নিজস্ব প্রতিনিধি: শনিবার ভোর সাড়ে ৪টে নাগাদ আগুন লাগার ঘটনা ঘটল বর্ধমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে। আর সেই আগুনে ঝলসে মারা গেলেন কোভিডে আক্রান্ত এক রোগী। ঘটনার জেরে এদিন ভোরে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে ওই হাসপাতালে। খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে আসে দমকল ও পুলিশ। আগুন ছড়িয়ে পড়তে না পারলেও রোগী ও তাঁদের পরিজনদের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছিল হাসপাতালের কোভিড ওয়ার্ডে। সেখানেই ভর্তি ছিলেন পূর্ব বর্ধমান জেলার গলসি থানার বড়মুড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা সন্ধ্যা মণ্ডল (৬০)। তিনিই আগুনে ঝলসে মারা গিয়েছেন। হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছে, আগুন লাগার পর হাসপাতালের কর্মীরাই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় দমকলের ইঞ্জিন। তবে নিরাপত্তার গাফিলতির কথা অস্বীকার করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরিবর্তে তাঁরা এই ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করার কথা জানিয়েছে।
এই বিষয়ে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ প্রবীর সেনগুপ্ত জানিয়েছেন, ‘এই ঘটনা খুবই দুঃখজনক। আগুন লাগার কারণ জানতে চপাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সন্ধ্যা মণ্ডল জেনারেল কোভিড ওয়ার্ডে ভর্তি ছিলেন। তাঁর একটি সার্জারি হওয়ার কথা ছিল। কোভিড জেনারেল ওয়ার্ডে রাত সাড়ে তিনটের সময়ে সার্জারির ডাক্তারবাবুরা সন্ধ্যা মণ্ডলকে দেখে যান। তারপর পাঁচটা নাগাদ খবর আসে। গিয়ে দেখা যায়, সন্ধ্যা মণ্ডলের বেডটাই দাউ দাউ করে জ্বলছে। অক্সিজেন সিলিন্ডার ছাড়া তো আর কোনও কিছু ছিল না ওখানে। ওই বেডের আশেপাশে খালি দেশলাইয়ের বাক্স পড়েছিল। তবে কীভাবে এই আগুন লাগল, তা তদন্ত সাপেক্ষ। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’ তবে সন্ধ্যাদেবীরত মেয়ে রানু মণ্ডলের দাবি, ‘আমাদের ঢুকতে দিলে মা-কে বাঁচানো যেত। আমাদের ঢুকতে দিল না কেন?’
এদিকে দমকলের আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে শট সার্কিট থেকে আগুন লাগেনি। দমকলের আধিকারিক দীপক সেন জানিয়েছেন, ‘আমরা যখন ঘটনাস্থলে পৌঁছাই তখন আগুন নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। কোভিড ওয়ার্ডের বিছানার ওপর দেশলাই এবং লাইটার ছিল। সেখান থেকেও আগুন লাগতে পারে। তবে সম্পূর্ণ তদন্তের আগে নিশ্চিত হয়ে কিছু বলা সম্ভব না। কেউ কেউ বলছেন মশা মারার ধূপ থেকে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে।’ শনি ভোরে যেখানে আগুন লাগে সেই রাধারাণী কোভিড ওয়ার্ডে ভর্তি অন্য এক রোগীর আত্মীয় শত্রুঘ্ন মণ্ডলের অভিযোগ, আগুন লাগার সময় হাসপাতালের নিরাপত্তারক্ষী-সহ অন্য কর্মীরা ঘুমোচ্ছিলেন। তাঁরা ডাকাডাকি করার পরই এই কর্মীরা তৎপর হন বলে তিনি জানান। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, দাউদাউ করে আগুন জ্বলতে থাকলেও হাসপাতালের কোনও কর্মী প্রথমে তা বুঝতে পারেনি।