছিয়ে পড়া এলাকায় মা ক্যান্টিনের ডিম-ভাত’এর ডিউ স্লিপ মানুষের মধ্যে বিলি করা হয়, যাতে গ্রাসাচ্ছাদনের ব্যবস্থা হয় মাত্র পাঁচ টাকাতেই।