নিজস্ব প্রতিনিধি: বঙ্গ বিজেপির(Bengal BJP) অন্দরে কার ক্ষমতা বেশি? রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর(Suvendu Adhikari) নাকি বঙ্গ বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের(Sukanta Majumdar)? এই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে প্রকাশ্যেই। আর সেই প্রশ্ন ওঠার নেপথ্যে রয়েছে শুভেন্দুর নিজের জেলা পূর্ব মেদিনীপুরে(Purba Midnapur) দুটি বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপির মণ্ডপ সভাপতি(Mondol President) পদের নিয়োগ সংক্রান্ত ঘোষণা এবং একইদিনে সেই সিদ্ধান্ত রদ করে দেওয়ার ঘটনাও। বস্তুত বঙ্গ বিজেপিতে প্রশ্ন আগেই উঠে গিয়েছিল যে কার ক্ষমতা বেশি, শুভেন্দু নাকি সুকান্তের? কিন্তু সেই প্রশ্ন ছিল চার দেওয়ার মধ্যে। পূর্ব মেদিনীপুরের ঘটনা কার্যত সেই প্রশ্নকে চার দেওয়ালের বাইরে বার করে নিয়ে চলে এল। প্রকাশ্যেই দেখা গেল শুভেন্দুর দাপটের সামনে কার্যত মাথা নীচু করে নিজের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হল সুকান্তকে। আর এই ঘটনায় নিদারুণ ক্ষুব্ধ বঙ্গ বিজেপির আদি নেতা থেকে শুরু করে দলে থাকা শুভেন্দু বিরোধীরা।
ঠিক কী হয়েছে? বঙ্গ বিজেপিতে বিশেষ করে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় শুভেন্দুর অনুগামী হিসাবেই পরিচিত ময়না ও হলদিয়ার বিধায়াক অশোক দিন্দা ও তাপসী মণ্ডল। সোমবার বঙ্গ বিজেপির পক্ষ থেকে সেই দুই বিধানসভা কেন্দ্রের দলীয় চারটি মণ্ডলে সভাপতি নিয়োগ করেন বঙ্গ বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। রীতিমত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানানো হয়, ময়না উত্তর মণ্ডলের সভাপতি করা হচ্ছে মাধব বেরাকে। ময়না দক্ষিণ মণ্ডলের সভাপতি হচ্ছেন সুশান্ত মিদ্যা। দেবাশিষ দাসগুপ্ত হচ্ছেন হলদিয়ায় নগর-৩ এর মণ্ডল সভাপতি এবং সুতাহাটা-১ মণ্ডলের সভাপতি হচ্ছেন সুরজিত মালাকার। কিন্তু এই নিয়োগ পছন্দ হয়নবি শুভেন্দু অনুগামী হিসাবে পরিচিত অশোক দিন্দা ও তাপসী মণ্ডলের। সেই কথা তাঁরা শুভেন্দুকেও জানিয়ে দেন। দেখা যায় মণ্ডল সভাপতি ঘোষণার ৩ ঘন্টার মধ্যেই সুকান্ত আবারও বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সেই নিয়োগ স্থগিত করে দেন। আর তাতেই পরিষ্কার হয়ে যায় যে শুভেন্দুর প্রবল চাপের কাছেই মাথা নত করে দিয়েছেন সুকান্ত। নাহলে নিজের ঘোষণা ও সই করা বিজ্ঞপ্তি তিনিই আবার নিজে আরও একটি পৃথক সই করা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে কেন বাতিল করে দেবেন!
স্বাভাবিক ভাবেই এই ঘটনাকে ঘিরে শুভেন্দু অধিকারীর গড়ে যেমন বিজেপির অস্বস্তি বাড়ল তেমনি, বঙ্গ বিজেপির অন্দরে প্রশ্ন উঠে গেল, কে বেশি ক্ষমতাবান – রাজ্য সভাপতি নাকি বিরোধী দলনেতা? যদিও সুকান্তের নিয়োগের পর থেকে যেমন দেখা গিয়েছে তেমনি বোঝাও গিয়েছে যে বঙ্গ বিজেপির সভাপতি পদে তাঁকে বসানো হলেও তাঁর নিজের ক্ষমতা বলতে কিছুই নেই। তিনি শুধু কয়েকজনের মাধ্যমে পরিচালিত হন মাত্র। সেই দলে যেমন অমিত মালব্য রয়েছেন, তেমনি রয়েছেন অমিতাভ চৌধুরী, আছেন শুভেন্দু অধিকারীও। সুকান্ত যে ঠুঁটো জগন্নাথ ভিন্ন আর কিছুই নয় সেটা এই মণ্ডল সভাপতি নিয়োগের ঘটনায় কার্যত প্রমাণ করে দিল। সন্দেহ নেই এই ঘটনা বিজেপির ভাবমূর্তির পক্ষে যতখানি লজ্জাদায়ক ঠিক ততখানিই ক্ষতিকর।