নিজস্ব প্রতিনিধি: তাঁকে নিয়ে গুঞ্জন শুধু দলের অন্দরেই নয়। গুঞ্জন ক্রমশ তীব্র হচ্ছে রাজ্য রাজনীতিতে। গুঞ্জন একটাই, তিনি কবে বিজেপি(BJP) ছেড়ে তৃণমূলে(TMC) যাচ্ছেন তা নিয়ে। এর আগেই এই প্রশ্ন উঠেছিল রাজ্য রাজনীতিতে। মাঝে কিছুটা সেটা থিতিয়েছিল। কিন্তু সাম্প্রতিককালে আবারও সেই জল্পনা গা ঝাড়া দিয়ে ডানা মেলেছে বাংলার রাজনীতিতে। আর তার জেরেই দলের সাংগঠনিক বৈঠকে যোগ দিতে গিয়ে এদিন প্রশ্নের মুখে পড়লেন তিনি। প্রশ্ন ধেয়ে এল, ‘আপনি দলে থাকছেন তো? আপনার নামও নাকি যাওয়ার তালিকায় রয়েছে?’ আর এই সব প্রশ্নের জেরে মেজাজ হারালেন তিনি, মানে হুগলির বিজেপি সাংসদ তথা বিজেপির সাধারণ সম্পাদিকা লকেট চট্টোপাধ্যায়(Locket Chatterjee)। শুক্রবার তিনি বর্ধমানে(Burdhwan) যান দলের সাংগঠনিক বৈঠকে যোগ দিতে। কিন্তু সেখানে গিয়ে যে অভিজ্ঞতা হল তাঁর তা কার্যত বলে দিচ্ছে দলের অন্দরেই বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছেন সাংসদ লকেট।
সাম্প্রতিককালে ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিং(Arjun Singh) প্রত্যাবর্তন করেছেন তৃণমূলে। আর তারপর থেকেই বাংলার রাজনীতিতে জোর জল্পনা ছড়িয়েছে অন্তত ৭-৮জন বিজেপি সাংসদ খুব শীঘ্রই বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিতে চলেছেন। আর সেই সব সাংসদদের মধ্যে রয়েছে লকেটের নামও। কার্যত রাজ্যজুড়েই জোর জল্পনা ছড়িয়েছে যে খুব শীঘ্রই তিনিও অর্জুনের পথই অনুসরণ করতে চলেছেন। এমনকি প্রকাশ্যে অর্জুন সিং কারোর নাম না নিয়েই জানিয়ে দিয়েছেন, আরও ৫-৬জন সাংসদ ফুল বদল করতে অপেক্ষা করছেন। খুব শীঘ্রই তাঁদেরও ফুলবদল ঘটবে। নানা সংবাদমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়াতেও এই নিয়ে রীতিমত লেখালেখি হচ্ছে। স্বাভাবিক ভাবেই বিষয়টি নিয়ে যে বিজেপির অন্দরেও বেশ উদ্বেগ ছড়িয়েছে সেটা এদিন বেশ বোঝা গেল লকেটের ঘটনায়। এদিনের বৈঠকে লকেটের দিকে একের পর এক প্রশ্ন ধেয়ে যাওয়ায় একসময় মেজাজ হারান লকেট। বলে ওঠেন, ‘আপনারা চুপ করুন। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেই হবে না। আমি যাচ্ছি, এরকম কোনও ইঙ্গিত আপনারা পেয়েছেন নাকি? আমাদের কর্মীদের মনোবল দুর্বল করার জন্য বিভিন্ন ধরনের কথা বলা হচ্ছে। ২০১৯সালে যাঁরা লোকসভা নির্বাচনে জিতিয়েছিলেন, তাঁরা কেউ দল ছেড়ে যাননি। যাঁরা নিজেদের আখের গোছাতে পার্টিতে এসেছেন, তাঁরা চলে যেতে পারেন। তাঁরা চলে গেলে দলটা ফিল্টার হবে।’
যদিও লকেটের এহেন উত্তরে কেউই খুব একটা সন্তুষ্ট হতে পারেননি। এদিন বর্ধমানে বিজেপির সাংগঠনিক বৈঠকে দলের যে সব নেতা ও কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন তাঁরা লকেটের কথা শোনার পরেও জানিয়েছেন যে, ‘ওঁকে নিয়ে গুঞ্জন ছড়াচ্ছে। সেই কারণেই তাঁর অবস্থান জানতে চাওয়া হয়েছিল। তাতে তিনি মেজাজ হারিয়ে ফেলেন। বৈঠকে নেতা ও কর্মীদের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন। যদিও কড়া মেজাজেই সব প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। কিন্তু তারপরেও অনেকেই তাঁকে নিয়ে নিশ্চিত হতে পারেননি। অর্জুন সিংও অনেক বড় বড় কথা বলেছিলেন। কিন্তু তারপরেও কী হয়েছে, তা আমরা সবাই দেখেছি। উনি যে সেই ঘটনা ঘটাবেন না তার গ্যারেন্টি কোথায়? বরঞ্চ সবাই মনে করছেন উনিও অর্জুনের পথের পথিক হতে চলেছেন খুব শীঘ্রই।’ ঘটনাচক্রে এদিনের বৈঠকে দলের অনেক আদি নেতাই অংশগ্রহণ করেননি। এদিন দলের বুথ কমিটি শক্তিশালী করার জন্য বৈঠক করতে আসেন লকেট। জেলা নেতৃত্বের পাশাপাশি মণ্ডল কমিটির সভাপতিরা বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন। এছাড়া বিভিন্ন মোর্চার সভাপতিরাও উপস্থিত ছিলেন। তবে জেলা কমিটিতে থাকা পুরনো কয়েকজন নেতাকে বৈঠকে দেখা যায়নি। তাঁদেরই মধ্যে একজন বর্ধমান সাংগঠনিক জেলার বিজেপির সহ সভাপতি শ্যামল রায়। বৈঠক চলাকালীন সময়ে তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, ‘জেলা অফিসে মিথ্যার প্রবচন চলছে। সংগঠন আরও দুর্বল করা হচ্ছে। লকেটদি’কে সাধারণ সম্পাদিকা পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হলে উনি কী করবেন?’ সব মিলিয়ে বঙ্গ বিজেপির অন্দরে লকেট রহস্য বিদ্যমান চূড়ান্ত পর্যায়ে।