নিজস্ব প্রতিনিধি: কাঁথি। পূর্ব মেদিনীপুর(Purba Midnapur) জেলার অন্যতম মহকুমা শহর। একই সঙ্গে অধিকারীদের খাস তালুকও। উনিশের লোকসভা নির্বাচনেও কাঁথি লোকসভা কেন্দ্র(Contai Constituency) থেকে তৃণমূলের টিকিটেই জয়ী হয়েছিলেন শিশির অধিকারী। পরে একুশের বিধানসভা নির্বাচনের মাস ৬ আগে তাঁর ছেলে শুভেন্দু অধিকারী দল বদলে চলে যান বিজেপিতে। এর পর থেকেই অধিকারীদের সঙ্গে তৃণমূলের দূরত্ব বাড়তে থাকে। শিশির অধিকারী এখনও বিজেপিতে আনুষ্ঠানিক ভাবে যোগদান না করলেও, তাঁর দুই ছেলে দ্যিবেন্দু এবং সৌমেন্দু দুইজনই বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। সৌমেন্দ্যুকে এবার শিশিরের ছেড়ে দেওয়া কাঁথি লোকসভা কেন্দ্র থেকেই প্রার্থী করেছে বিজেপি(BJP)। সেই হিসাবে সৌমেন্দ্যুর(Soumendu Adhikari) লড়াই শুধু বিজেপির হয়ে লড়াই নয়, কাঁথির বুকে অধিকারীদের অধিকার রক্ষার লড়াইও। আর সেই লড়াইয়ে তাঁদের এক ইঞ্চি জমি ছেড়ে কথা বলতে চাইছে না রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস(TMC)। তাঁরা কোমর বাঁধছে বিজেপি ও অধিকারীদের ধাক্কা দিতে।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কাঁথি লোকসভা আসনে তৃণমূল জয়ী হয়েছিল ১ লক্ষ ১১ হাজারেরও বেশি ভোটে। ওই আসনে দ্বিতীয় হয়েছিল বিজেপি। তৃণমূলের ঝুলিতে গিয়েছিল ৭ লক্ষ ১১ হাজারের কিছু বেশি ভোট। সেখানে বিজেপি পেয়েছিল ৬ লক্ষের কিছু বেশি ভোট। বামেরা পেয়েছিল মাত্র ৭৬ হাজার ভোট এবং কংগ্রেস মাত্র ১৬ হাজার ভোট। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের তুলনায় ২০১৯ সালে কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপির ভোট বেড়েছিল প্রায় ৫ লক্ষ। এই ভোটটার প্রায় ৮০ শতাংশই এসেছিল বামেদের পকেট থেকে। অর্থাৎ বাম ভোট গিয়েছিল রামের ঝুলিতে। তর্কের খাতিরে যদি ধরে নেওয়া যায়, উনিশের প্রাপ্ত ৬ লক্ষ ভোটের সঙ্গে এবারে বিজেপি অধিকারীদের হাত ধরে বাড়তি ভোটও কিছু পাবে তাহলে সংখ্যাটা ঠিক কত হতে পারে? ৭ লক্ষ নাকি তারও বেশি। তৃণমূল নেতাদের দাবি, বামেরা আপ্রাণ ভাবে চেষ্টা করবেন কাঁথিতে বিজেপিকে জেতাতে। তাই তাঁরাও লোমর বাঁধছেন, বাম-বিজেপির অঘোষিত জোটের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। যদিও সেই লড়াই খুব একটা সহজ নয়।
একুশের বিধানসভা নির্বাচনে কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে থাকা ৭টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে ৪টিতেই জয়ী হয়েছিল বিজেপি। সেই ৪ কেন্দ্র হল কাঁথি উত্তর, কাঁথি দক্ষিণ, ভগবানপুর ও খেজুরি। তৃণমূলের দখলে গিয়েছিল রামনগর, চন্ডীপুর ও পটাশপুর। সেই দিক থেকে বিধানসভার আসন প্রাপ্তির সংখ্যা ও ভোট প্রাপ্তির সংখ্যা দুই দিক থেকেই এগিয়ে থাকছে বিজেপি। কিন্তু তাতে দমতে রাজী নয় তৃণমূল। কেন? এক তো একুশের ভোটের পরে বাংলার রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অনেক বদল এসেছে। একুশের ভোট যুদ্ধের সময় বাংলার মাটিতে বিজেপির যে দাপট ছিল তা এখন আর নেই। গত বছরের পঞ্চায়েত নির্বাচনে শুধুমাত্র কাঁথি-১ ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতিতে বিজেপির প্রতিনিধিরা গরিষ্ঠতা অর্জন করেছিল। কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে থাকা বাকি সব পঞ্চায়েত সমিতিতে তৃণমূলের প্রার্থীরাই গরিষ্ঠতা অর্জন করেছিলেন। এখানে জয় বলতে সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিতদের কথাই বলা হচ্ছে। পঞ্চায়েত সমিতির স্থায়ী কমিটি দখলের হিসাবে বলা হচ্ছে না। আবার একুশের ভোটের পরে পরে হয়া যাওয়া পুরনির্বাচনেও দেখা গিয়েছে কাঁথি পুরসভায় ঘাসফুলের জয়জয়কার। আর তাই তৃণমূল নেতাদের দাবি, জেলা পরিষদের সভাধিপতি তথা কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী উত্তম বারিকই(Uttam Barik) সব হিসাব উল্টে জয়ী হবেন।