কৌশিক দে সরকার: রাজনীতির উঠোনে অতি ছোট ঘটনাও অনেক বড় তাৎপর্য বহণ করে আনে। কোথাকার জল কোথায় গড়াতে চলেছে সেটা তখন অনেকেই নিজের মতো করে মেপে নিতে চান বা মেপে নেন। রাজ্য বিধানসভা ভবনে মুখ্যমন্ত্রীর ডাকে সাড়া দিয়ে রাজ্যের বিরোধী দলনেতার আগমন, শাসক দলের নম্বর টু’কে বিরোধী দলনেতার সাংসদ ভাইয়ের চায়ের নিমন্ত্রণ, সেই সাংসদের স্ত্রীর ভোট যাতে শাসকের শিবিরে আসে তার জন্য শাসকদলের নেতার কর্মসূচি ঘোষণা এইসবই খুব সাধারণ ঘটনা বলে মেনে নিতে চাইছেন না রাজ্যের আমজনতার বড় অংশই। কেউ একে প্রত্যাবর্তনের পূর্ববর্তী জমি তৈরির কৌশল হিসাবে দেখছেন, আবার কেউ বা দেখছেন কেন্দ্রের শাসক দলের সঙ্গে রাজ্যের শাসক দলের ‘সেটিং’খিসাবে। আর এই আবহেই সামনে এসেছে, বছর শেষের লগ্নে উদ্বোধন হতে পারে কলকাতার(Kolkata) দু-দুটি মেট্রো প্রকল্পের(Metro Projects)। আর এখানেই কৌতুহল তৈরি হয়েছে, এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রেলমন্ত্রক থেকে কী বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে(Mamata Banerjee) আমন্ত্রণ জানানো হবে নাকি তাঁকে ব্রাত্য রেখেই প্রকল্পের উদ্বোধন করা হবে?
আরও পড়ুন বসবাস নিউটাউনে, ভোটার গ্রাম পঞ্চায়েতে! ক্ষোভ চরমে
কলকাতার বুকে নর্থ সাউথ মেট্রোর দমদম থেকে টালিগঞ্জ অংশটুকু বাদ দিয়ে শহরের বাকি সব মেট্রো রেল প্রকল্পের ঘোষক ছিলেন বাংলার অগ্নিকন্যা তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তা সে ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রো রেল হোক কী টালিগঞ্জ – নিউ গড়িয়া মেট্রো প্রকল্পের সম্প্রসারণ হোক না কেন। এমনকি জোকা – বিবাদি বাগ, নিউ গড়িয়া – এয়ারপোর্ট, বারাসত – বিমানবন্দর, দমদম – নোয়াপাড়া – দক্ষিণেশ্বর, নোয়াপাড়া – বিমানবন্দর, এই সব প্রকল্প মমতা কেন্দ্রের রেলমন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে ঘোষণা করেছিলেন। তিনি রেলমন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে এই সব প্রকল্পের কিছু কাজ শুরুও হয়েছিল। পরে সেই কাজ আরও এগিয়ে নিয়ে যায় ইউপিএ সরকার ও মোদি সরকার(Modi Government)। কিন্তু মোদি জমানায় দেখা গিয়েছে, কলকাতার বুকে মমতার মস্তিষপ্রসূত মেট্রো প্রকল্পের উদ্বোধনে মমতাকেই ব্রাত্য রেখেছিল রেলমন্ত্রক। তাঁকে যথাযথ ভাবে আমন্ত্রণ না জানানোর অভিযোগ বার বার উঠেছে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে। তাতে তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপির সম্পর্ক যে খারাপের দিকেই গিয়েছে তাই নয়, কেন্দ্র রাজ্য সম্পর্কও খারাপ হয়েছে।
আরও পড়ুন মমতার বিদেশ সফরে আর বাধা দেবে না মোদি সরকার
বাংলার মেয়েকে ব্রাত্য রেখে তাঁরই ঘোষিত ও মস্তিষ্কপ্রসূত প্রকল্পের উদ্বোধন কিন্তু ভাল ভাবে মেনে নেননি কলকাতা ও শহরতলির বাসিন্দারা। মোদি সরকারের মাথাদের ধারনা ছিল মমতাকে ব্রাত্য রেখে এই সব প্রকল্পের উদ্বোধন করলে তা বিজেপিকে একুশের বিধানসভা নির্বাচনে স্থানীয় পুরসভার নির্বাচনে ডিভিডেন্ড এনে দেবে। হয়েছে কিন্তু ঠিক তার উল্টো। কলকাতা তো বটেই, তার আশেপাশের কোনও এলাকাতেই বিজেপি ১টিও আসন জিততে পারেনি। এমনকি পুরসভা নির্বাচনেও বিজেপির পায়ের তলার মাটি সরে যেতে দেখা গিয়েছে। এখন শোনা যাচ্ছে চলতি বছরের শেষ দিকেই জোকা – বিবাদি বাগ এবং নিউ গড়িয়া – বিমানবন্দর মেট্রো প্রক্লপের জোকা থেকে তারাতলা ও নিউ গড়িয়া থেকে রুবি পর্যন্ত অংশের উদ্বোধন হবে। দুটি প্রকল্পেরই ওই অংশের কাজ শেষ হয়ে যাওয়ায় সেখানে ট্রেন ছোটাতে চাইছে মেট্রো কর্তৃপক্ষ। সূত্রে জানা গিয়েছে দুটি প্রকল্পের উদ্বোধনই হতে পারে একই দিনে। হয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি(Narendra Modi) তা উদ্বোধন করবেন দিল্লি থেকে ভার্চুয়াল ভাবে নাহলে রেলমন্ত্রী নিজে কলকাতায় এসে তা উদ্বোধন করবেন।
আরও পড়ুন অভিষেকের বাবার করা মামলায় সমন শুভেন্দুকে
আর এখানেই কৌতুহল তৈরি হয়েছে এবারেও কী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ব্রাত্য রেখেই তাঁর ঘোষিত ও মস্তিষ্প্রসূত দুই মেট্রো প্রকল্পের উদ্বোধন করবে মোদি সরকার? নাকি যে সুসম্পর্কের বাতাবরণ এখন তৈরি হয়েছে তাকেই এগিয়ে নিয়ে গিয়ে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে যথাযথ ভাবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হবে? কী হয় সেটা দেখতেই কিন্তু উৎসুক হয়ে অপেক্ষা করছে আম বাঙালি। মোদি সরকার ও বিজেপি মমতাকে নিয়ে কী বার্তা দেয় সেটাও তাঁরা দেখতে চান। বার বার বাংলার বুকে বাংলার মেয়ের অপমান কিন্তু তাঁরা মুখ বুজে মেনে নেবেন না।