-273ºc,
Saturday, 3rd June, 2023 3:05 am
রূপেন্দু দাস
লিখতে গিয়ে জনপ্রিয় বাংলা ছবি ‘ধন্যি মেয়ের’ সেই দৃশ্যের কথা মনে পড়ছে। কয়েকজন যুবক। তাঁদের হাতে পোস্টার। সেখানে বাংলা ভাষার প্রতি সমর্থন জানিয়ে স্লোগান। আর গুনগুন করে গাইছে- ‘মেরে সামনে ওয়ালে খিড়কি মে, এক চাঁদ কা টুকরা রহেতা হ্যায়’।
বাংলা ভাষার প্রতি আমরা, অর্থাৎ বাঙালিরা কতটা যত্নশীল, আদৌ এই ভাষার প্রতি আমাদের ভালোবাসা আছে কি না, ২১-য়ের প্রাকলগ্নে সেই প্রশ্নটা ভীষণভাবে নাড়া দিচ্ছে। তথাকথিত বাঙালি বোধহয় একমাত্র জাতি, যাঁরা নিজেদের ভাষাকে ততটা ভালোবাসে না। বাঙালি খেতে ভালোবাসে, গান শুনতে ভালোবাসে, ঘুরতে ভালোবাসে। বাঙালির ভালোবাসার অভাব নেই। শুধু একটি মাত্র ক্ষেত্র ছাড়া।
অস্বীকার করার জায়গা নেই যে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হতে হলে ইংরেজি ভাষার ওপর দখল থাকা প্রয়োজন। উচ্চশিক্ষার আকাঙ্ক্ষা কি শুধুমাত্র একা বাঙালির রয়েছে? অন্যভাষাভাষিদেরও তো রয়েছে। কিন্তু তাঁরা কি তাদের মাতৃভাষাকে এতটা অবহেলা করে, যতটা করে বাঙালি? বোধহয় নয়। অথচ আমাদের পাশেই রয়েছে প্রতিবেশী বাংলাদেশ। বাংলা ভাষাকে তাঁরা কতটা ভালোবাসে তা আর নতুন করে বলার প্রয়োজন হয় না।
প্রতিদিন রাস্তায় চলতে ফিরতে কানে আসে একটি কথা – আমার ছেলে-মেয়েরা বাংলা ভালো বলতে পারে না। কোথাও যেন একটা অহমিকা প্রকাশ পাচ্ছে। এই আত্মম্ভরিতা কি শোভাবর্ধন করে? অথচ বাঙলা ভাষা আর বাঙালির দৌলতেই তো ভারত জগৎসভায় শ্রেষ্ঠ আসন দখল করেছিল। প্রথম নোবেল বাঙালির ঘরে এনে দিয়েছিলেন এক বাঙালি। অর্থনীতিতে প্রথম নোবেল সেই বাঙালির দৌলতেই। বিবেকানন্দ আন্তর্রাজাতিক ধর্ম সম্মেলনে ইংরেজিতে ভাষণ দিয়েছিলেন। কিন্তু বাংলা ভাষায় তার দখল, বাংলায় তাঁর লেখা প্রবন্ধ পড়লে বোঝা যায় এই ভাষার প্রতি তাঁর প্রগাঢ় প্রেম। শুধু তিনি কেন, বিজ্ঞানসাধক জগদীশ চন্দ্র বসুর কথাই বা বাদ দেব কী করে। মেঘনাদ সাহা। তবুও বাংলা ভাষার প্রতি অসম্মান।
রবীন্দ্রনাথের কথা দিয়ে শেষ করতে হয় যারে তুমি নীচে ফেল, সে তোমারে বাঁধিবে যে নীচে/ পশ্চাতে রেখেছ যারে সে তোমারে পশ্চাতে টানিছে, অজ্ঞানের অন্ধকারে/ আড়ালে ঢাকিছ যারে/ তোমার মঙ্গলঢাকি গড়িছে সে ব্যবধান