নিজস্ব প্রতিনিধি: উনিশের ভোটে বাংলায় বিজেপির(BJP) সাফল্যের পিছনে বেশ কিছু ভোট ব্যাঙ্কের ভূমিকা অনুঘটক হিসাবে কাজ করেছি। সেই সব ভোট ব্যাঙ্কের অন্যতম ছিল মতুয়া(Matuya) ভোট ব্যাঙ্ক। মতুয়াদের ঘাড়ে ভর দিয়েই বিজেপি বনগাঁ, রানাঘাট, উত্তর মালদা, রায়গঞ্জ, বালুরঘাট, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুরের মতো লোকসভা কেন্দ্রে জয়ের মুখ দেখেছিল। কিন্তু সেই মতুয়া ভোট ব্যাঙ্ক আর বিজেপির পক্ষে আছে কিনা তা নিয়েই এখন প্রশ্ন উঠে গিয়েছে বঙ্গ বিজেপির অন্দরে। সৌজন্যে পুরনির্বাচনের ফলাফল।
মতুয়া গড় হিসাবে চিহ্নিত যে দুটি লোকসভা কেন্দ্র তার মধ্যেই রয়েছে বেশ কিছু পুরসভা যেখানে ভোট হয়েছিল। কিন্তু রেজাল্ট যা এসেছে তা বিজেপির মুখ পোড়ানোর জন্য যথেষ্ট। বনগাঁ হোক কী চাকদহ, গোবরডাঙা হোক কী হরিণঘাটা, রানাঘাট হোক কী গয়েশপুর, সর্বত্রই মুখ পুড়েছে বিজেপির। কেন এই হাল তা ঘিরেই উঠেছে প্রশ্ন। বিজেপির একাংশের দাবি, মতুয়াদের প্রধান দাবি তাঁদের নাগরিকত্ব। বিজেপির তরফে সেই নাগরিকত্ব প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। সেই প্রতিশ্রুতির জেরেই উনিশে মতুয়ারা দুই হাত ঢেলে সমর্থন করেছে বিজেপিকে। কিন্তু নরেন্দ্র মোদি(Narendra Modi) ও অমিত শাহরা(Amit Shah) দ্বিতীয়বারের জন্য কেন্দ্রের ক্ষমতায় ফিরলেও মতুয়াদের নাগরিকত্ব প্রদানের মূল হাতিয়ার সিএএ(CAA) আইন কার্যকর করার শায়ক আইন প্রণয়নের দিকে কোনও নজরই দিচ্ছেন না। তাই মতুয়ারা নাগরিকত্বও পাচ্ছেন না। একুশের ভোটের সময়েও অমিত শাহ বনগাঁতে এসে বলে গিয়েছিলেন, মতুয়াদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। ভোট মিটলে সেই প্রতিশ্রুতিও ভোঁ ভোঁ। মতুয়ারা এখন বুঝতে পারছেন বিজেপি তাঁদের ভোট ব্যাঙ্ক হিসাবেই বার বার ব্যবহার করতে চাইছে। তাঁদের নাগরিকত্ব প্রদানের কোনও ইচ্ছাই আদতে তাঁদের নেই। সেই কারণেই পুরনির্বাচনে মতুয়ারা নিজেদের সুযোগ-সুবিধা ও এলাকার উন্নয়নের কথা মাথায় রেখে তৃণমূলকে ভোট দিয়েছেন।
তবে এই মতের বাইরে আরও একটা মত উঠে আসছে। আর তা হল শান্তনু ঠাকুরের(Shantanu Thakur) ক্ষোভ। মতুয়াদের ধর্মসমাজের মূল কেন্দ্র ঠাকুরনগরের ঠাকুরবাড়ি। সেই বাড়িরই বড় ছেলে শান্তনু শুধু যে বিজেপির সাংসদ তাই নয়, কেন্দ্রের প্রতিমন্ত্রীও। একই সঙ্গে তিনিই এখন অঘোষিতভাবে মতুয়া সমাজের মাথা। তিনিও এখন বুঝতে পারছেন যে নাগরিকত্ব প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিজেপি মতুয়াদের সমর্থন পেয়েছেন তা আদতে কার্যকর করার কোনও ইচ্ছাই নেই গেরুয়া শিবিরের। উল্টে মতুয়াদের দাবি দলের কাঁধ থেকে ঝেড়ে ফেলতে এখন দলের রাজ্য কমিটি থেকে জেলা কমিটি হয়ে মণ্ডল স্তর পর্যন্ত মতুয়া নেতাদের কেঁটেছেঁটে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। বাংলায় বিজেপির উত্থানের পিছনে মতুয়া সমাজের ভূমিকা ও গুরুত্ব কার্যত চূড়ান্ত ভাবে অস্বীকার করা হচ্ছে। সেই জায়গা থেকে শান্তনু বিদ্রোহী ও বিক্ষুব্ধ হয়েছেন। এখন বঙ্গ বিজেপিতে যে একাধিক গোষ্ঠীর জন্ম হয়েছে তার মধ্যে বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর রাশ রয়েছে শান্তনুর হাতেই। অনেকেরই ধারনা মতুয়াদের গুরুত্ব, তাঁদের ভূমিকা এবং সর্বোপরি তাঁর নিজের ওজন বোঝাতে শান্তনু বনগাঁ, গোবরডাঙা থেকে শুরু করে রানাঘাট, চাকদহ, হরিণঘাটার মতো মতুয়া অধ্যুষিত পুরসভাগুলিতে মতুয়াদের ভোট তৃণমূলের দিকে ঠেলে দিয়েছেন। এতে বিজেপি যেমন ধাক্কা খেয়েছে তেমনি শান্তনুর নিজের তৃণমূলে(TMC) ঢোকার পথ প্রশস্ত হয়েছে। তিনি কার্যত বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব থেকে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে বুঝিয়ে দিয়েছেন মতুয়া ভোট তাঁর হাতে। সেই মতুয়াদের দাম না দিলে, তাঁকে গুরুত্ব না দিলে বাংলায় বিজেপিকে খুঁজেও পাওয়া যাবে না।