নিজস্ব প্রতিনিধি: নিত্যদিনই এখন বাঘের আনাগোনা শুরু হয়ে গিয়েছে সুন্দরবন লাগোয়া গ্রামগুলিতে। আর তার জেরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে গোসাবা, কুলতলি এলাকায়। পাশাপাশি পাথরপ্রতিমা, সন্দেশখালি, বাসন্তি এলাকাতেও উদ্বেগ ছড়াচ্ছে। কিন্তু কেন বার বার লোকালয়ে বাঘ ঢুকছে তা নিয়ে যেমন বনদফতরের অন্দরে উদ্বেগ ছড়াচ্ছে তেমনি প্রশ্নও জাগছে। অনেকেই এখন দাবি তুলেছেন, সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে। কিন্তু সেই তুলনায় বাড়েনি তাঁদের বিচরণক্ষেত্র ও খাদ্যের পরিমাণ। তাই খাদ্যাভাবের পাশাপাশি বিচরণক্ষেত্রের সন্ধানেই বার বার বাঘ হানা দিচ্ছে লোকালয়ে। এই রকম অবস্থায় রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানিয়ে দিলেন, রাজ্যজুড়ে বাঘ সুমারি শুরু হবে। মানে বাঘ গণনা হবে। সুন্দরবনের পাশাপাশি বক্সা ও নেওড়া ভ্যালিতেও সেই গণনার কাজ করা হবে। বসানো হবে ক্লোজ় সার্কিট ক্যামেরাও। সেই সঙ্গে বাঘের গলায় পরানো হবে রেডিয়াম কলার। সুন্দরবনে ইতিমধ্যেই সেই প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। বাকি দুই জায়গায় কাজ শুরু হবে। তারপর সামনে আসবে সংখ্যাগত তথ্য।
সাম্প্রতিক কালে বার বার বাঘের লোকালয়ে চলে আসার ঘটনা প্রসঙ্গে বনদফতরের কর্মীদের দাবি, শীতের সময়ে মিষ্টি জলের টানে লোকালয়ের দিকে চলে আসে বাঘ। কিন্তু বন দফতরের আধিকারিকেরা এটাও স্বীকার করছেন এ বার সেই সংখ্যাটাই অনেক বেড়ে গিয়েছে। আর এই জায়গাতেই প্রশ্ন উঠছে কেন এই ঘটনা ঘটছে। প্রাথমিক ভাবে বেশ কিছু কারন উঠে এসেছে। প্রথমত অনুমান করা হচ্ছে যেটা তা হল খাদ্যাভাব। বাঘের সংখ্যা যে সুন্দরবনে বাড়ছে সে তথ্য ২০১৮ সালের বাঘ সুমারিতেই উঠে এসেছিল। তাই অনেকেরই অনুমান বাঘ বাড়লেও খাদ্য বাড়েনি, জঙ্গলও বাড়ানি। তাই বার বার লোকালয়ে চলে আসছে বাঘ। দ্বিতীয়ত কোভিডকালে কাজকর্ম হারিয়ে প্রচুর মানুষ নিত্যদিনই সুন্দরবনের জঙ্গলে ঢুকছে মীন, মাছ আর মধু সংগ্রহ করতে। গত দুই বছরে তার জেরে জন ত্রিশ মানুষ বাঘের হামলায় মারা গিয়েছেন। জখমের সংখ্যা আরও বেশি। কিন্তু এটাও ঘটনা আত মানুষ নিত্যদিন বনের অন্দরে ঢুকে পড়ায় বনের স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। কোলাহল বাড়ছে যা বাঘের একদমই ভালো লাগে না।
একই সঙ্গে শীতকালে সুন্দরবনে যে ভাবে পর্যটকদের দাপাদাপি বাড়ছে তার জেরেও বিরক্ত হচ্ছে বাঘ। তাই সেক্ষেত্রেও বাঘ বন ছেড়ে বাইরে বেড়িয়ে এসে লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে বলে মনে করছেন বাঘ বিশেষজ্ঞরা। সেই সঙ্গে তাঁরা আরও একটি বিষয় তুলে ধরেছেন আর তা হল বন দফতরের বাঘ ধরে তা ফের ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি। তাঁদের দাবি, লোকালয় থেকে ধরা পড়া বাঘগুলিকে অনেক সময়ে তার নিজস্ব পরিবেশের বাইরে অন্যত্র ছেড়ে দেওয়া হয়। হতে পারে, সেখানে কোনও প্রতিকূলতার মুখে পড়ে ফের লোকালয়ের দিকে চলে আসছে বাঘ। কারন বনের মধ্যেও এলাকার দখলদারি নিয়ে বাঘেদের মধ্যে রেষারেষি হয়। বড় বাঘের দাপটের সামনে পড়ে বাঘিনী বা তুলনায় কম শক্তিশালী বাঘ এলাকা ছাড়া হচ্ছে। এরাই এসে ঢুকছে লোকালয়ে। আবার এমনটাও হতে পারে বাংলাদেশ থেকে বাঘ ঢুকে পড়ছে ভারতীয় সুন্দরবনে। আর তার জেরেও চাপে পড়ে গিয়েছে এখানকার রেসিডেন্সিয়াল বাঘেরা।