নিজস্ব প্রতিনিধি, মালদা: শিক্ষাক্ষেত্রে একাধিক ডিগ্রি রয়েছে। বর্তমানে এডুকেশন ডাটা নিয়ে পিএইচডি করার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন মালদা শহরের ছাত্রী ব্রততী পণ্ডিত। কিন্তু ছোটবেলা থেকে মাটির কাজ করাই তাঁর নেশা। প্রতিবছরই গড়ে তোলেন দুর্গা প্রতিমা। এবারও তার অন্যথা হচ্ছে না। তবে আগের তুলনায় বর্তমানে বাজার খুব মন্দা বলেই দাবি করলেন হাটখোলা ঘোষপাড়া এলাকার বাসিন্দা ব্রততী।
বাবা সুকুমার পণ্ডিত মালদা শহরের একজন খ্যাতনামা মৃৎশিল্পী। তাঁর কাছেই মাটির কাজে হাতেখড়ি ব্রততীর। ছোট থেকেই পুঁথিগত বিদ্যার পাশাপাশি মৃৎশিল্পেও ঝোঁক ছিল পাল্লা দিয়ে। ২০১২ সালে মাধ্যমিকে স্টার মার্কস নিয়ে পাশ করেছেন। ২০১৪ সালে উচ্চমাধ্যমিকেও ছিল স্টার মার্কস। তারপর ২০১৭ সালে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এডুকেশন অনার্স নিয়ে পাশ করেন। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এডুকেশনে এমএ করেন। ২০২০ সালে নিট পরীক্ষায় সাফল্য পেয়েছিলেন। একই বছর ওয়েস্ট বেঙ্গল কলেজ সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষাতেও ভাল ফল করেছিলেন। তা সত্ত্বেও ২০২১ সালে বিএইড কোর্স সম্পন্ন করেন। পাশাপাশি কম্পিউটার ডিপ্লোমায় টেকনোলজি বিষয়ক বিভাগে রাজ্যের মধ্যে ভাল ফলাফল করেন ব্রততী। বর্তমানে এডুকেশন ডাটার উপর তিনি পিএইচডি করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
শিক্ষাক্ষেত্রে যতই সাফল্য আসুক না কেন, বংশের ঐতিহ্য ধরে রাখতে পণ্ডিত পরিবারের একমাত্র মেয়ে ব্রততী এখন তাঁর বাবার সঙ্গেই ঠাকুর তৈরি করে। কাঠামো তৈরি করা হোক বা মাটির প্রলেপ থেকে রং করা, সবক্ষেত্রেই পারদর্শী ব্রততী। আর তাই মেয়েকে নিয়ে রীতিমতো গর্বিত পরিবার-প্রতিবেশিরা। ব্রততী পণ্ডিত বলেন, ‘বাবার থেকেই আমি প্রতিমা তৈরির কাজ শিখেছি। শিক্ষাক্ষেত্রে এখন পিএইচডি করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। কিন্তু বংশের প্রাচীন এই ঐতিহ্যকে কীভাবে ভুলে যাব?’
বর্তমানে মাটির কাজের গুরুত্ব হারিয়ে গিয়েছে সাধারণ মানুষের কাছে। গরিব, অশিক্ষিত মৃৎশিল্পীদের সম্মানও দিন দিন নাকি হারিয়ে যাচ্ছে। আসলে মানুষ এখন শিল্পের কদর করতে ভুলে যাচ্ছে। এমনটাই দাবি করে ব্রততী বলেন, ‘এমন এক সময়ে যদি আমরা এগিয়ে না আসি, তাহলে সাধারণ মানুষ জানবে কীভাবে মৃৎশিল্প আসলে কী?’ কিন্তু ঝুলিতে এত ডিগ্রি রয়েছে, যে কোনও সময়ে মনমতো চাকরি পেয়েও যাবেন তিনি। তখন কি আর প্রতিমা গড়বেন? ব্রততীর উত্তর, ‘প্রয়োজনে ছুটি নিয়ে নেব, কিন্তু প্রতিমা প্রতিবছরই গড়ে তুলব। এটাই আমার ভালবাসা।’